ভারতীয় পর্যটন ভিসা বন্ধে কমেছে ভ্রমণ কর
Published: 18th, February 2025 GMT
ভ্রমণ কর থেকে সরকারের আয় কমে গেছে। এ কারণে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ভ্রমণ করের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এমনকি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়েও ১১২ কোটি টাকা কম ভ্রমণ কর আদায় হয়েছে। গত জুলাই–ডিসেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্রমণ কর আদায় করেছে ৯২২ কোটি টাকা।
এনবিআর–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতীয় পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভারত ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। তবে যাঁদের আগে ভিসা নেওয়া আছে, তাঁরা যেতে পারছেন। সার্বিকভাবে সড়কপথে ভারতে পর্যটক যাওয়া কমেছে। আকাশপথেও কলকাতা ও চেন্নাইয়ের ফ্লাইট কমিয়েছে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো। এ ছাড়া সার্বিকভাবে অর্থনীতি কিছুটা চাপে থাকায় এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে–বিদেশে ভ্রমণ কমে গেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৯২২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ৩৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ভিসা প্রদানে কঠোর নীতি অবলম্বন করায় ভারতে যাত্রী গমন কমেছে। তাই ভ্রমণ করে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ডিসেম্বর মাসে ভ্রমণপ্রেমীরা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে যান। কিন্তু গত ডিসেম্বরে ভ্রমণ করের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ডিসেম্বর মাসে ২২৮ কোটি টাকার ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১৩১ কোটি টাকা।
আকাশপথ থেকে মূলত বেশি ভ্রমণ কর আদায় হয়। বিমান টিকিট বিক্রির সময় বিমান সংস্থাগুলো এই ভ্রমণ করের টাকা কেটে রাখে। বিভিন্ন এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী না পাওয়ায় ভারতে ফ্লাইট কমিয়েছে তারা। গত আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারতের পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় ফ্লাইট সংখ্যা কমানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ ভারতের কলকাতা ও চেন্নাই পথে তাদের উড্ডয়ন বা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়েছে। বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলা আগে সপ্তাহে কলকাতা ও চেন্নাইয়ে ৩২টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এখন তা কমিয়ে ৯টিতে নামিয়ে এনেছে।
এ বিষয়ে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভিসা জটিলতার কারণে ভারতে ভ্রমণ কমে গেছে। তাই এয়ারলাইনস–শিল্পকে রক্ষার করতে এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভারতে পর্যটক ভিসা চালু ও চিকিৎসা ভিসা সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের।
এদিকে গত জানুয়ারি মাসে ভ্রমণ কর বা আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তাতে অভ্যন্তরীণ পথে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশের বাইরে (এশিয়ার মধ্যে) ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকা ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি
রিচি সোলায়মান। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখন অনেকটাই আড়ালে। আজ বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’। এতে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান। এই গানচিত্র এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মীর সামী
আপনার অভিনীত গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’ নিয়ে কিছু বলুন?
‘বাবা শুনতে কি পাও’ শিরোনামের এই বিশেষ গানটি তৈরি করেছেন প্রান্তিক সুর। তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গজল ঘরানার শিল্পী শিরিন চৌধুরী। গানটির কথাও লিখেছেন শিল্পী নিজে। গানচিত্রে একটি সুন্দর সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিয়ের পর একটা মেয়ের স্বপ্ন যেন মরে না যায় এবং শুধু মানুষটাকে নয়, তার স্বপ্নকেও ভালোবাসার সংবেদনশীল এবং হৃদয়স্পর্শী বাবার অনুরোধের বার্তা থাকছে এতে। গানের কথার সূত্র ধরে গল্পনির্ভর ভিডিওটিতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত আর মেয়ের ভূমিকায় আমি। অনেকদিন পর হায়াত চাচার সঙ্গে কাজ করলাম।
এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
কিছুদিন আগে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী আমায় গানচিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য বললেন। যখন শুনলাম এই গানে বাবার ভূমিকায় অভিনয় কবেন আবুল হায়াত চাচা; ঠিক তখনই রাজি হয়েছি। কারণ, আমি হায়াত চাচার পরিচালনায় অনেক নাটকে তাঁর মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। তাই ভাবলাম বাবা দিবসের এই কাজটি আমাদের আরও একটি ডকুমেন্টেশন হয়ে থাক। আমাদের এই কাজে একজন মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে বাবাকে ঘিরে তার স্মৃতি, ভালোবাসা আর না বলা কথাগুলো উঠে এসেছে। কাজটি করার সময় আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। একজন বাবার অবদান যে কত বিশাল, সেটি অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না–এই গানচিত্রে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে।
আপনাকে এখন টিভি নাটকে খুব কম দেখা যায়। ইচ্ছা করেই দূরে সরে আছেন?
আমি এখন পরিবার আর নিজের সময়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। পাশাপাশি কাজের মানের প্রতিও সবসময় সংবেদনশীল ছিলাম। নাটকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কখনও বিশ্বাসী ছিলাম না। এখন তো অনেক সময় দেখা যায় গল্প বা চরিত্রের গভীরতা কম, কাজগুলো অনেকটাই ‘কনটেন্ট ভিউ’ নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই, যখন কাজ করি, সেটি যেন দর্শকের মনে থাকে। তাই শুরু থেকে এখনও বেছে বেছেই কাজ করছি।
এখন নাটকে ‘ভিউ’ ও ‘ট্রেন্ড’ অনুসারে শিল্পী নির্বাচন হয় বলে অভিযোগ আছে...
এটি ঠিক যে এখন ‘ভিউ’ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হলো– দীর্ঘ মেয়াদে এই দর্শক আসলে কাদের মনে রাখে? আমার মনে হয়, একটি শিল্পমাধ্যমে যখন কেবল সংখ্যা দিয়ে শিল্পী বা কাজের মান বিচার হয়, তখন সেখানে অন্তর্নিহিত শিল্পবোধ অনেকটা হারিয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি অভিনেতা বা অভিনেত্রী হিসেবে আমাদের প্রথম দায় নিজের চরিত্রের প্রতি। ‘ভিউ’ দিয়ে নয়, শিল্পের গভীরতা দিয়ে একজন শিল্পীকে বিচার করা উচিত।
বর্তমান সময়ে ওটিটি মাধ্যমের প্রসারে নাটকের গুণগত মানে কী প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন?
ওটিটি একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। নতুন গল্প আর নতুন নির্মাতাদের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখানেও একটি সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। যারা আগে টিভিতে প্রভাবশালী ছিলেন, এখন তারা ওটিটিতেও আধিপত্য রাখছেন। এটি শিল্পের জন্য মোটেই ভালো নয়। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিল্পী সুযোগ পাচ্ছেন না। আমি বলব, ওটিটি হোক কিংবা টিভি–প্রতিভা ও গল্পকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত, ‘চেনা মুখ’ বা ‘সেলিব্রেটি প্যাকেজ’কে নয়।
যে সিন্ডিকেটের কথা বললেন, তা কী ভাঙা যায় না?
অবশ্যই যায়। যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন, তারাই এখন সেই দলের হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমি যখন নিয়মিত কাজ করেছি, সেই সময় কিন্তু সবাই যার যার যোগ্যতা দিয়ে কাজ করেছেন। এখন পরিচয়ের ভিত্তিতে হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের নাট্যাঙ্গনের শিল্পটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ওটিটির কাজে আগ্রহ অনুভব করেন?
অবশ্যই। যদি ভালো গল্প আর শক্তিশালী চরিত্র পাই, আমি ওটিটিতেও কাজ করতে চাই। অশ্লীলতা বা অহেতুক সাহসী দৃশ্যের নামে যদি গল্পের গুরুত্ব হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি আমাকে টানে না। শিল্পমান থাকলেই আমি আগ্রহী।
বর্তমান প্রজন্মের নতুন অভিনেত্রীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
নতুনদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালো করছেন। আমি তাদের একটা কথাই বলি, নিজেকে সময় দিন, নিজেকে গড়ুন। রাতারাতি তারকা হওয়া যায়। দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন। টিকে থাকার জন্য শুধু সৌন্দর্য নয়, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও আত্মসমালোচনাও জরুরি।