জাবির প্রশাসনিক ভবনে তালা : বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের উদ্বেগ, মধ্যরাতে জাকসুর প্রতিবাদ
Published: 14th, December 2025 GMT
জুলাই আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
গতকাল শনিবার রাতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক শামছুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ বিবৃতি দেওয়ার পর রাত দুইটার দিকে বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু)।
এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে ক্যাম্পাসে জুলাই আন্দোলনে হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার নিশ্চিতের দাবিতে নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন জাকসুর নেতারা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিবৃতিতে বলা হয়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসসমূহের প্রাক্কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনায় তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সংকটে পড়ছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করার ঘটনায় যখন পুরো ক্যাম্পাস হতবিহ্বল ও শোকাহত, তখন সেই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনাকে পুঁজি করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনে বাধা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এই তালা দেওয়ার ফলে চলমান সুষ্ঠু বিচার কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হবে। বলপ্রয়োগ ও চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার এ ধরনের কর্মকাণ্ড ফ্যাসিবাদী আমলের ফরমায়েশি রায় ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিবৃতিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জানায়, তারা অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করার পক্ষে। তবে সেই বিচার অবশ্যই আইন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ও নৈতিকতার ভিত্তিতে সম্পন্ন হতে হবে—বলপ্রয়োগ বা প্রশাসনিক অচলাবস্থার মাধ্যমে নয়।
জাকসুর সংবাদ সম্মেলন
পরে মধ্যরাতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন জাকসুর নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে হামলায় যেসব শিক্ষক-কর্মচারী সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিচার নিয়ে তাঁদের আন্দোলন ও সংগ্রাম চলমান ছিল। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত শিক্ষকদের কোনো বিচারের সুরাহা প্রশাসন দিতে পারেনি। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই বিচার সম্পন্ন হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাকসুর পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই।
জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘শরিফ ওসমান বিন হাদি ভাইয়ের মতো ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটবে না কিংবা বাংলাদেশের অন্য কোনো জায়গায় ঘটবে না—এর কোনো গ্যারান্টি আছে? সেই আশঙ্কার জায়গা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র, পেট্রলবোমা নিয়ে যেসব শিক্ষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিয়েছেন, তাঁদের বিচারের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই—বিচার কার্যক্রম যেন কোনো প্রকার দীর্ঘসূত্রতা না করে বাস্তবায়ন করা হয়। শিক্ষকদের বিচারের ক্ষেত্রে প্রশাসনের বরাবরই উদাসীনতা দেখা গেছে। এমনকি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, সেই সাক্ষ্য প্রদানকারীদের তালিকা পরদিনই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে গেছে।’ এ অবস্থায় তাঁদের দাবির সঙ্গে একতাবদ্ধভাবে পাশে না দাঁড়িয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম যে বিবৃতি দিয়েছে এবং তাঁদের ভিলেন বানানোর চেষ্টা করেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
শিক্ষক ফোরামের বিবৃতিতে বলপ্রয়োগ ও চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার যে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে জাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) আবদুর রশিদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে যেসব শিক্ষক সরাসরি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক বিচার নিষ্পত্তির জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে বিভিন্নভাবে দাবি জানিয়ে এসেছি। কিন্তু প্রশাসন, যারা অভ্যুত্থানের চেতনাকে লালন করে এই মসনদে বসেছিল, তারা আমাদের সেই দাবি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিচার সম্পন্নের জন্যই দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু প্রশাসন নানা টালবাহানা করছে। অবিলম্বে এ হামলায় জড়িত শিক্ষকদের বিচারকার্য নিশ্চিত করতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র ব চ র উদ ব গ প রক র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
জাবির প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের তালা
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নেতৃত্বে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়। এ সময় জাকসু ও বিভিন্ন হল সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচার শেষ হলেও শিক্ষকদের বিচার এখনো চলমান এবং ধীরগতির। এর মধ্যে শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ উসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। মিছিল শেষে তারা উপাচার্যের কাছে দ্রুত বিচারের দাবি জানান। কিন্তু, উপাচার্য কোনো সুনির্দিষ্ট সময় না জানালে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জাকসুর সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতী বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীদের সব চেয়ে বড় দাবি ছিল জুলাইয়ের হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার। প্রশাসন একই প্রমাণের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিচার করতে পারলেও, কোনো এক অজানা কারণে সেই প্রমাণ দিয়ে শিক্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।”
“প্রশাসন বারবার সময়ক্ষেপণ করছে। আজকে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অগ্রগামী যোদ্ধা ওসমান হাদি ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে, যা জুলাই অভ্যুত্থানকেই গুলি করার শামিল,”বলেন তিনি।
জাকসুর সমাজসেবা-বিষয়ক সম্পাদক আহসান লাবিব বলেন, “অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় অভ্যুত্থানপন্থি সরকার বা প্রশাসন দাবি করলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জুলাই হামলায় জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।”
“আমরা এই প্রশাসনকে ধিক্কার জানাই। স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই—যে প্রশাসন রক্তের বিচার করতে পারে না, সেই প্রশাসনের সাথে আমাদের কোনো সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকতে পারে না।”
জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আজকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফ উসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা এই আস্ফালনের সুযোগ পাচ্ছে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। যার ফলে ছাত্রলীগ এসে ক্যাম্পাসে ব্যানার টানানোর সাহস পায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার গোপন তথ্য তাদের কাছে পৌঁছে যায়।”
হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “যত দিন পর্যন্ত হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার সম্পন্ন না হবে, তত দিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিচার সম্পন্ন করেছি। ৫৪ বছরের জঞ্জাল সরাতে প্রশাসন দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। ১৯ জন শিক্ষককে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং ৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকালও (১১ ডিসেম্বর) আমরা সারা দিন এ নিয়ে কাজ করেছি। শিক্ষকদের বিচার প্রক্রিয়াও দ্রুত সম্পন্ন করা হবে,” বলেন তিনি।
ঢাকা/হাবীব/জান্নাত