Samakal:
2025-11-02@23:00:11 GMT

জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ

Published: 25th, March 2025 GMT

জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ

বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। গেল অমাবস্যার গোনে গভীর সাগরে মাছ ধরতে জাল ফেলে খালি হাতে উপকূলে ফিরেছেন দুবলার চরকেন্দ্রিক জেলেরা। মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে সাগর পারের বিভিন্ন জেলেপল্লির শুঁটকির চাতালগুলো।
চলতি মৌসুমের মধ্যে জেলেদের মাছ ধরার বাকি সময় আছে আগামী পূর্ণিমার গোন। এই গোনে মাছ পাওয়া গেলেও পুরো মৌসুমের সংকট কীভাবে পূরণ করবেন, তা নিয়ে হা-হুতাশ করছেন মৎস্যজীবীরা। সাগরে মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে সামনের ঈদ উৎসব পালন করবেন কীভাবে আর দেনা পরিশোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা। তাদের পরিবারে নেই কোনো ঈদের আমেজ। 
সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে ও বন বিভাগের তথ্যমতে, দুবলার চর এলাকায় গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ৫ মাসব্যাপী সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ মৌসুম। আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই মৌসুম। মৎস্য আহরণকালে জেলে ও মৎস্যজীবীরা নৌকা ও ট্রলারে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণের পর তা সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। এ সময় সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে ও মৎস্যজীবীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে জড়ো হন। 
সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পুরো উপকূল এলাকায় জেলে ও মৎস্যজীবীরা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। কিন্তু এবারের মৌসুমের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মনে শান্তি নেই। বিরাজ করছে হতাশা। মৌসুমের শুরু থেকেই সাগরে মাছ সংকটে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। সর্বশেষ পূর্ণিমার গোনেও মাছের তেমন দেখা পাননি তারা। 
গেল গোনে সাগরের সুন্দরবন উপকূলে পশ্চিমা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে জেলেরা ট্রলার ও জাল নিয়ে গভীর সাগরে যেতে পারেননি। কেউ কেউ প্রতিকূল বাতাস উপেক্ষা করে সাগরে গিয়ে জাল ফেললেও তেমন মাছ পাননি। ট্রলারের তেল খরচও ওঠেনি।
দুবলার চরের মোংলা রামপাল মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির শেখ জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সাগরের মাছ ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানের মতো মাছের সংকট কখনোই দেখেননি। তিনি বলেন, পশ্চিমা বাতাসের কারণে কোনো মাছ পড়ছে না। বাতাসের তীব্রতায় জেলেরা সাগরের গভীরে যেতে পারেনি। 
সাগরের অধিকাংশ জেলে ও মৎস্যজীবীর একই অবস্থা বলে দাবি করেছেন জাকির শেখ। তিনি বলেন, সামনে ঈদ। কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া পরিবার-পরিজনও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় ঈদ উদযাপন দূরের কথা, লগ্নির টাকা লুভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাই নগরের কামাল হোসেন দুবলারচরের আলোর কোলের মৎস্যজীবী। তিনি জানান, তাঁর তিনটি ট্রলারে মৌসুমে প্রতি লাখে ২৫ হাজার টাকা করে দাদনে ৫০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে সাগরে এসেছেন। এবার মৌসুম শেষ হতে চললেও আয় করেছেন সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মতো। লাভ দূরের কথা, পুঁজির অর্ধেকও এখন পর্যন্ত তোলা যায়নি। এ অবস্থায় তিনি বাড়ি ফিরে কীভাবে তা পরিশোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
কথা হয় সাগরের মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাসের কারণে গেল গোনে সাগরে মাছ ধরা পড়েনি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সাগরে মাছের সংকট বেশি দেখা গেছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন চরের মাছ শুঁকানোর চাতাল ও মাচা খাঁ খাঁ করছে। এ অবস্থায় অনেক মৎস্যজীবীর বাড়িতে ফিরে কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করাও কষ্টকর হয়ে যাবে।
এবারের মৌসুমে সাগরে মাছের অপর্যাপ্ততার কথা স্বীকার করেছেন বন বিভাগের দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, প্রাকৃতিক কারণে সাগরে মাছ সংকট থাকায় বন বিভাগের এ মৌসুমে রাজস্ব আয়ে ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র পর ব র অবস থ করব ন উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইলিশ রক্ষায় জাটকা শিকারে আজ থেকে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা