ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দুই বছরের বেশি সময়ের নির্বিচার হামলায় নিহতের পাশাপাশি হাজার হাজার শিশু বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছে। বারবার বাস্তুচ্যুতি, ক্ষুধার্ত, স্বজন হারানো কিংবা পরিবার-স্কুল-পাড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শিশু সংখ্যাও অজস্র। গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ধ্বংসযজ্ঞ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে এসেছে। আগের দৈনন্দিন ভয়াবহতা না থাকলেও সেই ভয়াবহতার চাপ ও ছায়া সব জায়গায় রয়ে গেছে। উপত্যকাটির অন্য বাসিন্দাদের মতো শিশুদের এসব তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

গাজায় শারীরিক ও মানসিক অভিঘাতে ভোগা শিশুদের ক্ষণিকের জন্য হলেও শান্তি দিতে ছোট পরিসরে ভার্চ্যুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) সেবা চালু হয়েছে। গাজা মেডটেক নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে। তারা ভুক্তভোগী শিশুদের ভিআর হেডসেট পরিয়ে ভিন্ন জগতে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। এই জগতে তারা যুদ্ধের ভয়াবহ, ক্ষয়ক্ষতি এবং ধ্বংসের স্মৃতি কিছু সময়ের জন্য ভুলে থাকতে পারে। অল্প সময়ের জন্য আনন্দে মেতে উঠতে পারে।

মধ্য গাজার আজ-জাওয়াইদা এলাকার একটি তাঁবুতে শিশুরা ভিআর সেশনে অংশ নিতে পারছে। এতে অংশ নেওয়া শিশু সালাহ আবু রুকবা বলেন, ‘আমার মাথায় আঘাত লেগেছে। খুব ব্যথা করে। আমি তা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি।’

ভিআর সেশনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আবু রুকবা বলে, ‘আমি যখন মাথায় হেডসেট পরি, আঘাতের ব্যথা ভুলে যাই। ধ্বংস, যুদ্ধ, এমনকি ড্রোনের শব্দের কথাও আমি ভুলে যাই। তখন আমার আরাম লাগে।’

গাজা মেডটেকের যোগাযোগ কর্মকর্তা লামা আবু দালাল বলেন, ‘আবু রুকবা এবং অন্য শিশুদের শরীর ও মনে যুদ্ধের স্মৃতি মিশে গেছে। ভিআর হেডসেট তাদের জীবনকে বদলে দেওয়া ক্ষতগুলো ভুলতে সাহায্য করে। কয়েক মুহূর্তের জন্য তারা আবার শিশু হয়ে উঠতে পারে।’ প্রকল্পটি কবে থেকে শুরু হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফিলিস্তিনি উদ্ভাবক মোসাব আলী গাজা মেডটেকের উদ্যোগ শুরু করেছিলেন। নিজের আহত ছেলেকে সান্ত্বনা দিতে তিনি সর্বপ্রথম ভিআর হেডসেট ব্যবহার করা শুরু করেন। মোসাব আলী যুদ্ধের একপর্যায়ে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ভিআর সেবা মানসিক রোগ, বিশেষ করে পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) চিকিৎসায় ভালো ফল দিতে পারে। কিন্তু গাজায় এই সেবা চালানো কঠিন। কারণ, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।

জাতিসংঘের অনুমান, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি শিশু নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার অভাবে চরম মানসিক চাপে রয়েছে। তাদের সুস্থ হতে দীর্ঘমেয়াদি সেবা প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) জাতিসংঘের আরও কয়েকটি সংস্থা গাজায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং মানসিক সহায়তা পৌঁছানোর পথে সব ধরনের বাধা তুলে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ওসমান হাদির ওপর হামলা নির্বাচন বানচালের হীন চেষ্টা: অধিকার

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গুলির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করার একটি হীন চেষ্টা।

হামলার সঙ্গে জড়িত সব অভিযুক্তকে দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার এবং ঘটনার একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

শরিফ ওসমান হাদি ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ’ এবং শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ বক্তা হিসেবে পরিচিত উল্লেখ করে সংগঠনটির দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিভিন্ন ফোন নম্বর থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। অতীতের একটি ঘটনার উদাহরণ হিসেবে অধিকার বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের কথাও উল্লেখ করেছে।

হাদিকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটি রাজনৈতিক সহিংসতা ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে আইনের শাসন, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটি অভিযোগ করে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এই সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও অন্য নির্বাচনগুলোকে তারা ভুয়া হিসেবে বিবেচনা করে।

সংগঠনটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র প্রবেশ রোধে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ এবং দলীয় ও অন্তর্দলীয় কোন্দল বন্ধে শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকার ওপর জোর দেয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ