‘বিনিয়োগ করুন, আপনারা তো আর সালমান এফ রহমান হতে পারবেন না’
Published: 25th, March 2025 GMT
বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ভয় না পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বাজেট এমনভাবে করা হবে, যাতে বেসরকারি খাত বিনিয়োগে উৎসাহী হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে ভয় কাজ করছে। তাঁদের অনেকে মনে করছেন, এখন বিনিয়োগ করলে পরে তাঁদের সমস্যা হতে পারে। তাঁদের উদ্দেশে বলছি, বিনিয়োগ করুন, আপনারা তো আর সালমান এফ রহমান হতে পারবেন না।’ তারপরও তাঁদের মধ্যে সংশয় আছে বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক্-বাজেট আলোচনা সভায় অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অর্থসচিব মো.
ইআরএফের সভাপতি দৌলত আক্তারের নেতৃত্বে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাধারণ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। দৌলত আক্তার ইআরএফের পক্ষ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনার জন্য ২৮টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আগেও বলেছি, আগামী বাজেট হবে বাস্তবমুখী বাজেট। বিরাট কোনো আশ্বাস দেব না, যা বাস্তবায়ন করা যাবে না। স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমন বাস্তবভিত্তিক প্রকল্প নেওয়া হবে। প্রকল্পগুলোতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের পরিমাণ হবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা।’
কোনো স্তম্ভ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হবে না জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এক বছরে যা যা করতে পারব, তার উল্লেখ থাকবে। পদচিহ্ন হিসেবে আরও কিছু বিষয় থাকবে, যা পরের সরকারের মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। আর বাজেট বক্তব্য থাকবে ৫০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠার। এতে কোনো বন্দনা করা হবে না।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা এবং ব্যবসাবান্ধব করা—এসব বিষয় বাজেট প্রণয়নে বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। নতুন নতুন হাসপাতাল করার বদলে বিভিন্ন হাসপাতাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ থাকবে বলেও জানান উপদেষ্টা। তিনি জানান, অপরাধসংক্রান্ত ঘটনা চিহ্নিত করতে একটি ফরেনসিক হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।
কর ব্যবস্থা যৌক্তিক করা হবে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সেবা পাই না, তাই কর দেব না—এ ধরনের কথা অনেকেই বলে থাকেন। সব দেশেই করের হার কিন্তু বেশি।’ তিনি বলেন, অর্থবছর শেষে জুলাই মাসে গিয়ে যেন ‘এটা হলো না কেন, ওটা হলো না কেন’ ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন সবাই—আগামী বাজেটটি তেমনভাবে করা হবে।
ইআরএফের যত প্রস্তাব
ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেছে ইআরএফ। সংগঠনটি বলেছে, একজন ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে মুনাফার ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর কাটা হয়। আবার ব্যাংকের জমা স্থিতির ভিত্তিতে কাটা হয় আবগারি শুল্ক। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে অগ্রাধিকার দেওয়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ চেইনে বিদ্যমান সিন্ডিকেট ভাঙা ও সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, দরিদ্রদের সুরক্ষা দিতে খোলাবাজার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার উপকারভোগী ও ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ করে ব্যয় করার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয় ইআরএফ।
ইআরএফ আরও বলেছে, দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের প্রতিটিতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মানসম্পন্ন একটি করে হাসপাতাল স্থাপন; ক্যানসারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা; পুলিশ, র্যাব, আনসার, কারা পুলিশ, জেলার, বিচারকসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের ঝুঁকিভাতা প্রত্যাহার করা; সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি; রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া; পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইনসহ মিডিয়ার করহার কমিয়ে আনা; কর ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও জবাবদিহি থাকা; বেনামি ব্যাংকঋণ বন্ধে রিটার্ন জমা ও ঋণ নেওয়ার সময় ব্যাংকের কাছে দেওয়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য মিলিয়ে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল