পবিত্র রমজান শুধু ব্যক্তিগত পরিশুদ্ধি ও উন্নতির মাস নয়, বরং এটি পুরো সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার মাস। এজন্য কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু আমলের কথা বলা হয়েছে যেগুলো পুরো সমাজকেই পরিশুদ্ধ করে আদর্শ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। এমন কয়েকটি আমলের বর্ণনা তুলে ধরা হলো:
অন্যায় ও অপরাধের প্রতিবাদ করা : অন্যায়ের প্রতিবাদ করা এবং ভালো কাজে সহযোগিতা করা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হাদিসে এসেছে, রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা শয়তানকে বন্দি রাখেন। এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ চান বান্দা রমজান মাসে পাপ, পাপাচার, অন্যায় ও অপরাধ থেকে দূরে থাকুক। সুতরাং কেউ যদি রমজান কোনো অন্যায় করে তার প্রতিবাদ করা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে, এই প্রতিবাদ যেন রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলার পরিপন্থী না হয় এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণ না হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ করো। আর তোমরা আল্লাহে বিশ্বাস করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)
অন্যের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া : সমাজে অন্যায় ও অশান্তির একটি মৌলিক কারণ অন্যায়ভাবে মানুষের অধিকার হরণ করা। সুতরাং রমজান মাসে যদি আমরা এই প্রতিজ্ঞা করতে পারি যে, আমরা অন্যের অধিকার হরণ করব না। অতীতে কারো অধিকার হরণ করলে তা অবশ্যই ফিরিয়ে দেব, তাহলে তা সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। অন্যের অধিকার হরণের অর্থ শুধু টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করা নয়, বরং কারো মান-সম্মান নষ্ট করা এবং কারো মনে কষ্ট দেওয়াও অধিকার হরণের শামিল। নবী (সা.
আরো পড়ুন:
রমজানের শেষ দশকে যেসব আমল গুরুত্বপূর্ণ
রোজা থেকে রাগ নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা
পরনিন্দা ও বিবাদ পরিহার করা : পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা ও বিবাদ সামাজিক অপরাধগুলোর অন্যতম প্রধান উপলক্ষ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিক হাদিসে এসব মন্দ কাজ পরিহার করতে বলেছেন। নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং যখন তোমাদের কারো রোজার দিন হয়, তখন তার উচিত অশ্লীল কথা না বলা এবং হইচই না করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)
অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদার ব্যক্তিকে কেউ গালি দেয় বা মারামারির জন্য প্রস্তুত হয়, তবে সে যেন শুধু বলে, আমি রোজা আছি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫১)
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজার অবস্থায় মিথ্যা কথা বলা ও তার উপর আমল করা না ছাড়ে, তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কোনো প্রয়োজন নেই যে, এমন ব্যক্তি তার পানাহার ত্যাগ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৫৭)
আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করা : আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার একটি অন্ধকারতম দিক হলো আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রতি উদাসীনতা। বর্তমানে মানুষ আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করতেই পছন্দ করে। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা হলো আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করার। তাই মাহে রমজান হতে পারে আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করার মাস। হাদিসের বর্ণনা অনুসারে কদরের মহান রাতে আল্লাহ সবাইকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষদের ক্ষমা করেন না তারা হলো, ক. যে ব্যক্তি মদপানে অভ্যস্ত, খ. যে ব্যক্তি মা-বাবার অবাধ্য, গ. যে ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে, ঘ. যে ব্যক্তি অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং বিদ্বেষের কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করে। (শুআবুল ঈমান : ৫/২৭৭)
হারাম উপার্জন ত্যাগ করা : হারাম উপার্জন মানুষের ইবাদত ও দোয়াকে নিষ্ফল করে দেয়। অনেকে হারাম টাকায় হজ করেন, ওমরাহ করেন, মানুষকে সাহায্য করেন ও মসজিদ-মাদরাসায় দান করেন। তাদের এই দান আল্লাহর খাতায় নিষ্ফল। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র বস্তু ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলগণকে যা করার আদেশ করেছেন ঈমানদারগণকেও সে কাজই করার আদেশ করেছেন।’ অতঃপর আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু (হালাল) হতে ভক্ষণ করো, এবং নেক কাজ (আমলে সালিহ) করো।’ (আল্লাহ তাআলা) আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে আমি যেসব পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে দিয়েছি, তা থেকে আহার করো।’ অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির উল্লেখ করলেন, যে দূরদূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে তার চুলগুলো এলোমেলো ও ধূলি-ধূসরিত রুক্ষ হয়ে পড়েছে। সে আসমানের দিকে হাত উত্তোলন করে বলছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্য হারাম। এ অবস্থায় তিনি কেমন করে তার দোয়া কবুল করতে পারেন?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৯৩)
লোক দেখানো আমল থেকে বিরত থাকা : প্রদর্শন ও সুখ্যাতির আকাঙ্ক্ষা নেক আমলের সুফল ধ্বংস করে। রমজানে বহু মানুষকে দেখা যায়, তারা আয়োজন করে জাকাত দেন, ইফতার-সাহরি বিতরণ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেন এবং এগুলোর বহুল প্রচার কামনা করেন। খ্যাতির এই পিপাসা একটি সামাজিক ব্যধিও বটে। তাই মানুষের উচিত রমজানে যে নেক আমলগুলো করবে তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। আর সর্বপ্রকার প্রদর্শন ও প্রচার থেকে দূরে থাকা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শোনো! আল্লাহ তাআলা শুধু সেই কাজ কবুল করেন, যা শুধু তাঁর সন্তুষ্টি ও খুশি অর্জনের জন্য করা হয়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৩১৪০)
অন্য হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন নেক কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে, তখন আল্লাহ তাআলা লোক দেখানো ব্যক্তিদের বলবেন, ‘তোমরা তাদের কাছে যাও, যাদের খুশি করার জন্য এবং দেখানোর জন্য তোমরা দুনিয়ায় নেকি করতে, দেখো, তারা তোমাদের কোনো প্রতিদান দিতে পারে কি না?’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩৬৩০)
নিজেকে সংশোধন করা : মানুষ নিয়েই সমাজ গঠিত হয়। তাই মানুষের চরিত্র ঠিক না হলে কখনো আদর্শ সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। রোজা হলো সংযম ও সাধনার মাধ্যমে নিজের কুপ্রবৃত্তি দমনের হাতিয়ার। এ ছাড়াও খারাপ চরিত্র নেক আমলকে ধ্বংস নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই একজন মুমিন তার উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে রোজা রাখা ও রাতে নামাজ আদায়কারীর মতো মর্যাদা লাভ করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৯৮)
নবীজি (সা.) এই দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি খারাপ চরিত্র, খারাপ কাজ, খারাপ ইচ্ছা এবং প্রতিটি ছোট-বড় রোগ থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৯১)
আল্লাহ মাহে রমজানে আদর্শ সমাজ গঠনের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন আল ল হ ত আল ন আল ল হ ন ক আমল র জন য অন য য় বল ছ ন রমজ ন অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফিরিয়ে দাও’ থেকে ‘ধূসর সময়’: সিডনিতে একই মঞ্চে মাইলস ও আর্টসেল
সিডনির বসন্তের সন্ধ্যা। লিভারপুলের হুইটল্যাম লেজার সেন্টারের বাইরে তখন লম্বা লাইন—হাতে পতাকা, কাঁধে ব্যাগ, চোখে প্রত্যাশা। সাউন্ডচেকের শব্দ ভেসে আসছে বাইরে। ভেতরে যেন উন্মুখ এক ‘সাগর’, যেখানে মিশে আছে দুই প্রজন্মের মুখ, কণ্ঠ আর স্মৃতি। শনিবার রাতটি হয়ে উঠেছিল প্রবাসী বাঙালিদের জন্য এক ব্যতিক্রমী উৎসব—বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের দুই যুগের দুই প্রতীক, মাইলস ও আর্টসেল; প্রথমবারের মতো একই মঞ্চে গান করল সিডনিতে।
‘গ্রিনফিল্ড এন্টারটেইনমেন্ট’ আয়োজিত এই ‘মিউজিক ফেস্ট’ ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা যেন উপচে পড়ল সেই রাতে। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পরপরই সব শেষ। অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিম উপশহর লিভারপুলের রাস্তাগুলো ভরে গেল গানের ভক্তে।
আয়োজনের আগে ভিডিও বার্তায় মাইলস জানায় তাদের উচ্ছ্বাস। ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ বলেন, ‘সিডনি বরাবরই আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। সম্ভবত ১৯৯৬ সালে আমরাই প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় পারফর্ম করি। এরপর এ নিয়ে অন্তত পঞ্চমবারের মতো সিডনিতে এলাম। এখানকার দর্শকদের ভালোবাসা সব সময়ই অবিশ্বাস্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম এটি স্মরণীয় একটি আয়োজন হতে যাচ্ছে। আমরা চেয়েছি সবাই একসঙ্গে গাইবে, চিৎকার করবে—ভক্তরা সেটাই করেছেন।’ গিটারিস্ট তুজো যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি শহরে ট্যুর করছি, কিন্তু সিডনির আবহ একেবারেই আলাদা। দর্শকেরা আমাদের রাতটিকে স্মরণীয় করে দিয়েছেন।’
মঞ্চে আর্টসেল