ভ্রমণ কর থেকে সরকারের আয় কমে গেছে। এ কারণে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ভ্রমণ করের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এমনকি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়েও ১১২ কোটি টাকা কম ভ্রমণ কর আদায় হয়েছে। গত জুলাই–ডিসেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্রমণ কর আদায় করেছে ৯২২ কোটি টাকা।

এনবিআর–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতীয় পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভারত ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। তবে যাঁদের আগে ভিসা নেওয়া আছে, তাঁরা যেতে পারছেন। সার্বিকভাবে সড়কপথে ভারতে পর্যটক যাওয়া কমেছে। আকাশপথেও কলকাতা ও চেন্নাইয়ের ফ্লাইট কমিয়েছে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো। এ ছাড়া সার্বিকভাবে অর্থনীতি কিছুটা চাপে থাকায় এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে–বিদেশে ভ্রমণ কমে গেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৯২২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ৩৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ভিসা প্রদানে কঠোর নীতি অবলম্বন করায় ভারতে যাত্রী গমন কমেছে। তাই ভ্রমণ করে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ডিসেম্বর মাসে ভ্রমণপ্রেমীরা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে যান। কিন্তু গত ডিসেম্বরে ভ্রমণ করের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ডিসেম্বর মাসে ২২৮ কোটি টাকার ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১৩১ কোটি টাকা।

আকাশপথ থেকে মূলত বেশি ভ্রমণ কর আদায় হয়। বিমান টিকিট বিক্রির সময় বিমান সংস্থাগুলো এই ভ্রমণ করের টাকা কেটে রাখে। বিভিন্ন এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী না পাওয়ায় ভারতে ফ্লাইট কমিয়েছে তারা। গত আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারতের পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় ফ্লাইট সংখ্যা কমানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ ভারতের কলকাতা ও চেন্নাই পথে তাদের উড্ডয়ন বা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়েছে। বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলা আগে সপ্তাহে কলকাতা ও চেন্নাইয়ে ৩২টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এখন তা কমিয়ে ৯টিতে নামিয়ে এনেছে।

এ বিষয়ে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভিসা জটিলতার কারণে ভারতে ভ্রমণ কমে গেছে। তাই এয়ারলাইনস–শিল্পকে রক্ষার করতে এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভারতে পর্যটক ভিসা চালু ও চিকিৎসা ভিসা সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের।

এদিকে গত জানুয়ারি মাসে ভ্রমণ কর বা আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তাতে অভ্যন্তরীণ পথে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশের বাইরে (এশিয়ার মধ্যে) ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকা ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড স ম বর ফ ল ইট

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ