গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বিএনপির এক পক্ষের সভা পণ্ড করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে। এসময় সভাস্থলের চেয়ার টেবিলও নিয়ে যান তারা।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট বাজারের উত্তর পাশে ঘটনাটি ঘটে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে সভা আহ্বান করা হয়। সভায় আনোয়ারের পক্ষেরর নেতাকর্মীরা আসার আগেই উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ গাইনের নেতৃত্বে একটি দল সভাস্থলে ঢুকে চেয়ার টেবিল নিয়ে যায়। পরে আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও তার সমর্থকেরা সভাস্থলে না গিয়ে ভাঙ্গারহাট বাজার থেকে আবার উপজেলা সদরে ফিরে যান।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ নেই: অনিন্দ্য ইসলাম

নাটোরে মহাসড়কে বিক্ষোভ, বিএনপি নেতার কুশপুতুল দাহ

কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, “দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে আমরা একটি সভার আহ্বান করি। এই সভার খবর পেয়ে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ গাইনের নেতৃত্বে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি আমাদের সভাস্থলের চেয়ার ও টেবিল নিয়ে যায়। সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের প্রবীণ নেতা কমল বৈদ্য এই সভার আয়োজন করেছিলেন। আমরা সংঘর্ষ এড়াতে সভা না করে ফিরে আসি।”

উপজেলা বিএনপি নেতা কমল বৈদ্য বলেন, “আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে ভাঙ্গারহাট বাজারের উত্তর পাশে প্রমথ বাড়ৈর বাগানবাড়িতে প্রবীণ নেতাদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করি। সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন বিএনপির কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী আমাদের সভা পণ্ড করে দেয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।”

সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ গাইন বলেন, “কিছুদিন আগে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির বাইরে এখানে কোনো সভা করতে হলে আমাদের সঙ্গে লিয়াজো করে করা উচিত ছিল। আজকের সভার ব্যাপারে আমাদের অবগত করা হয়নি। আমরা মনে করি তারা দুষ্কৃতকারী। তাই তাদের সভা করতে দেওয়া হয়নি।”

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মহিউদ্দিন বলেন, “কেউ যদি আওয়ামী লীগের দালাল হয়ে (আনোয়ার হোসেন হাওলাদার) বিএনপির মিটিং করতে চায় তাহলে নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। সেই মিটিং তো হতে পারে না। কোটালীপাড়ায় যারা বিএনপি করে তাদের মাধ্যমেই মিটিং হতে হবে। সেটা না হলে কেউ মেনে নেবে না।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র স ন ব এনপ র ন ত কর ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সংঘর্ষ অব্যাহত, সীমান্ত থেকে পালিয়েছে ৫ লাখ মানুষ

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ টানা তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, সীমান্তের ওপার থেকে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার ফলে পাঁচ লাখের বেশি বেসামরিক মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। খবর আল-জাজিরার।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের কর্মকর্তারা একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরু করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া আন্তসীমান্ত সংঘর্ষে   এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩ জন সেনা ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। সীমান্তের উভয় পাশের ৫ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

মিস ইউনিভার্সের ‘ওয়ান্টেড’ মালিকের উত্থানের গল্প

৩০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি

থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুরসান্ত কংসিরি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাতটি প্রদেশে ৪ লাখেরও বেশি মানুষকে লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য আসন্ন হুমকি হিসাবে যা মূল্যায়ন করেছি, তার কারণে বেসামরিক লোকদের বিপুল সংখ্যক সরিয়ে নিতে হয়েছে।”

থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বুধবার সকালে কম্বোডিয়া থেকে ছোড়া রকেট সুরিনের ফানম ডং রাক হাসপাতালের কাছে এসে পড়ে, যার ফলে রোগী ও হাসপাতালের কর্মীরা একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা বলেন, পাঁচটি প্রদেশে ১ লাখ ১ হাজার ২২৯ জনকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কম্বোডিয়ার সংবাদমাধ্যম কম্বোডিয়ানেসের খবর অনুসারে, থাইল্যান্ডের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো দেশের দুটি এলাকায় হামলা করেছে। সীমান্তবর্তী আরো অন্তত ৩টি এলাকায় থাইল্যান্ডের গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ম্যাটিচনের খবর অনুসারে, বুধবার সকালে সীমান্তে ‘একটি কম্বোডিয়ান সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলার করার জন্য দেশটির সেনাবাহিনী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।

সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে থাইল্যান্ডের দ্য নেশন সংবাদমাধ্যমের মতে, বুধবার ভোরে থাইল্যান্ডের ৪টি প্রদেশের ১২টি ফ্রন্ট-লাইন এলাকা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছে কম্বোডিয়া। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশ থেকে রিপোর্ট করা আল-জাজিরার সংবাদিক রব ম্যাকব্রাইড বলেন, থাই সেনাবাহিনী মঙ্গলবার রাতে বলেছে, কম্বোডিয়া সীমান্তবর্তী প্রায় সব প্রদেশেই লড়াই চলছে।

ম্যাকব্রাইড বলেন, কেবল সুরিন প্রদেশেই পাঁচটি ভিন্ন স্থানে গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে এবং এখানকার বেশিরভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, “সীমান্তের উভয় পাশেই কয়েক লাখ মানুষ অতীতের মতো আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং লড়াই অব্যাহত রয়েছে।”

উত্তর-পশ্চিম কম্বোডিয়ার ওডার মিঞ্চে থেকে রিপোর্ট করে আল-জাজিরার সাংবাদিক বার্নাবি লো বলেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচটি সীমান্ত প্রদেশে লড়াই ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রায় ১০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের আবাসস্থলের একটি শিবিরে অনেকে প্লাস্টিকের অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিচ্ছে, আবার অন্যদের কাছে রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয় তৈরির উপকরণও নেই।

লো বলেন, “কিন্তু এখানে আরো বড় ‍উদ্বেগ হলো, সহিংসতা আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই মুহূর্তে, মানুষজন জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে, কারণ যেখানে লড়াই চলছে সেখান থেকে আমরা কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকা সত্ত্বেও বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তাই মানুষজন জিনিসপত্র গুছিয়ে অন্য একটি আশ্রয় শিবিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।” 

লো আরো বলেন, কম্বোডিয়ার সিনেট প্রেসিডেন্ট ও সাবেক নেতা হুন সেন থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে এই সংঘাত দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এর আগে, গত জুলাই মাসে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সীমান্তযুদ্ধ হয়েছিল। এতে বহু মানুষ প্রাণ হারায় এবং তিন লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে ২৭ জুলাই প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করান। 

ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে বলেন, তিনি নতুন করে শুরু হওয়া লড়াই বন্ধ করার জন্য সরাসরি ফোন করবেন। 

ট্রাম্প মার্কিন রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় একটি সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় বলেন, “আমাকে একটি ফোন কল করতে হবে। আর কে বলবে, আমি একটি ফোন কল করব এবং দুটি অত্যন্ত শক্তিশালী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধ বন্ধ থামাব।”

তবে, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেটকিও আল জাজিরাকে বলেন, সীমান্ত সংঘাত বন্ধে তিনি আলোচনার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। তিনি আরো দাবি করেন, ব্যাংকক সংঘর্ষ শুরু করেনি।

মঙ্গলবার কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে যে, থাইল্যান্ড নির্বিচারে বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে, ফলে তাদের সেনাদের প্রতিরোধ করা ছাড়া উপায় ছিল না। ব্যাংকক অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতির ইঙ্গিত হিসেবে, কম্বোডিয়া বুধবার ঘোষণা করেছে যে, ‘গুরুতর উদ্বেগের’ কারণে তারা থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় গেমস থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ