রাফিনিয়ার রকেট শো: ওসাসুনাকে উড়িয়ে ব্যবধান বাড়ালো বার্সা
Published: 14th, December 2025 GMT
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে এল ক্লাসিকোয় হারার পর যেন নতুন করে জ্বলে উঠেছে বার্সেলোনা। সেই পরাজয়ের পর লা লিগায় টানা সপ্তম জয় তুলে নিল হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে শনিবার রাতে তারা ২-০ গোলে ওসাসুনাকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করলো। কাতালানদের এই দাপুটে জয়ের নায়ক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল রাফিনিয়া। যিনি একাই করলেন দুটি গোল।
ম্যাচজুড়ে আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন তরুণ তারকা লামিনে ইয়ামাল এবং মার্কাস রাশফোর্ড। যদিও ইয়ামালের গোল আসেনি, তবে তার গতি ও বল দেওয়া-নেওয়ার কৌশল ওসাসুনার রক্ষণে বারবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বার্সা পুরো ম্যাচে ৭০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রাখে এবং ১৭টি শট নেয়। যার মধ্যে ৭টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে, ওসাসুনা ৩টি শট নিলেও মাত্র একটি লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়।
প্রথমার্ধে বার্সেলোনা চেপে ধরলেও, খেলার ধারার বিপরীতে ২০ মিনিটে একটি সুযোগ পেয়েছিল ওসাসুনা। আন্তে বুদিমিরের শট সেভ করে দেন বার্সা গোলরক্ষক হুয়ান গার্সিয়া। এরপর ফেরান তোরেস হেডে বল জালে জড়ালেও, অফসাইডের কারণে সেই গোলটি বাতিল হয়ে যায়। সেই আক্রমণের শুরুতে রাফিনিয়াই অফসাইড অবস্থানে ছিলেন। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়।
গোলের অপেক্ষা ভাঙে দ্বিতীয়ার্ধের ৭০ মিনিটে। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রির বাড়ানো বল ধরে বক্সের বাইরে থেকে এক ঝলমলে বাঁ পায়ের জোরালো শটে বার্সাকে কাঙ্ক্ষিত লিড এনে দেন রাফিনিয়া।
ব্যক্তিগত এবং দলের দ্বিতীয় গোলটি আসে ম্যাচের একেবারে শেষদিকে, ৮৬ মিনিটে। জুলস কুন্দের ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে ওসাসুনা ডিফেন্ডার বলটি ভুল করে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা রাফিনিয়ার পায়ে তুলে দেন। সুযোগ হাতছাড়া না করে এক স্পর্শেই সেটি জালে জড়ান এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। নিশ্চিত করেন ২-০ ব্যবধানের জয়।
এই জয়ের ফলে ১৭ ম্যাচে ১৪ জয় ও এক ড্রয়ে বার্সেলোনার সংগ্রহ এখন ৪৩ পয়েন্ট। তারা এখন লা লিগা টেবিলের শীর্ষে। এক ম্যাচ কম খেলে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৭-এ। এই ব্যবধান বার্সেলোনার শিরোপা জয়ের পথে বড় স্বস্তি এনে দিল।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সেন্ট মার্টিনে যেতে পর্যটকের চাপ, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট আগাম বিক্রি
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রতিদিন ছয়টি জাহাজে প্রায় দুই হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে যাচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতে দৈনিক যেতেন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ জন। জাহাজমালিকেরা জানিয়েছেন, পর্যটকের চাপে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব জাহাজের টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে।
জাহাজমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক বহনের অনুমতি নেই। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
গত ১৩ দিনে অন্তত ২১ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া, কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজের পরিচালকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো জাহাজের টিকিট অবিক্রীত নেই। এমভি কর্ণফুলী জাহাজের টিকিট আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। অন্য পাঁচটি জাহাজের প্রায় ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
এর আগে গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করা হয়। তবে নভেম্বর মাসে রাতযাপনের অনুমতি না থাকা ও জাহাজ চলাচল সীমিত থাকায় সে মাসে কোনো পর্যটক দ্বীপে যাননি। চলতি ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ রাখায় পর্যটক বেড়েছে।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্র ও শনিবার কক্সবাজার সৈকতে অন্তত দুই লাখ পর্যটক এসেছেন। তাঁদের অনেকেরই সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় সেই ইচ্ছা অনেকের পূরণ হয়নি।
কঠোর নজরদারিতে পর্যটকসেন্ট মার্টিন যেতে পর্যটকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে।
এ ছাড়া দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা কেনাবেচা, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ সব ধরনের মোটরচালিত যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের ১২ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিউআর কোড সংযুক্ত টিকিট ছাড়া কাউকে জাহাজে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটকও যেতে পারবেন না। যাত্রীরা প্লাস্টিক বা পলিথিন বহন করছেন কি না, তা জাহাজে ওঠার আগেই তদারকি হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সেন্ট মার্টিন যাতায়াত ও দ্বীপে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণেও নজরদারি চলছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।