গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী তিউনিসিয়ায় প্রথম নির্বাচন হয় ২০১১ সালে। নির্বাচনের পরে, বেশ অস্থিতিশীল একটা সরকারের সময়, কয়েক মাসের ব্যবধানে চকরি বেলাইদ ও মোহামেদ ব্রাহিমি ‘মোটরসাইকেলে চড়ে আসা’ আততায়ীর গুলিতে গুপ্তহত্যার শিকার হন। আজ এটা স্বীকৃত যে, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে এই দুটি হত্যাকাণ্ড তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্রের যে স্বপ্ন ছিল, সেটি যে আজ প্রায় ধ্বংসের পথে, তার জন্য দায়ী।

টার্গেট শরিফ ওসমান হাদি হবেন কি না সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছিল না, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা যে ঘটবে, সেটার যৌক্তিক অনুমান করা যাচ্ছিল। এর প্রাথমিক কারণ, দেশে-বিদেশে থাকা কিছু শক্তি চায় না বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাক।

এটাও আমরা জানি, একটা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করা সম্ভব হয় যদি সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সততা এবং পেশাদারির সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে যায়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দক্ষতার স্বাক্ষর তো রাখতে পারেইনি, খুব সাধারণ পারফরম্যান্সও দেখাতে পারেনি। কিছুদিন আগে প্রথম আলোর মাধ্যমে পরিচালিত জনমত জরিপেও দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ওপরে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ অসন্তুষ্ট।

গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গতিপথ তিউনিসিয়ার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই মেলে। সে কারণেই আমাদের সুযোগ ছিল তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়ার। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা পারিনি সেটা।

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো হবে, এটা প্রত্যাশা আমরা করিনি। শেখ হাসিনার অপশাসনের ফলে প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত পুলিশ বাহিনী তার মনোবল ফিরে পেতে সংগ্রাম করেছে। কিন্তু এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পরও বলতে হবে, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, বিশেষ করে এমন একটা সময়ে যখন সেনাবাহিনীও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে আছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল, এমনটিও মনে হয়নি অনেক সময়।  

দীর্ঘকাল স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিক্রিয়ায় কোনো দেশে গণ-অভ্যুত্থান হলেই অভ্যুত্থানকারীরা সফল হবেনই এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক দেশে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান গড়ে ওঠার সময়টায় (আরব বসন্ত) অন্তত তিনটি দেশ (সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন) দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়ে।

আরও পড়ুনওসমান হাদিকে হামলা: গুলির লক্ষ্য একজন না, লক্ষ্য নির্বাচন?১৮ ঘণ্টা আগে

আর কর্তৃত্ববাদী শাসকের পতন ঘটানোর সাফল্য এসেছিল যে দেশগুলোতে (তিউনিসিয়া, মিসর) সেগুলো গেছে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। একটা স্বৈরাচারী সরকার তার ক্ষমতায় থাকাকে নিশ্চিত করার জন্য ভেঙে ফেলে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান, ফলে স্বৈরশাসকের অনুপস্থিতিতে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অর্থে ক্রিয়াশীল থাকে না।

এমন প্রেক্ষাপটে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর সবচেয়ে জরুরি কাজ অত্যন্ত কঠিন হলেও নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতকে খুব খারাপ পর্যায়ে নিয়ে না যাওয়া। বিশেষ করে নিজেদের মধ্যে মতাদর্শগত বিভেদ যতটা সম্ভব এড়ানো।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে চিন্তা, কর্মসূচি এবং মতাদর্শগত পার্থক্য থাকবেই এবং সেটা নিয়ে বিতর্ক তো বটেই ঝগড়াবিবাদও হতে পারে। কিন্তু দল এবং শক্তিগুলো পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি তৈরি করে।

আর গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী প্রায় ভেঙে পড়া রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমন প্রবণতা ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে, যা এমনকি গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১২ ডিসেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব যবস থ ত উন স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে: সালাহউদ্দিন

জুলাই অভ্যুত্থানের মুখ শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ডেকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে এক থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে দূরত্ব এবং পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য চলার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই আহ্বান এল।

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে গুলি করা হয় ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদি এখন আশঙ্কিজনক অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় যখন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন রাজনৈতিক নেতারা, তখন তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকে ডাকেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিরোধ সভায় সব রাজনৈতিক দলকে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানান।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, আগামীকাল এবং পরশুও শাহবাগ অথবা শহীদ মিনারে যে প্রতিরোধ সভা হবে। সেখানে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে, সেই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি তাতে অংশ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাস রুখতে হলে ঐক্য ধরে রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঐক্যটা দেখাতে চাই। ফ্যাসিবাদবিরোধী, সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্যটা দেখাতে চাই। এটাই হবে আমাদের শক্তি।’

আরও পড়ুনতফসিলের পরদিন ‘প্রার্থী’ গুলিবিদ্ধ১১ ঘণ্টা আগে

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা নাকচ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই জাতীয় ঘটনা, দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে যদি পতিত ফ্যাসিবাদ মনে করে, বাংলাদেশের নির্বাচন রুখতে পারবে—এটা ভুল ধারণা।’

ওসমান হাদির ওপর হামলার পর জাতীয় নির্বাচনে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

বিএনপি আরও বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা করছে কি না, জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এ জাতীয় যেকোনো রকমের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে সরকারের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব আছে, জনগণের সচেতনতাও জরুরি। সে জন্য আমরা বলেছি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যৌথ বাহিনী এবং সরকার, জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে যদি আমরা এগুলোকে মোকাবিলা করি, ইনশাআল্লাহ এ ধরনের ঘটনা আমরা বন্ধ করতে পারব।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় দেড় যুগের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরতে যাচ্ছেন। তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বিভিন্ন সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়।

আরও পড়ুনহাদির ওপর হামলার চরিত্র ভিন্ন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ৭ ঘণ্টা আগে

আজকের বৈঠকে তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এই বিষয়টা আজ এখানে আলোচনা হয়নি। অবশ্যই বিষয়টা আমাদের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা দলীয়ভাবেও চেষ্টা করব, সরকারকেও আহ্বান জানাব, যাতে ওনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।’

আরও পড়ুনদেশ অত্যন্ত সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে: তারেক রহমান২০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাগড়াছড়িতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ তিনজন গ্রেপ্তার
  • নির্বাচন ঘিরে গুপ্ত হামলা ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে শঙ্কা
  • আইনশৃঙ্খলার দৃশ্যমান উন্নতি ঘটাতেই হবে
  • সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত
  • ওসমান হাদির ওপর আঘাত মানে জুলাইয়ের ওপর আঘাত: নুরুল হক
  • ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে: সালাহউদ্দিন
  • রিয়ালের ৪ তারকা ফুটবলার নিষিদ্ধ
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া