রোদে পুড়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমেনারা জানলেন পণ্য দেওয়া হবে না
Published: 11th, March 2025 GMT
কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শতাধিক নারী–পুরুষের জটলা। অধিকাংশের বয়স ৪০–এর বেশি। কারও কারও ৭০ থেকে ৮০। প্রচণ্ড রোদ। খোলা স্থানে দাঁড়াতে না পেরে কেউ ব্যাগ দিয়ে, কেউ ইট রেখে সিরিয়াল দিয়েছেন। অপেক্ষা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের ট্রাকের।
নিম্নআয়ের এই মানুষেরা কেউ এসেছেন সকাল ছয়টায়, কেউবা সকাল আটটায় কিংবা ৯টায়। হঠাৎ বেলা সোয়া ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুই কর্মচারী দোতলা থেকে হাঁক ছাড়লেন, আজ মঙ্গলবার কালেক্টরেট চত্বরে টিসিবির ট্রাক আসবে না। এতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন কেউ কেউ। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, তাহলে তাঁরা কোথায় যাবেন?
এ সময় কয়েকজন নারী–পুরুষের সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানালেন, গত দুই দিন এখানে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনেছেন। আজ (সোমবার) আবার পণ্য নিতে আসেন। তাঁদের কেউ আগের দিন নিয়েছেন। কেউবা গতকাল না পেয়ে ফিরে গেছেন। আজ নতুন অনেকেই পণ্য নিতে এসেছেন।
শহরের কুমারগাড়া এলাকার বাসিন্দা আমেনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সকাল থিকিই আসিলাম। কিন্তু পাইনি। ভিড়ের কারণে নিতে পারিনি। ভিড়ের ভেতর থিকি বাইর করি দেয়। আজ সকাল সাতটায় থিই আসিছি। এখন শুনছি, দেবে না।’
কয়েকজন জানালেন, তাঁরা সকাল ছয়টার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আসেন। রোদের কারণে ব্যাগগুলো সারিবদ্ধভাবে রেখে আশপাশে ছায়ায় বসে ছিলেন। হঠাৎ বেলা ১১টার কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন, পণ্য দেওয়া হবে না। এতে তাঁরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। একজন দোতলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাজিরের কক্ষে যান। সেখান থেকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। তাতে লেখা আছে, মঙ্গলবার শহরের পাঁচটি পয়েন্টে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। তবে তালিকায় কালেক্টরেট চত্বর নেই। পরে এক নারী সেটা জোরে জোরে পড়েন। এটা শোনার পর সবার মধ্যে হতাশা ও বিরক্তির ভাব দেখা গেল।
৭৮ বছর বয়সী চতুর আলী বলেন, ‘ম্যালা সময় আগে আইছিলাম। সোয়া ৯টার দিক হবে। এখন শুনছি, দেবে না। আগে এক দিন নিছি। সকাল থিকিই জানিনে দেবে না। আগে জানলি থাকতাম না।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ষাটোর্ধ্ব শাহাদত হোসেন বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক আগে আসছি। উপরি থিকি কইলি যে মতি মিয়া রেলগেট (এক কিলোমিটার দূরে) এলাকায় যাতি। এখেনে দেবে না।’ চৌড়হাস এলাকার তাহের আলী বলেন, তিনি আগে কাজ করতে পারতেন। এখন আর পারেন না। আজ সকাল থেকে বসে ছিলেন। এখন জানছেন, দেবে না। কী করবেন, তা বুঝতে পারছেন না।
টিসিবির পণ্য বিক্রির অফিস আদেশের কপিতে স্বাক্ষর করেছেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম। কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১০ মার্চ। যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ শহরের পাঁচটি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি করা হবে। তার মধ্যে কালেক্টরেট চত্বর নেই। বিষয়টি সকালেই জানানোর কথা বলে তিনি জানান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।
চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
ঢাকা/এমআর/রফিক