গণহত্যার সত্য উন্মোচনে ফরেনসিক বিজ্ঞানের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করছেন নিগার
Published: 13th, December 2025 GMT
স্নাতকে আমার থিসিসের বিষয় ছিল ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা’। ২০২২ সালে এ কাজের জন্য যখন জেনোসাইড বা গণহত্যা নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, তখন বারবার মনে হচ্ছিল আমরা নিজেরাও তো ভুক্তভোগী জাতি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা নিয়ে দেশে একাডেমিক কাজ এখনো অনেক সীমিত। আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা এই গণহত্যার স্বীকৃতি পাইনি।
তখন জানার চেষ্টা করলাম দেশে কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন চর্চা হচ্ছে, কোন প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে গবেষণা করছে। সেই খোঁজ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের রিসার্চ সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিসের সন্ধান পাই। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে স্নাতক করে তিন বছর আগে এই সেন্টারে যুক্ত হই। এরপর বিভিন্ন দেশের গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করছি।
শুরুতে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার গণহত্যা নিয়ে কাজ করেছি। এখন গবেষণার পরিসর আরও বিস্তৃত হয়েছে। আমি রুয়ান্ডা ও বাংলাদেশের গণহত্যার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশের গণহত্যায় ফরেনসিক অ্যানথ্রোপলজি (নৃবিজ্ঞান) ও ফরেনসিক আর্কিওলজি (প্রত্নতত্ত্ব) কীভাবে প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছি। এগুলো ফরেনসিক বিজ্ঞানের বিষয়। ফরেনসিক বিজ্ঞান গণহত্যার সত্য উন্মোচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে হত্যার স্থান শনাক্তকরণ, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া দেহাবশেষ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়।
বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে ফরেনসিক বিজ্ঞানের কাজ খুবই সীমিত। স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পার করে এসে আমরা কি এখনো এ বিষয়ে কাজ করতে পারি? কীভাবে করতে পারি? এটাই আমার বর্তমান গবেষণার বিষয়।
আমার গবেষণার কাজে বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছি। সম্প্রতি রুয়ান্ডা ঘুরে এসেছি। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ১০০ দিনের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছিল রুয়ান্ডার প্রায় আট লাখ নাগরিক। এই গণহত্যা নিয়ে দেশটিতে অনেক কাজ হয়েছে। আমি গিয়েছিলাম গুয়াতেমালার গ্লোবাল ফরেনসিক একাডেমির কর্মশালায় নির্বাচিত হয়ে। এতে ১৫টি দেশ থেকে ২৯ জন গবেষক অংশ নেন। কর্মশালাটি ছিল সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক-ফরেনসিক আর্কিওলজি, ফরেনসিক অ্যানথ্রোপলজি, গণহত্যাস্থলে খনন, চিহ্নিতকরণ। এসব প্রক্রিয়া আমি সেখানে হাতে-কলমে শিখেছি।
রুয়ান্ডা সফরে আমাকে সবচেয়ে যে বিষয়টি স্পর্শ করেছে, তা হচ্ছে গণহত্যার সুশৃঙ্খল ডকুমেন্টেশন। তাদের স্মৃতিস্তম্ভ, জাদুঘর, বধ্যভূমি অত্যন্ত যত্নে সংরক্ষিত। ছোটবেলা থেকেই রুয়ান্ডার মানুষেরা এসব জায়গা পরিদর্শন করে এবং নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পায়।
তাবাসসুম নিগার পরিবার থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সমাজ-মানবতার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ শ র গণহত য গণহত য র স
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ইউরোভিশনের ট্রফি ফেরত দিচ্ছেন সুইস সংগীতশিল্পী নেমো
আন্তর্জাতিক গানের প্রতিযোগিতা ইউরোভিশনে ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সুইজারল্যান্ডের সংগীতশিল্পী নেমো নিজের পুরস্কার ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল অনবরত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরও দেশটিকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার নেমো পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
নেমো তাঁর গাওয়া ‘দ্য কোড’ গানটির জন্য ২০২৪ সালে ইউরোভিশন পুরস্কার জিতেছেন। তাঁর মতে, ইউরোভিশন প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রতিযোগিতার আদর্শিক জায়গার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর সে আদর্শিক জায়গাটি হলো সব মানুষের অন্তর্ভুক্তি ও সবার মর্যাদা বজায় রাখা।
ইউরোভিশনের আয়োজক সংস্থা ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ)–এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী পদক্ষেপের সর্বশেষ সংযোজন এটি। গত সপ্তাহে ইবিইউ ইসরায়েলকে আগামী বছর অস্ট্রিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার পর পাঁচটি দেশ প্রতিযোগিতা থেকে সরে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে নেমো বলেন, ‘ইউরোভিশন বলে যে তারা ঐক্য, অন্তর্ভুক্তি ও সব মানুষের মর্যাদার পক্ষে দাঁড়ায়। এই মূল্যবোধগুলোর কারণেই এ প্রতিযোগিতাটি আমার কাছে এত অর্থবহ। কিন্তু যখন কিনা জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে (অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চল, পূর্ব জেরুজালেম ও ইসরায়েল বিষয়ক তদন্ত) গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তখন বোঝা যায়, ওই আদর্শগুলোর সঙ্গে ইবিইউর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো স্পষ্টত সাংঘর্ষিক।’
আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলের জাতিহত্যামূলক যুদ্ধের প্রতিবাদে ইউরোপজুড়ে লাখো মানুষের বিক্ষোভ৩০ নভেম্বর ২০২৫ইসরায়েল বারবার গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে হামাসের নেতৃত্বে হামলার পর নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার তাদের রয়েছে। ওই হামলার কারণেই এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছে।
গত বুধবার আইসল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম আরইউভির খবরে বলা হয়েছে, দেশটি ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না। গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। এর আগে স্পেন, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়াও একই ধরনের ঘোষণা দেয়।
আরও পড়ুনইসরায়েলিদের বাধায় নিজেদের জমিতে যেতে পারেন না ফিলিস্তিনিরা, বিপর্যয়ে জলপাইশিল্প০৪ ডিসেম্বর ২০২৫