আতিউর-বারকাতসহ ২৩ জনের দেশ ছাড়তে নিষেধাজ্ঞা
Published: 7th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নিষেধাজ্ঞায় থাকা অন্যরা হলেন– বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ ও নিতাই চন্দ্র নাথ।
এ ছাড়া রয়েছেন জনতা ব্যাংকের এমডি ও সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক গোলাম আজম, ব্যাংকের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান, এসইও এমদাদুল হক, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার, সাবেক ডিএমডি গোলাম ফারুক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইউনুছ বাদল, সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক আবু তালহা।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম জানান, কমিশনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আসামিরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। ব্যাংকে বন্ধক রাখা জমিতে কোনো ভবন, কারখানা বা স্থাপনা নেই। অথচ, স্থাপনা দেখিয়ে অতিমূল্যায়ন করে ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করেন। এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুদক বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
সাবেক মেয়র লিটনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার, দুই কন্যা আনিকা ফারিহা জামান ও মায়সা সামিহা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো.
নাসা গ্রুপের নজরুলের বাড়ি-প্লট জব্দ
নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারের ছয়টি বাড়ি ও পূর্বাচলের আটটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর ৫৫ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একই আদালত গতকাল এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
জব্দ হওয়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে গুলশান মডেল টাউন আবাসিক এলাকার ৪৭ নম্বর প্লট ও ১৪ তলা ভবন। এর বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকা। গুলশান মডেল টাউন আবাসিক এলাকার এসই (ডি) ব্লকের ৩ নম্বর প্লট ও ১৪তলা ভবন। এর বাজার মূল্য ৭০ কোটি টাকা।
মহাখালীতে চার কোটি টাকা মূল্যের দুই তলা বাড়ি, একই এলাকায় ৬ কোটি টাকা মূল্যের চারতলা বাড়ি, মহাখালীতে আরেকটি ৪ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি এবং তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের তিনতলা ভবন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ভুল তথ্য ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ সময়ে যাচাই করা ভুল তথ্যের ৪৫ শতাংশই ছিল রাজনৈতিক। গতকাল বুধবার তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছিল ১ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তা বেড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সংখ্যার হিসাবে গত প্রান্তিকে এ ধরনের ভুল তথ্য ছিল মাত্র ১১টি। সেটি এ বছরের প্রথম তিন মাসে সাত গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭টিতে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট আটটি ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পেয়েছে ডিসমিসল্যাব।
সংস্থাটির গবেষণায় দেখা গেছে, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ হাজার ২৩৬টি তথ্য যাচাইয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ভুল তথ্য পাওয়া গেছে ৮৬৭টি, যা আগের প্রান্তিকে রেকর্ড করা ৮১৬টির তুলনায় কিছুটা বেশি। ভুল তথ্যের প্রায় অর্ধেকই (৪৫ শতাংশ) রাজনীতি সম্পর্কিত ছিল। এর পর ছিল ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্য (১৩ শতাংশ), যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় সামান্য কম।
অপরাধ-সম্পর্কিত ভুল তথ্য বেড়েছে
বছরের প্রথম তিন মাসে প্রচারিত খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই ও ডাকাতি-সংক্রান্ত খবর ছিল ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ছিল ভারতের, যা বাংলাদেশের বলে ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে একটি ইউটিউব চ্যানেলে হোটেল থেকে লাফিয়ে পড়া এক ভিডিও প্রচার করে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হয়, কিন্তু সেটি ছিল মূলত ইন্দোনেশিয়ার।
রাজনৈতিক ভুল তথ্য
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যাচাই করা ভুল তথ্যের ৪৫ শতাংশই রাজনৈতিক। আগের বছরও রাজনীতি-সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ (৩৪.৮ শতাংশ) ও অন্তর্বর্তী সরকারকে (২১.৮ শতাংশ) নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। তবে আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে প্রচারিত ভুল তথ্যগুলোর অধিকাংশই (৬৮ শতাংশ) ছিল ইতিবাচক। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও সমন্বয়কদের নিয়ে ছড়ানো অধিকাংশ ভুল তথ্য ছিল নেতিবাচক।
ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্য
ধর্ম-সম্পর্কিত ভুল তথ্যের সংখ্যা সর্বশেষ প্রান্তিকে কিছুটা কমেছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্যের পরিমাণ ছিল মোট যাচাইকৃত ভুল তথ্যের ১৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। তবে এর ধরন ছিল একই রকমের। যেমন, পুরোনো বা সম্পাদিত ছবি-ভিডিও সাম্প্রতিক বলে প্রচার করা।
বেড়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্য
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্যের পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে। ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ২৭টি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন। সেখানে এ বছরের প্রথম তিন মাসে এই সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪টিতে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব ভুল তথ্যের ২৪ শতাংশ ছিল রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট।