কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের জিলাপিতলা-সংলগ্ন গড়াই নদীর চর থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ নিয়ে এক বিএনপি নেতা ও ইজারাদার কর্তৃপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইজারাদারের লোকজনের অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজাহান আলী মোল্লা ও তাঁর সমর্থকরা ইজারা নেওয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ টাকার মাটি ও বালু কেটে নিচ্ছেন। ছয় দিন ধরে এভাবে মাটি-বালু লুট করছেন তারা।
ইজারাদারের অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতা সাজাহান ও তাঁর সমর্থকরা। তারা বলছেন, গড়াই নদীপারে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ফসলাদি চাষ হতো। ইজারাদার মাসুদ রানা আওয়ামী লীগের সমর্থক। দীর্ঘদিন ধরে চর ইজারা নেওয়ার নাম করে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে মাটি ও বালু কেটে নিয়েছেন। তবে এখন ক্ষমতা বদল হওয়ায় নিজেদের জমি চাষাবাদের উপযোগী করার জন্য নিজেরাই মাটি ও বালু অপসারণ করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর মূলগ্রাম, হিজলাকর, এনায়েতপুর ও গোবিন্দপুর মৌজার বালুমহাল এক বছরের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা। প্রায় ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা মূল্যের ঘাটের ইজারার মেয়াদ চলতি বছর ১৩ এপ্রিল শেষ হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জিলাপিতলা-সংলগ্ন গড়াই নদীতে গিয়ে দেখা যায়, নদীর চরে কলা, গম, মসুরসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়েছে। সেখান থেকে ভেকু দিয়ে বালু ও মাটি কেটে ট্রাকসহ নানা যানবাহনে করে বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে একটি অস্থায়ী ঘর করে রসিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করছেন ইজারাদারের লোকজন। নদীপারের কলা বাগানের ভেতরে তাঁবু টাঙিয়ে বসে টাকা তুলছেন বিএনপি নেতা সাজাহানের সমর্থকরা।
এ সময় ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক এনামুল হক বলেন, ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য চর ইজারা নিয়েছেন। মেয়াদ
শেষ হবে ১৩ এপ্রিল। অথচ ছয় দিন ধরে বিএনপি নেতা সাজাহান আলীর নেতৃত্বে ইজারা নেওয়া ঘাট থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার মাটি ও বালু লুট করা হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তিনি অবৈধভাবে বালু ও মাটি কাটা বন্ধের দাবি জানান।
গড়াই নদীর কূল থেকে মাটি ও বালু কাটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজাহান আলী মোল্লা। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জিলাপিতলা এলাকায় তাদের কয়েক পুরুষের অন্তত ৮৫-৯০ বিঘা জমি আছে। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ইজারাদার মাসুদ তাদের জমি থেকে এতদিন মাটি ও বালু কেটে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করার লক্ষ্যে এখন মাটি ও বালু অপসারণ করে ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে কোনো অন্যায় কাজ করা হচ্ছে না।
কুমারখালীর ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, মৌখিকভাবে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বিষয়টি জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দখল ইজ র দ র র ইজ র র জন য উপজ ল করছ ন র সমর ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।