বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ভয় না পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বাজেট এমনভাবে করা হবে, যাতে বেসরকারি খাত বিনিয়োগে উৎসাহী হয়।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে ভয় কাজ করছে। তাঁদের অনেকে মনে করছেন, এখন বিনিয়োগ করলে পরে তাঁদের সমস্যা হতে পারে। তাঁদের উদ্দেশে বলছি, বিনিয়োগ করুন, আপনারা তো আর সালমান এফ রহমান হতে পারবেন না।’ তারপরও তাঁদের মধ্যে সংশয় আছে বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা সভায় অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অর্থসচিব মো.

খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকসহ অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ইআরএফের সভাপতি দৌলত আক্তারের নেতৃত্বে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাধারণ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। দৌলত আক্তার ইআরএফের পক্ষ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনার জন্য ২৮টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আগেও বলেছি, আগামী বাজেট হবে বাস্তবমুখী বাজেট। বিরাট কোনো আশ্বাস দেব না, যা বাস্তবায়ন করা যাবে না। স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমন বাস্তবভিত্তিক প্রকল্প নেওয়া হবে। প্রকল্পগুলোতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের পরিমাণ হবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা।’

কোনো স্তম্ভ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হবে না জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এক বছরে যা যা করতে পারব, তার উল্লেখ থাকবে। পদচিহ্ন হিসেবে আরও কিছু বিষয় থাকবে, যা পরের সরকারের মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। আর বাজেট বক্তব্য থাকবে ৫০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠার। এতে কোনো বন্দনা করা হবে না।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা এবং ব্যবসাবান্ধব করা—এসব বিষয় বাজেট প্রণয়নে বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। নতুন নতুন হাসপাতাল করার বদলে বিভিন্ন হাসপাতাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ থাকবে বলেও জানান উপদেষ্টা। তিনি জানান, অপরাধসংক্রান্ত ঘটনা চিহ্নিত করতে একটি ফরেনসিক হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।

কর ব্যবস্থা যৌক্তিক করা হবে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সেবা পাই না, তাই কর দেব না—এ ধরনের কথা অনেকেই বলে থাকেন। সব দেশেই করের হার কিন্তু বেশি।’ তিনি বলেন, অর্থবছর শেষে জুলাই মাসে গিয়ে যেন ‘এটা হলো না কেন, ওটা হলো না কেন’ ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন সবাই—আগামী বাজেটটি তেমনভাবে করা হবে।

ইআরএফের যত প্রস্তাব

ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেছে ইআরএফ। সংগঠনটি বলেছে, একজন ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে মুনাফার ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর কাটা হয়। আবার ব্যাংকের জমা স্থিতির ভিত্তিতে কাটা হয় আবগারি শুল্ক। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে অগ্রাধিকার দেওয়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ চেইনে বিদ্যমান সিন্ডিকেট ভাঙা ও সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, দরিদ্রদের সুরক্ষা দিতে খোলাবাজার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার উপকারভোগী ও ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ করে ব্যয় করার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয় ইআরএফ।

ইআরএফ আরও বলেছে, দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের প্রতিটিতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মানসম্পন্ন একটি করে হাসপাতাল স্থাপন; ক্যানসারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা; পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, কারা পুলিশ, জেলার, বিচারকসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের ঝুঁকিভাতা প্রত্যাহার করা; সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি; রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া; পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইনসহ মিডিয়ার করহার কমিয়ে আনা; কর ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও জবাবদিহি থাকা; বেনামি ব্যাংকঋণ বন্ধে রিটার্ন জমা ও ঋণ নেওয়ার সময় ব্যাংকের কাছে দেওয়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য মিলিয়ে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।

আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।

অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।

এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।

জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে
  • বেশি ঋণ করে ‘গণি মিয়ার’ মতো সমস্যায় পড়তে চাই না: এনবিআর চেয়ারম্যান
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ