ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকে ঘিরে এরইমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটারদের মন জয় করতে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। 

সেই ঢেউ থেকে খাগড়াছড়িও বাদ পড়েনি। তবে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদেরও কিছু ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে নারী ভোটাররা কী ভাবছেন? কেমন প্রার্থী চান তারা?

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ৯টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা আর ৩৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে। পুরো জেলাজুড়ে সংসদীয় আসন মাত্র একটি। আসন নম্বর ২৯৮।

এই জেলায় পাহাড়ি-বাঙালী মিলে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বসবাস। ভোটারের অনুপাতে নারী ভোটার পুরুষের প্রায় কাছাকাছি। সামনে ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন ভাবছেন খাগড়াছড়ির নারীরা?

খাগড়াছড়ি সদরের কলেজ পাড়া এলাকার নারী নেত্রী নমিতা চাকমা ও ঠাকুরছড়া গ্রামের শেফালি ত্রিপুরা, গোলাবাড়ী এলাকার ক্রইসাউ মারমা বলেন, “এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে চাই, যিনি জয়যুক্ত হলে নারীরা নিরাপদে চলতে পারবেন। নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবেন সর্বোপরি যিনি নারীদের মর্যাদা রক্ষার জন্য কাজ করবেন, সেই ধরনের প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই।

তিনি আরো বলেন, “যেহেতু পার্বত্য জেলা হওয়ায় এখানে যেহেতু পাহাড়ি–বাঙালী বসবাস করেন সেই সম্প্রীতির কথাও বলেছেন অনেকেই। যিনি পাহাড়কে শান্ত রাখতে চান বা রাখতে পারবেন সেই ধরনের প্রার্থীও চান তারা।”

সব মিলিয়ে যিনি পাহাড়ের শান্তি সম্প্রীতি ও নারীদের নিরাপত্তাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন সেই ধরনের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে সংসদে পাঠাতে চান এখানকার নারী ভোটাররা।

তবে নতুন নারী ভোটারদের ভাবনা খানিকটা অন্যরকম। খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের তিশা চাকমা ও টিপলি চাকমা প্রথমবার ভোট দেবেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। তারা এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চান যিনি দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা দেবেন এবং চাকরি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবেন সেই ধরনের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।

খাগড়াছড়ি সদরের আপার পেরাছড়া নিবাসী ঢাকা ইডেন এর ছাত্রী হৃদিতা চাকমা বলেন, “নারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান সর্বপরি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন সেই প্রার্থীকে ভোট দিব।”

এবার ২৭ হাজার ৪৯৩ জন নতুন ভোটারসহ এ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮৮ জন। তারমধ্যে নারী ভোটার ২,৬৭,৬৭১ জন আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার চার জন।

ঢাকা/রূপায়ন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ই ধরন র প র র থ

এছাড়াও পড়ুন:

সেন্ট মার্টিনে যেতে পর্যটকের চাপ, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট আগাম বিক্রি

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রতিদিন ছয়টি জাহাজে প্রায় দুই হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে যাচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতে দৈনিক যেতেন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ জন। জাহাজমালিকেরা জানিয়েছেন, পর্যটকের চাপে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব জাহাজের টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে।

জাহাজমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক বহনের অনুমতি নেই। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

গত ১৩ দিনে অন্তত ২১ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া, কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজের পরিচালকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো জাহাজের টিকিট অবিক্রীত নেই। এমভি কর্ণফুলী জাহাজের টিকিট আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। অন্য পাঁচটি জাহাজের প্রায় ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

এর আগে গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করা হয়। তবে নভেম্বর মাসে রাতযাপনের অনুমতি না থাকা ও জাহাজ চলাচল সীমিত থাকায় সে মাসে কোনো পর্যটক দ্বীপে যাননি। চলতি ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ রাখায় পর্যটক বেড়েছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্র ও শনিবার কক্সবাজার সৈকতে অন্তত দুই লাখ পর্যটক এসেছেন। তাঁদের অনেকেরই সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় সেই ইচ্ছা অনেকের পূরণ হয়নি।

কঠোর নজরদারিতে পর্যটক

সেন্ট মার্টিন যেতে পর্যটকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে।

এ ছাড়া দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা কেনাবেচা, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ সব ধরনের মোটরচালিত যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের ১২ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিউআর কোড সংযুক্ত টিকিট ছাড়া কাউকে জাহাজে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটকও যেতে পারবেন না। যাত্রীরা প্লাস্টিক বা পলিথিন বহন করছেন কি না, তা জাহাজে ওঠার আগেই তদারকি হচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সেন্ট মার্টিন যাতায়াত ও দ্বীপে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণেও নজরদারি চলছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ