সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের তীব্র নিন্দা
Published: 14th, December 2025 GMT
সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনটিতে গতকাল শনিবার এ হামলা হয়।
গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন।
গুতেরেস বলেন, ‘দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
হামলায় নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।সুদানের সেনাবাহিনী ওই হামলার দায় র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর ওপর চাপিয়েছে।
সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এ লড়াই চলছে।
আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এ হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া এবং এর পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধ্বংসাত্মক কৌশলের স্পষ্ট প্রকাশ।
সুদান সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওতে একটি স্থান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি জাতিসংঘের স্থাপনা।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হওয়ার এ ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।.আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিব
যেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।
দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত আবেই বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার অঞ্চল।
সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘের একজন শান্তিরক্ষীউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ন ত রক ষ দ র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে রক্তক্ষয়ী হামলা–সহিংসতায় জড়িত আরএসএফপ্রধান কে এই হেমেদতি
মোহামেদ হামদান দাগালো, ‘হেমেদতি’ নামেই পরিচিত। সুদানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি। তাঁর আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এখন দেশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করছে।
আরএসএফ গত মাসে এল-ফাশের শহর দখল করে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করে। কারণ, এটি ছিল সুদানের সেনাবাহিনী ও তাঁদের স্থানীয় মিত্রদের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুরে থাকা শেষ ঘাঁটি।
হেমেদতির জন্ম ১৯৭৪, মতান্তরে ১৯৭৫ সালে। গ্রামের মানুষের মতো তাঁরও জন্মের সঠিক তারিখ ও স্থান নিবন্ধন করা হয়নি। তিনি সাধারণ এক পরিবারের সদস্য ছিলেন। তাঁর পরিবার মহারিয়া শাখার রিজেইগাত সম্প্রদায়ের, যারা ঐতিহ্যগতভাবে চাদ ও দারফুরে উট পালন করে জীবিকা নির্বাহ করত।
হেমেদতির চাচা জুমা দাগালোর নেতৃত্বে তাঁর সম্প্রদায় ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের সন্ধানে দারফুরে আসে। পরে সেখানে বসবাসের অনুমতি পায়। কৈশোরেই পড়াশোনা ছেড়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে লিবিয়া ও মিসরে উটের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন হেমেদতি।হেমেদতির চাচা জুমা দাগালোর নেতৃত্বে তাঁর সম্প্রদায় ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের সন্ধানে দারফুরে আসে। পরে সেখানে বসবাসের অনুমতি পায়। কৈশোরেই পড়াশোনা ছেড়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে লিবিয়া ও মিসরে উটের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন হেমেদতি।
সুদানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারের অবহেলার কারণে দারফুর এক দরিদ্র ও আইনের শাসনবিহীন এলাকায় পরিণত হয়। এ কারণে সে সময় দারফুর সুদানের ‘বন্য পশ্চিম’ এলাকা হিসেবে পরিচিতি পায়।
এর মধ্যে জানজাবিদ নামে পরিচিত আরব মিলিশিয়ারা ফুর সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে আক্রমণ করেন। এতে জুমা দাগালোর নেতৃত্বে একটি বাহিনীও যোগ দেয়।
সহিংসতার এ চক্র ২০০৩ সালে সরকারের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর বিদ্রোহে রূপ নেয়। এ সময় ফুর যোদ্ধাদের সঙ্গে মাসালিত, জাগাওয়া ও অন্য জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও যোগ দেন। তাঁদের অভিযোগ, সুদানের উচ্চবর্ণের আরবরা তাঁদের অবহেলা করছেন।
আরএসএফ একসময় সেনাবাহিনীর মিত্র ছিল। পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়