জলবায়ু ন্যায্যতা নয়, প্রয়োজন জলবায়ু সুবিচার: ফরিদা আখতার
Published: 13th, December 2025 GMT
বিশেষ প্রতিবেদক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “জলবায়ু সংকটের ক্ষেত্রে ‘ন্যায্যতা’ শব্দটি আর যথেষ্ট নয়— এখন প্রয়োজন জলবায়ু সুবিচার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তা এখন আর শুধু পরিবেশগত বিষয় নয়; এটি একটি মানবাধিকার ইস্যু।”
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনের শুরুতে পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও ঘোষণা দেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
“জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে যে ক্লাইমেট ফাইন্যান্স দেওয়ার কথা বলা হয়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়, যা একটি স্পষ্ট অবিচার। “আমরা যে ক্ষতির শিকার, তা আমাদের দোষে নয়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের কেন ঋণ নিতে হবে?,” প্রশ্ন তোলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর পরিবর্তন নয়, এটি একটি দুর্যোগ। শিল্পায়নকেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনা এই দুর্যোগকে ত্বরান্বিত করেছে। অথচ বাংলাদেশ বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের মাত্র প্রায় ০.
উপদেষ্টা বলেন, “কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার করে আমাদের অনেক সময় বিভ্রান্ত ও নিয়ন্ত্রিত করা হয়। খুব সহজভাবে ‘নেট জিরো’ বলা হয়, কিন্তু ‘নেট জিরো’ বলে আসলে কিছু নেই। ‘জিরো’-এর আগে ‘নেট’ বসার অর্থ হলো একটি প্লাস ও একটি মাইনাসের সমন্বয়, যেখানে কার্বন নিঃসরণ একদিকে বাড়তে পারে এবং অন্যদিকে কিছু প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন প্রকৃত অর্থে জিরো কার্বন, কোনো বিভ্রান্তিকর শব্দ নয়। এ বিষয়ে কোনো ধরনের ধোঁকা গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরো বলেন, “নেচার বেইজড সল্যুশন শব্দটিও আজ বিভিন্ন কর্পোরেট স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে যুগ যুগ ধরে বসবাস ও সমাধান খোঁজার যে অভিজ্ঞতা জনগণের ছিল, সেটিকে এখন নানা প্রযুক্তি ও কৃত্রিম ধারণার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা প্রকৃত অর্থে নেচার বেইজড নয়।”
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, “দেশের হাওড়, বাওড়, ওয়েটল্যান্ড ও বিভিন্ন জলাশয় আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবে এসব জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বাজারে ইলিশের দাম বাড়লে আমরা প্রতিবাদ করি, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সংকটের কারণে ইলিশের স্বাভাবিক চলাচল—সমুদ্র থেকে নদীতে আসা এবং নদী থেকে সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার পথে যে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে— সে বিষয়ে আমরা খুব কমই কথা বলি।”
সম্মেলনের আহ্বায়ক এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী ফোরাম–এর সাধারণ সম্পাদক ও ধরার সদস্য সঞ্জীব দ্রং। মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সমন্বয়ক এবং এশিয়ান এনার্জি নেটওয়ার্কের।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সিরিয়ার আইএসের হামলায় ২ মার্কিন সেনা নিহত
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হয়েছেন। হামলায় সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় হামলায় অংশ নেওয়া আইএস সদস্যকে হত্যা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
এ ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি বলেছেন, ‘সবাই জেনে রাখুন—আপনি যদি বিশ্বের যেকোনো স্থানে আমেরিকানদের ওপর হামলা চালান, তাহলে আপনার জীবনের বাকি সময়টা এটা জেনে কাটাতে হবে যে যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে খুঁজে বের করবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করবে।’
আরও পড়ুনট্রাম্প–শারা বৈঠক শেষে ঘোষণা: আইএসবিরোধী বৈশ্বিক জোটে যোগ দিচ্ছে সিরিয়া১১ নভেম্বর ২০২৫পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল জানিয়েছেন, সিরিয়ার পালমিরায় এই অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে।
পেন্টাগনের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন একটি এলাকায় এই হামলা হয়েছে, যেখানে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেই।’ তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, সম্ভবত আইএস এই হামলা চালিয়েছে।
সম্প্রতি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য গঠিত একটি আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দেয় সিরিয়া। এই বৈশ্বিক জোটের লক্ষ্য, আইএসের অবশিষ্ট অংশগুলোকে নির্মূল করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা ঠেকানো।
গত মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকও করেন। এ সফর দুই দেশের জন্য একটি ‘নতুন যুগ’-এর সূচনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।