ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে এবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলা ও হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত থেকে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ ও কর্মসূচি চলছে।

যবিপ্রবিতে শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের আবাসিক হল ও প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে শেষ হয়। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে দোয়া ও সম্মিলিত মুনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘হাদির ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল আলিম সামি বলেন, “হাদির ওপর হামলা পরিকল্পিত এবং তার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার চেষ্টা।” দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাহফুজ রাসেল বলেন, “এই হামলা শুধু হাদির ওপর নয়, বরং পুরো জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের ওপর আঘাত।”

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দিন রাতে মূল ফটকে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ইনকিলাব মঞ্চ কুবি শাখার আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, “জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের টার্গেট করেই এই হামলা চালানো হয়েছে।” আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বহিষ্কার দাবি করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতের বেলা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্বজিৎ চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘তুমি কে? আমি কে? ওসমান হাদি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা বলেন, “মতাদর্শ ভিন্ন হলেও এই হামলার বিরুদ্ধে সবাই এক।” প্রাণীবিদ্যা বিভাগের জান্নাতুল উর্মি তারিন বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের দাবি জানান। অন্য শিক্ষার্থীরা দেশের স্থিতিশীলতা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

এছাড়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব এক বিবৃতিতে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য জুলাই আন্দোলনের চেতনা নস্যাৎ করা, নির্বাচনী পরিবেশ অস্থির করা এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয় নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান বিন হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঢাকা/ইমদাদুল/এমদাদুল/লিমন/জান্নাত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ দ র ওপর ইনক ল ব ওসম ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’

৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।

লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’

এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’

লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’

আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫

জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ