পেরেক-গাঁথা কাঠ দিয়ে পেটানো হয় দুজনকে
Published: 1st, March 2025 GMT
অস্ত্রের মুখে দুজনকে অপহরণের পর নিয়ে যাওয়া হয় গহিন পাহাড়ে। এরপর সেখানে তাঁদের পেরেক-গাঁথা কাঠ দিয়ে পেটানো হয়। অপহরণকারীরা সেই নির্যাতনের ভিডিও আবার পাঠিয়েছেন অপহৃতদের পরিবারের কাছে। কক্সবাজারের টেকনাফে ঘটেছে এমন ঘটনা।
নির্যাতনের শিকার দুজনের নাম আহমদ উল্লাহ (৪৮) ও জসিম উদ্দিন (১৮)। গতকাল শুক্রবার বিকেলে দুজন অপহরণকারীদের কাছ থেকে ছাড়া পান। তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরার পাহাড়ি এলাকা থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়। দুজন ওই এলাকারই বাসিন্দা।
ওই দুই ব্যক্তি অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, মুক্তিপণ আদায় করার বিষয়ে তাঁরা অবহিত নন।
ভুক্তভোগী আহমদ উল্লাহ প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, পাহাড়ে গরু চরাতে গিয়ে তাঁরা দুজন অপহরণের শিকার হন। অপহরণকারীরা চার দিন তাঁদের পানি ছাড়া কিছুই খেতে দেননি। দফায় দফায় তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুজন অপহৃত হওয়ার পর গত বুধবার তাঁদের স্বজনদের কাছে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে দুজনকে ছাড়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আহমদ উল্লাহর স্বজনেরা ৬ লাখ টাকা দেন। জসিম উদ্দিনের স্বজনেরা ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেন। তবে মুক্তিপণের টাকা কোথায়, কীভাবে দেওয়া হয়েছে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য স্বজনেরা জানাননি।
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, মুক্তিপণ আদায়ের পর অপহৃত দুজনকে জাহাজপুরার পাহাড়ি এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁদের সারা শরীরে নির্যাতনের জখম ছিল। পরিবারের সদস্যরা তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যান।
জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়ে পুলিশ অবহিত নয়। তবে অপহৃত দুই কৃষকের ফিরে আসার কথা স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে শুনেছেন। ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপহরণক র পর ব র র ন অপহ দ জনক অপহ ত
এছাড়াও পড়ুন:
নৌকা বানিয়ে বছরে আয় ৫ লাখ
বর্ষা মৌসুম আসার আগেই গ্রামে গ্রামে চোখে পড়ত নৌকা তৈরি কিংবা মেরামতের কাজ। সেই ভেজা বা শুকনো কাঠ, তারপিন আর আলকাতরার গন্ধে ভরা ঘাটপাড় এখন আর নেই। এর মাঝেও অনেকে ধরে রেখেছেন নৌকা তৈরির এই পেশা।
বিয়ানীবাজারের নৌকার অনেক কারিগর পেশা বদলে কেউ কাঠমিস্ত্রী হয়েছেন, কেউ চালাচ্ছেন অটোরিকশা। অনেকে ছোটখাটো ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। এর মাঝে ব্যতিক্রম দুবাগ ইউনিয়নের মইয়াখালী গ্রামের আলতাফ হোসেন আতা। চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি পারিবারিক এই পেশা ধরে রেখেছেন। এ থেকে বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হয় তার।
আলতাফ হোসেন আতা জানান, দাদার কাছ থেকে নৌকা তৈরির কলাকৌশল আয়ত্ত করেন তাঁর বাবা প্রয়াত কুতুব উদ্দিন। তিনি ১২ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে দীক্ষা নেন। আয় রোজগার ভালো হওয়ায় ছেলেকেও শিখিয়েছেন নৌকা তৈরির কারিগরি।
আলতাফ হোসেন আতার ছেলে পারভেজ আহমদ এখন বাবাকে নৌকা তৈরিতে সহযোগিতা করছেন। আতা বলেন, এক যুগ আগেও নৌকার চাহিদা খুব কম ছিল। বহু এলাকায় কৃষিকাজে মানুষের অনীহা, গবাদিপশু লালন-পালন ছেড়ে দেওয়ায় নৌকা তৈরি হতো হাতেগোনা। এ সময়ে সংসার চালাতে হতো খুব কষ্টে। বহুবার এই পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেও পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা ভেবে সম্ভব হয়নি। আতা জানান, ৭ থেকে ৮ বছর আগে থেকে একটু করে দিন ফিরতে শুরু করে নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে। মানুষজন চাষাবাদ ও গবাদিপশু লালন-পালনে মনোযোগী হওয়ায় নৌকার চাহিদা বাড়তে থাকে। এখন বছরে ৪০টির মতো নতুন নৌকা তৈরি করেন তিনি। এ ছাড়া ২০ থেকে ২৫টি পুরাতন নৌকা মেরামত করতে হয়। বলতে গেলে সারা বছরই থাকে ব্যস্ততা।
আলতাফ হোসেন আতা ১৬ হাত লম্বা নৌকা তৈরিতে প্রতি হাতের মজুরি নেন এক হাজার ১০০ টাকা। বিশ হাতের ওপরে হলে মজুরি আরও বেশি। অর্ডার এলে কাঠসহ মজুরি মিলিয়ে একেকটি ১৬ হাত লম্বা নৌকা তৈরি করে দেন ৩৫ হাজার টাকায়।
নৌকা তৈরির এই কারিগর জানান, এখন জারুল গাছ নেই। তাই জারুল গাছের নৌকার চাহিদা থাকলেও সেটি পূরণ করা যায় না। গাছটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেজন্য জারুল গাছের বিকল্প হিসেবে কেউ কেউ রেইনট্রি ব্যবহার করেন।
মইয়াখালী এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি রস্তুম আলী গ্রামের পথ দেখিয়ে বলেন, ২০০৫ সালে এ রাস্তা তৈরি হয়েছে। এর আগে গ্রামের বাজারে বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া যাওয়া যেতো না। এখন বাড়িতে অটোরিকশা আসে। নৌকার প্রয়োজন পড়ে না। আতা দীর্ঘদিন ধরে নৌকা তৈরির কাজ না পেয়ে খুব কষ্টে ছিল। এখন তার ভাগ্য পাল্টে গেছে।
একই গ্রামের বদরুল ইসলাম বলেন, বড়লেখার হাকালুকি হাওর এলাকা থেকে নৌকা তৈরি করতে আতার কাছে মানুষ আসে। শুধু বিয়ানীবাজার নয়, তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বড়লেখা, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায়ও।
আলতাফ হোসেন আতা বলেন, বাবা-দাদার পেশা ধরে রাখতে পারায় টাকাও রোজগার করছেন, পরিচিতিও ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বছরে একবার হলেও এক মাসের জন্য বড়লেখার হাকালুকি এলাকায় যেতে হয় নৌকা মেরামতের জন্য। তাঁর ইচ্ছা পেশাটি যেন তার ছেলে ধরে রাখেন।
এ সময় পাশে থাকা পারভেজ আহমদ বলেন, এখন পাঁচ গ্রাম ঘুরে নৌকার কারিগর পাওয়া যায় না। বাবার কাজের চাপ বেশি। তাই তিনি তাঁকে সহযোগিতা করতে করতে তাঁর মতো করে নৌকা তৈরি শিখছেন।