ঈশ্বরদী বাজারে ছোট্ট একটি দোকান মাহমুদুর রহমান জুয়েলের। পাশাপাশি অল্প কিছু গোলাপ ফুল বিক্রি শুরু করেন। চাহিদা বাড়তে থাকলে ব্যবসার পরিসর বাড়ান। এক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের আবাদ শুরু করেন। সফলতার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা পড়েছে তাঁর আসল নাম। এলাকার লোকজন এখন তাঁকে ‘ফুল জুয়েল’ নামেই ডাকেন।
ফুল জুয়েল নামের সঙ্গে বদলে গেছে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া গ্রামের চিত্র। অর্ধশত বিড়ি শ্রমিক কাজ ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তাঁর বাগানে। বদলে গেছে তাদের জীবনযাপনের ধরন। বিড়ির কারখানায় কাজ করায় আগে ঘন ঘন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন। এখন আর অসুস্থ হন না। মনের আনন্দে ফুল বাগানে ফুল ফোটানোর কাজ করছেন। কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত, কেউবা ফুল তুলছেন। মালা গেঁথে সাজিয়ে রাখার কাজে ব্যস্ত অনেকে।
বাগানেই কথা হয় জুয়েলের সঙ্গে। বললেন, যশোরের গদা খালী এলাকায় ফুল চাষের ব্যাপকতা দেখে ভাবি, ওরা পারলে আমি কেন পারব না। সেই থেকে শুরু। ফুলের ব্যবসা করতে এসে অনেকের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভালোবেসে যখন কেউ ফুল জুয়েল বলে ডাকে, তখন মনটা ভরে যায়।
পাশেই কাজ করছিলেন শ্রমিক মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। লেখাপড়া করিনি। না বুঝে বিড়ি বাঁধার কাজ করেছি। সারাদিনে ১৫ থেকে ২০ টাকা পেতাম। এখন জুয়েল ভাইয়ের বাগানে ফুল তুলে বাড়িতে বসে মালা গাঁথি। সংসারের অন্য কাজ করেও ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
শ্রমিক মালা খাতুন ও শেফালী খাতুন জানান, বিড়ি কারখানায় কাজ করার সময় অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত। এখন ফুল নিয়ে ব্যস্ত থাকি, আয়ও হয় বেশি, শরিরেও কোনো রোগ নেই। তাদের মতো ঘরে বসে মালা গেঁথে সংসারের জন্য বাড়তি আয় করছেন বীথি খাতুন। তিনি বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এখন ফুলের মালা গেঁথে আয় করছি। এতে স্বামী খুশি হয়, আমারও ভালো লাগে।
যেভাবে ফুলের ব্যবসা শুরু
সময়টা ছিল ২০০২ সাল। ঈশ্বরদী বাজারের রিকশা সমিতির মার্কেটে ছোট্ট একটি দোকান ছিল জুয়েলের। চা, বিস্কুট, শরবতের পাশাপাশি গোলাপ ফুল বিক্রি করতেন। স্থানীয়ভাবে ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন দিবসে। বিক্রিবাট্টা ভালোই হতো। দিনে দিনে চাহিদা বাড়তে থাকে। যশোরের গদা খালী থেকে ফুল আনতে গেলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল আবাদের চিন্তা মাথায় আসে। সেই থেকে শুরু ফুলের সঙ্গে তাঁর পথচলা।
২০১২ সালে গ্রামের ঝোপজঙ্গলে ভরা ১০ কাঠা জমি পরিষ্কার করে ফুলের আবাদ শুরু। এখন ১২ বিঘা জমিতে গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলী, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, চেরি, রক্তগাঁদাসহ হরেক রকম ফুলের সমাহার। এলাকার পরিবেশ পাল্টে গেছে। বাগান ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ জন নারী-পুরুষের। একজন ম্যানেজার রয়েছেন। ১২ বিঘা জমিতে ফুল আবাদ হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমির বার্ষিক খাজনা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। শ্রমিকের মজুরিসহ সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। বছরে প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা আয় হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আক্কেলপুরের পেট্রলপাম্প থেকে চুরি যাওয়া ট্রাক পাওয়া গেল জয়পুরহাট শহরে
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের একটি পেট্রলপাম্প থেকে চুরি হওয়ার এক দিন পর পরিত্যক্ত অবস্থায় ট্রাকটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জয়পুরহাট শহরের বাস টার্মিনাল–সংলগ্ন একটি পেট্রলপাম্পের সামনের সড়ক থেকে এটি উদ্ধার করা হয়।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে আক্কেলপুরে পৌর শহরের চার মাথা মোড়ের একটি পেট্রলপাম্প থেকে ট্রাকটি চুরি হয়। পরে গতকাল বুধবার বিষয়টি টের পান মালিক।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুরের ওই পেট্রলপাম্পে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক ও বাস রাখেন চালকেরা। গত মঙ্গলবার রাতে মেসার্স রেখা পরিবহন নামের একটি ট্রাক সেখানে রাখেন চালক হাসান আলী। গতকাল সকালে তিনি দেখেন, ট্রাকটি আর সেখানে নেই। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ট্রাকটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি।
এ ঘটনায় ট্রাকটির মালিক মশিউর রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। আজ সকালে জয়পুরহাট শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় উদয় পেট্রলপাম্পের সামনের সড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় ওই ট্রাক দেখতে পাওয়া যায়। মালিক সেখানে গিয়ে ট্রাকটি শনাক্ত করলে আক্কেলপুর থানা-পুলিশ সেটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
মশিউর রহমান বলেন, ‘কে বা কারা আমার চুরি হওয়া ট্রাকটি জয়পুরহাট শহরের উদয় পেট্রলপাম্পের সামনে ফেলে রেখে চলে গেছে। পুলিশ গিয়ে ট্রাকটি নিয়ে গেছে।’