দেশের বেকারত্ব বেড়েছে এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়। শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান—এই তিনের মধ্যে একটি বিরাট ব্যবধান বিদ্যমান। কর্মসংস্থান বাড়ানো সরকারের দায়িত্ব। তবে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলোর অনেক ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিকসের যুগে অনেক বেশি প্রযুক্তির জ্ঞান থাকতে হবে। এগুলো দিয়েই ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

তবে বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান মনে করেন, বেকারত্বের পরিণতি বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এখনো ততটা গুরুতর আকার ধারণ করেনি। অনেক ক্ষেত্রে বৈদেশিক আয়ের মাধ্যমে বেকারত্বের অবস্থাও দূর হয়ে যায়।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য মুক্ত আলোচনা: তরুণদের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, অনেক তরুণ গ্র্যাজুয়েট হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই অনেকে ভাষা না জেনে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। তাই তাঁদের তৈরি করতে হলে ভাষা শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এখন এআই এবং রোবোটিকসের যুগ, দরকার অনেক বেশি প্রযুক্তির ভাষা জানা, এগুলো দিয়েই ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ‘হাই স্কিল ম্যানেজারিয়াল পজিশনে খুবই স্বল্প মাত্রায় নারীদের অংশগ্রহণ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের চাকরি বাজারে অন্তর্ভুক্ত করছে। শহর এলাকায় ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মসংস্থানের ওপর একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এগুলোর ওপরও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় অভিযোগটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঘিরে। শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই; এই তিনের মধ্যে একটি গভীর ব্যবধান বিদ্যমান।’ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ হচ্ছে উল্লেখ করে বর্তমানে কর্মরতদের জন্য দেশে কোনো কার্যকর অধিকার বা সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, অদক্ষ শ্রমশক্তিকে দক্ষ শ্রমশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে দেশের নিজস্ব ইকোসিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে। একই সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাংক বলছে, দেশের বেকারত্ব বেড়েছে এবং দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়। অন্যান্য সূচকগুলো দেখেও ভালো কিছু দেখা যাচ্ছে না, যা দেখা যাচ্ছে, সেটা খুবই উদ্বেগজনক।

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারে আমাদের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে, কিন্তু সেই সুযোগ আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। সব দেশ ৩০ বছর পরই গার্মেন্টস শিল্প থেকে সরে আসে, ইউরোপ বলেন বা জাপান বলেন। কিন্তু আমরা ৪৫ বছর পরও এখান থেকে সরে তো আসছিই না, বরং সেটার ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি।’

অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ পারভেজ ইমদাদ বলেন, ‘কর্মসংস্থান বাড়লে অসমতা কমে আসে। সরকারের দায়িত্ব চাকরি বাড়ানো। অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি সেক্টরেরও অনেক ভূমিকা রাখার জায়গা রয়েছে।  প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের দেশেরও বিভিন্ন খাত উন্নয়ন করা সম্ভব।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, তরুণদের জন্য শুধু চাকরি দেওয়াই কি লক্ষ্য, নাকি টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাই আসল উদ্দেশ্য—এই প্রশ্ন গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। তরুণদের জন্য এমন একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তাঁরা নিজেদের সম্ভাবনা ও সৃজনশীল চিন্তাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

তবে বেকারত্ব নিয়ে কিছুটা ভিন্ন কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলে বেকারত্ব ও জীবিকার মধ্যে স্পষ্ট কোনো পার্থক্য অনেক সময় দেখা যায় না। কারণ, সেখানে মানুষের একাধিক আয়ের উৎস থাকে। ফলে বেকারত্বের পরিণতি বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এখনো ততটা গুরুতর আকার ধারণ করেনি। অনেক ক্ষেত্রে বৈদেশিক আয়ের মাধ্যমে বেকারত্বের অবস্থাও দূর হয়ে যায়।

অর্থনীতির পরিভাষায় একে ‘ছদ্ম বেকারত্ব’ হিসেবে উল্লেখ করে আবদুল মঈন খান বলেন, তরুণদের বিভিন্ন উৎস থেকে আয় থাকায় তাঁদের মৌলিক চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা চাকরি অনুসন্ধানে ততটা আন্তরিক বা সক্রিয় থাকেন না। এর পরিণতিতে তরুণেরা অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন এবং নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছেন। পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ও সরকারি প্রেক্ষাপটে এই বাস্তবতাই আগামী দিনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

তরুণদেরও প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে দিতে হবে

অনুষ্ঠানের শুরুতে সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, যে তরুণেরা দেশের পরিবর্তন এবং সংস্কার দেখার জন্য অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন, তাঁরাই আজ হতাশ। তরুণদের মন্ত্রিত্বে বসিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের খুব লাভ হয় না। সবারই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তরুণদেরও সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার তুষার, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কো-অর্ডিনেটর দিদারুল আলম ভূঁইয়া, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী ও আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ক ক ষ ত র ব শ বব দ য দ র জন য অন ষ ঠ ন ন বল ন স জ এস আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সিরিয়ার আইএসের হামলায় ২ মার্কিন সেনা নিহত

সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হয়েছেন। হামলায় সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় হামলায় অংশ নেওয়া আইএস সদস্যকে হত্যা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড এ তথ্য জানিয়েছে।

এ ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি বলেছেন, ‘সবাই জেনে রাখুন—আপনি যদি বিশ্বের যেকোনো স্থানে আমেরিকানদের ওপর হামলা চালান, তাহলে আপনার জীবনের বাকি সময়টা এটা জেনে কাটাতে হবে যে যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে খুঁজে বের করবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করবে।’

আরও পড়ুনট্রাম্প–শারা বৈঠক শেষে ঘোষণা: আইএসবিরোধী বৈশ্বিক জোটে যোগ দিচ্ছে সিরিয়া১১ নভেম্বর ২০২৫

পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল জানিয়েছেন, সিরিয়ার পালমিরায় এই অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে।

পেন্টাগনের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন একটি এলাকায় এই হামলা হয়েছে, যেখানে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেই।’ তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, সম্ভবত আইএস এই হামলা চালিয়েছে।

সম্প্রতি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য গঠিত একটি আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দেয় সিরিয়া। এই বৈশ্বিক জোটের লক্ষ্য, আইএসের অবশিষ্ট অংশগুলোকে নির্মূল করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা ঠেকানো।

গত মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকও করেন। এ সফর দুই দেশের জন্য একটি ‘নতুন যুগ’-এর সূচনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ