কম্বোডিয়ায় আবারো হামলা চালাল থাইল্যান্ড
Published: 14th, December 2025 GMT
কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা শুরু করেছে থাইল্যান্ড। থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিজেদের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
আরো পড়ুন:
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সংঘর্ষ অব্যাহত, সীমান্ত থেকে পালিয়েছে ৫ লাখ মানুষ
মিস ইউনিভার্সের ‘ওয়ান্টেড’ মালিকের উত্থানের গল্প
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দুই দেশের মধ্যে সহিংসতা আজ রবিবারও অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার থাইল্যান্ডের সঙ্গে সব সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় কম্বোডিয়া।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারী চেষ্টা চালালেও তা উপেক্ষা করে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রেখেছে।
এই সংঘাতের মূল কারণ হলো তাদের ৮০০ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) যৌথ সীমারেখা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ। এই লড়াইয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং উভয় পক্ষেই অর্ধ-মিলিয়নের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
রবিবার থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল পারাখ রাত্তানচাইয়াপানের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মাতিচোন অনলাইন জানায়, ত্রাত প্রদেশের কাছে নিজেদের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে নতুন সামরিক অভিযান শুরু করেছে থাইল্যান্ড।
রাট্টানাচাইয়াপান থাই পত্রিকাটিকে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার নীতি এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষারভিত্তিতে এই অভিযানটি ভোরের প্রথম প্রহরে তীব্র সংঘর্ষের মাধ্যমে শুরু হয়।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, অভিযানের মাধ্যমে তারা শত্রুপক্ষকে হটিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন থাই পিবিএস জানায়, সংঘর্ষস্থল থেকে কম্বোডিয়ার সেনাদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে থাইল্যান্ডের পতাকা উত্তোলন করেছে সেনারা।
সর্বশেষ এই ঘটনায় হতাহতের কোনো তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি।
রবিবারের সর্বশেষ সংঘর্ষ নিয়ে এখনো কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কম ব ড য় র রব ব র স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
দামেস্কের কিংবদন্তি আলেম ইমাম ইবনে আসাকির
মধ্যযুগে ইসলামি জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে যাঁদের মনন ও ভাবনা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তাঁদের অন্যতম হলেন কিংবদন্তি ইমাম ইবনে আসাকির। তাঁর মূল নাম আলী বিন হাসান, উপনাম আবুল হাসান। তবে ‘ইবনে আসাকির’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত।
এ নামে কেন তিনি বিখ্যাত, এর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে কারও কারও ধারণা—এটি পিতৃবংশের কারও নাম ছিল, যার সূত্র ধরে তিনি এই উপাধি অর্জন করেন। (ইমাম জাহাবি, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ১৫/২৪৭, দারুল হাদিস, কায়রো, ২০০৬)
তিনি প্রতি জুমাবারেই অন্তত একবার কোরআন খতম করতেন, আল্লাহর আনুগত্যহীন কোনো মুহূর্ত ব্যয় হলো কি না—এ বিষয়েও তিনি নিজেই নিজের হিসাব নিতেন।তাজউদ্দিন সুবকি (রহ.), তাবাক্বাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরাইবনে আসাকির হিজরি ৪৯৯ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বর্তমান সিরিয়ার দামেস্ক নগরী। সেসময় দামেস্ক ছিল জ্ঞানচর্চা, তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও গবেষণার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। তাই তিনি সেখান থেকেই জ্ঞানার্জনের পথে যাত্রা শুরু করেন। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
পারিবারিক দীক্ষাইবনে আসাকির (রহ.)-এর পরিবার ছিল অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; যে কারণে শৈশবেই তিনি ধর্মীয় নীতিবোধ ও আত্মিক উন্নয়নের দীক্ষা লাভ করেন। তা ছাড়া পিতা ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান আলেম ও ফকিহ। তাই অল্প বয়সেই তিনি ফিকহ ও অন্যান্য শাস্ত্রে মৌলিক ধারণা লাভ করেন। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
আরও পড়ুনশিক্ষা নিয়ে ইবনে খালদুনের ভাবনা০৪ অক্টোবর ২০২৫ইবনে আসাকিরের হাদিস ও ইতিহাসচর্চা অসংখ্য আলেমকে মুগ্ধ করে। ফলে অনেকেই তাঁকে নির্ভরতার প্রতীক ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিবেচনা করেন।আল্লাহভীতির অনন্য প্রতীকতিনি ছিলেন আল্লাহভীতির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি কাটান আল্লাহর স্মরণ, ইবাদত ও সত্যনিষ্ঠার পথে। যশ-খ্যাতি কিংবা পার্থিব সম্পদ অর্জনে তিনি কখনো আগ্রহ দেখাননি। গবেষণা ও জ্ঞানের জগতে তিনি যেমন অতুলনীয় ছিলেন, তেমনই তাকওয়া, আত্মনিবেদন ও সত্যনিষ্ঠায়ও ছিলেন অনন্য। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/২৪, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
আল্লামা তাজউদ্দিন সুবকি (রহ.) তাঁর ব্যাপারে লেখেন, ‘তিনি প্রতি জুমাবারেই অন্তত একবার কোরআন খতম করতেন, (ইবাদত, জ্ঞানচর্চা বা লেখালেখিতে) সর্বদাই মগ্ন থাকতেন, আল্লাহর আনুগত্যহীন কোনো মুহূর্ত ব্যয় হলো কি না—এ বিষয়েও তিনি নিজেই নিজের হিসাব নিতেন।’ (তাজউদ্দিন সুবকি, তাবাক্বাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৪/১৩৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত, ১৯৯৯)
শিক্ষায় অবদানশিক্ষাজীবনের সূচনা থেকেই ইবনে আসাকির (রহ.) ছিলেন অনুসন্ধিৎসু, জ্ঞানপিপাসু ও মননশীল। জ্ঞান ও গবেষণা ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। জীবনের সিংহভাগ সময়ই তিনি কাটান জ্ঞান অন্বেষণ, ভ্রমণ, গ্রন্থ সংকলন ও শাইখদের সান্নিধ্যে গমন করে।
তিনি গভীর জ্ঞান আহরণের জন্য পাড়ি দেন হাজার মাইল পথ; পৌঁছেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক নগরে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
বাগদাদ (ইরাক): সে যুগের প্রধান জ্ঞানকেন্দ্র। ইবনে আসাকির (রহ.) সেখানে পাঁচ বছর অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি বিখ্যাত ‘মাদরাসায়ে নিজামিয়্যা’ থেকে হাদিস, ইতিহাস, নাহু, ফিকহসহ নানা শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান লাভ করেন।
নিশাপুর (ইরান): সে সময়ে হাদিসশাস্ত্র ও তত্ত্বচিন্তার সমৃদ্ধ কেন্দ্র।
ইস্পাহান (ইরান): ইমাম আবু নুআইম ও আবু আবদুল্লাহ ইবনে মানদাহসহ অনেক খ্যাতনামা মুহাদ্দিসের শহর।
হেজাজ: জ্ঞানার্জনের এক ঐতিহাসিক কেন্দ্র, যেখান থেকেই গড়ে উঠেছেন অসংখ্য আলেম, ফকিহ ও মুহাদ্দিস। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১৬-১৮, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
দামেস্কে ইবনে আসাকিরের সমাধি