পুষ্পস্তবকে ছেয়ে যাচ্ছে শহীদবেদি। ধর্ম-বর্ণ, রাজনৈতিক মতো কিংবা শ্রেণি-পেশার বিভেদ ভুলে সর্বস্তরের মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। আর নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে স্মরণ করছেন ভয়াল ও নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞের ঘটনা।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আজ বুধবার ভোর থেকেই রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। সকাল সাতটায় শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসায় সর্বস্তরের মানুষ স্মরণ করেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।

এর আগে সকাল সাতটার পর রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সর্বস্তরের মানুষের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে জড়ো হন।

পাঁচ বছর বয়সী নাতিকে নিয়ে স্মৃতিসৌধে এসেছেন ভ্যানচালক এনামুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাতিকে এবার স্কুলে ভর্তি করাব। ওকে নিয়ে আসলাম দেখাতে। যেন আমরা যখন থাকব না, তখন ওরা এগুলো যেন ভুলে না যায়।’

বাবার সঙ্গে এসেছে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নওশেদ ইসলাম। মাথায় বাংলাদেশের পতাকা। বলল, ‘জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। তাঁরা না থাকলে তো আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না।’

ভোর থেকেই জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষেরা। আজ রোববার সকালে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

দামেস্কের কিংবদন্তি আলেম ইমাম ইবনে আসাকির

মধ্যযুগে ইসলামি জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে যাঁদের মনন ও ভাবনা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তাঁদের অন্যতম হলেন কিংবদন্তি ইমাম ইবনে আসাকির। তাঁর মূল নাম আলী বিন হাসান, উপনাম আবুল হাসান। তবে ‘ইবনে আসাকির’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত।

এ নামে কেন তিনি বিখ্যাত, এর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে কারও কারও ধারণা—এটি পিতৃবংশের কারও নাম ছিল, যার সূত্র ধরে তিনি এই উপাধি অর্জন করেন। (ইমাম জাহাবি, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ১৫/২৪৭, দারুল হাদিস, কায়রো, ২০০৬)

তিনি প্রতি জুমাবারেই অন্তত একবার কোরআন খতম করতেন, আল্লাহর আনুগত্যহীন কোনো মুহূর্ত ব্যয় হলো কি না—এ বিষয়েও তিনি নিজেই নিজের হিসাব নিতেন।তাজউদ্দিন সুবকি (রহ.), তাবাক্বাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা

ইবনে আসাকির হিজরি ৪৯৯ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বর্তমান সিরিয়ার দামেস্ক নগরী। সেসময় দামেস্ক ছিল জ্ঞানচর্চা, তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও গবেষণার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। তাই তিনি সেখান থেকেই জ্ঞানার্জনের পথে যাত্রা শুরু করেন। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

পারিবারিক দীক্ষা

ইবনে আসাকির (রহ.)-এর পরিবার ছিল অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; যে কারণে শৈশবেই তিনি ধর্মীয় নীতিবোধ ও আত্মিক উন্নয়নের দীক্ষা লাভ করেন। তা ছাড়া পিতা ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান আলেম ও ফকিহ। তাই অল্প বয়সেই তিনি ফিকহ ও অন্যান্য শাস্ত্রে মৌলিক ধারণা লাভ করেন। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

আরও পড়ুনশিক্ষা নিয়ে ইবনে খালদুনের ভাবনা০৪ অক্টোবর ২০২৫ইবনে আসাকিরের হাদিস ও ইতিহাসচর্চা অসংখ্য আলেমকে মুগ্ধ করে। ফলে অনেকেই তাঁকে নির্ভরতার প্রতীক ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিবেচনা করেন।আল্লাহভীতির অনন্য প্রতীক

তিনি ছিলেন আল্লাহভীতির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি কাটান আল্লাহর স্মরণ, ইবাদত ও সত্যনিষ্ঠার পথে। যশ-খ্যাতি কিংবা পার্থিব সম্পদ অর্জনে তিনি কখনো আগ্রহ দেখাননি। গবেষণা ও জ্ঞানের জগতে তিনি যেমন অতুলনীয় ছিলেন, তেমনই তাকওয়া, আত্মনিবেদন ও সত্যনিষ্ঠায়ও ছিলেন অনন্য। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/২৪, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

আল্লামা তাজউদ্দিন সুবকি (রহ.) তাঁর ব্যাপারে লেখেন, ‘তিনি প্রতি জুমাবারেই অন্তত একবার কোরআন খতম করতেন, (ইবাদত, জ্ঞানচর্চা বা লেখালেখিতে) সর্বদাই মগ্ন থাকতেন, আল্লাহর আনুগত্যহীন কোনো মুহূর্ত ব্যয় হলো কি না—এ বিষয়েও তিনি নিজেই নিজের হিসাব নিতেন।’ (তাজউদ্দিন সুবকি, তাবাক্বাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৪/১৩৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত, ১৯৯৯)

শিক্ষায় অবদান

শিক্ষাজীবনের সূচনা থেকেই ইবনে আসাকির (রহ.) ছিলেন অনুসন্ধিৎসু, জ্ঞানপিপাসু ও মননশীল। জ্ঞান ও গবেষণা ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। জীবনের সিংহভাগ সময়ই তিনি কাটান জ্ঞান অন্বেষণ, ভ্রমণ, গ্রন্থ সংকলন ও শাইখদের সান্নিধ্যে গমন করে।

তিনি গভীর জ্ঞান আহরণের জন্য পাড়ি দেন হাজার মাইল পথ; পৌঁছেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক নগরে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

বাগদাদ (ইরাক): সে যুগের প্রধান জ্ঞানকেন্দ্র। ইবনে আসাকির (রহ.) সেখানে পাঁচ বছর অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি বিখ্যাত ‘মাদরাসায়ে নিজামিয়্যা’ থেকে হাদিস, ইতিহাস, নাহু, ফিকহসহ নানা শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান লাভ করেন।

নিশাপুর (ইরান): সে সময়ে হাদিসশাস্ত্র ও তত্ত্বচিন্তার সমৃদ্ধ কেন্দ্র।

ইস্পাহান (ইরান): ইমাম আবু নুআইম ও আবু আবদুল্লাহ ইবনে মানদাহসহ অনেক খ্যাতনামা মুহাদ্দিসের শহর।

হেজাজ: জ্ঞানার্জনের এক ঐতিহাসিক কেন্দ্র, যেখান থেকেই গড়ে উঠেছেন অসংখ্য আলেম, ফকিহ ও মুহাদ্দিস। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১৬-১৮, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

দামেস্কে ইবনে আসাকিরের সমাধি

সম্পর্কিত নিবন্ধ