কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শতাধিক নারী–পুরুষের জটলা। অধিকাংশের বয়স ৪০–এর বেশি। কারও কারও ৭০ থেকে ৮০। প্রচণ্ড রোদ। খোলা স্থানে দাঁড়াতে না পেরে কেউ ব্যাগ দিয়ে, কেউ ইট রেখে সিরিয়াল দিয়েছেন। অপেক্ষা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের ট্রাকের।

নিম্নআয়ের এই মানুষেরা কেউ এসেছেন সকাল ছয়টায়, কেউবা সকাল আটটায় কিংবা ৯টায়। হঠাৎ বেলা সোয়া ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুই কর্মচারী দোতলা থেকে হাঁক ছাড়লেন, আজ মঙ্গলবার কালেক্টরেট চত্বরে টিসিবির ট্রাক আসবে না। এতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন কেউ কেউ। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, তাহলে তাঁরা কোথায় যাবেন?

এ সময় কয়েকজন নারী–পুরুষের সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানালেন, গত দুই দিন এখানে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনেছেন। আজ (সোমবার) আবার পণ্য নিতে আসেন। তাঁদের কেউ আগের দিন নিয়েছেন। কেউবা গতকাল না পেয়ে ফিরে গেছেন। আজ নতুন অনেকেই পণ্য নিতে এসেছেন।

শহরের কুমারগাড়া এলাকার বাসিন্দা আমেনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সকাল থিকিই আসিলাম। কিন্তু পাইনি। ভিড়ের কারণে নিতে পারিনি। ভিড়ের ভেতর থিকি বাইর করি দেয়। আজ সকাল সাতটায় থিই আসিছি। এখন শুনছি, দেবে না।’

কয়েকজন জানালেন, তাঁরা সকাল ছয়টার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আসেন। রোদের কারণে ব্যাগগুলো সারিবদ্ধভাবে রেখে আশপাশে ছায়ায় বসে ছিলেন। হঠাৎ বেলা ১১টার কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন, পণ্য দেওয়া হবে না। এতে তাঁরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। একজন দোতলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাজিরের কক্ষে যান। সেখান থেকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। তাতে লেখা আছে, মঙ্গলবার শহরের পাঁচটি পয়েন্টে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। তবে তালিকায় কালেক্টরেট চত্বর নেই। পরে এক নারী সেটা জোরে জোরে পড়েন। এটা শোনার পর সবার মধ্যে হতাশা ও বিরক্তির ভাব দেখা গেল।

৭৮ বছর বয়সী চতুর আলী বলেন, ‘ম্যালা সময় আগে আইছিলাম। সোয়া ৯টার দিক হবে। এখন শুনছি, দেবে না। আগে এক দিন নিছি। সকাল থিকিই জানিনে দেবে না। আগে জানলি থাকতাম না।’

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ষাটোর্ধ্ব শাহাদত হোসেন বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক আগে আসছি। উপরি থিকি কইলি যে মতি মিয়া রেলগেট (এক কিলোমিটার দূরে) এলাকায় যাতি। এখেনে দেবে না।’ চৌড়হাস এলাকার তাহের আলী বলেন, তিনি আগে কাজ করতে পারতেন। এখন আর পারেন না। আজ সকাল থেকে বসে ছিলেন। এখন জানছেন, দেবে না। কী করবেন, তা বুঝতে পারছেন না।

টিসিবির পণ্য বিক্রির অফিস আদেশের কপিতে স্বাক্ষর করেছেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম। কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১০ মার্চ। যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ শহরের পাঁচটি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি করা হবে। তার মধ্যে কালেক্টরেট চত্বর নেই। বিষয়টি সকালেই জানানোর কথা বলে তিনি জানান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় বিকেলে বৈঠকে বসছে কমিটি

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ পর্যালোচনায় আজ সোমবার বিকেল ৪টায় বৈঠকে বসছে এ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আজ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ  কথা বলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজ বিকেল ৪টায় মিটিংয়ে বসছি। সেখানে তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করব। আমরা সুপারিশগুলো উপদেষ্টা পরিষদে তুলব। সরকারি কর্মচারী ভাইদের বলব, সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত না ঘটে। আমাদের সিদ্ধান্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ পুনরায় বিবেচনার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। অবশ্যই এটা পুনরায় বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। সরকারি কর্মচারীরা বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন এমন কিছু করা হবে না। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

গত ৪ জুন এ অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ