Samakal:
2025-04-30@22:52:44 GMT

জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ

Published: 25th, March 2025 GMT

জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ

বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। গেল অমাবস্যার গোনে গভীর সাগরে মাছ ধরতে জাল ফেলে খালি হাতে উপকূলে ফিরেছেন দুবলার চরকেন্দ্রিক জেলেরা। মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে সাগর পারের বিভিন্ন জেলেপল্লির শুঁটকির চাতালগুলো।
চলতি মৌসুমের মধ্যে জেলেদের মাছ ধরার বাকি সময় আছে আগামী পূর্ণিমার গোন। এই গোনে মাছ পাওয়া গেলেও পুরো মৌসুমের সংকট কীভাবে পূরণ করবেন, তা নিয়ে হা-হুতাশ করছেন মৎস্যজীবীরা। সাগরে মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে সামনের ঈদ উৎসব পালন করবেন কীভাবে আর দেনা পরিশোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা। তাদের পরিবারে নেই কোনো ঈদের আমেজ। 
সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে ও বন বিভাগের তথ্যমতে, দুবলার চর এলাকায় গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ৫ মাসব্যাপী সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ মৌসুম। আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই মৌসুম। মৎস্য আহরণকালে জেলে ও মৎস্যজীবীরা নৌকা ও ট্রলারে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণের পর তা সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। এ সময় সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে ও মৎস্যজীবীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে জড়ো হন। 
সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পুরো উপকূল এলাকায় জেলে ও মৎস্যজীবীরা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। কিন্তু এবারের মৌসুমের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মনে শান্তি নেই। বিরাজ করছে হতাশা। মৌসুমের শুরু থেকেই সাগরে মাছ সংকটে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। সর্বশেষ পূর্ণিমার গোনেও মাছের তেমন দেখা পাননি তারা। 
গেল গোনে সাগরের সুন্দরবন উপকূলে পশ্চিমা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে জেলেরা ট্রলার ও জাল নিয়ে গভীর সাগরে যেতে পারেননি। কেউ কেউ প্রতিকূল বাতাস উপেক্ষা করে সাগরে গিয়ে জাল ফেললেও তেমন মাছ পাননি। ট্রলারের তেল খরচও ওঠেনি।
দুবলার চরের মোংলা রামপাল মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির শেখ জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সাগরের মাছ ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানের মতো মাছের সংকট কখনোই দেখেননি। তিনি বলেন, পশ্চিমা বাতাসের কারণে কোনো মাছ পড়ছে না। বাতাসের তীব্রতায় জেলেরা সাগরের গভীরে যেতে পারেনি। 
সাগরের অধিকাংশ জেলে ও মৎস্যজীবীর একই অবস্থা বলে দাবি করেছেন জাকির শেখ। তিনি বলেন, সামনে ঈদ। কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া পরিবার-পরিজনও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় ঈদ উদযাপন দূরের কথা, লগ্নির টাকা লুভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাই নগরের কামাল হোসেন দুবলারচরের আলোর কোলের মৎস্যজীবী। তিনি জানান, তাঁর তিনটি ট্রলারে মৌসুমে প্রতি লাখে ২৫ হাজার টাকা করে দাদনে ৫০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে সাগরে এসেছেন। এবার মৌসুম শেষ হতে চললেও আয় করেছেন সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মতো। লাভ দূরের কথা, পুঁজির অর্ধেকও এখন পর্যন্ত তোলা যায়নি। এ অবস্থায় তিনি বাড়ি ফিরে কীভাবে তা পরিশোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
কথা হয় সাগরের মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাসের কারণে গেল গোনে সাগরে মাছ ধরা পড়েনি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সাগরে মাছের সংকট বেশি দেখা গেছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন চরের মাছ শুঁকানোর চাতাল ও মাচা খাঁ খাঁ করছে। এ অবস্থায় অনেক মৎস্যজীবীর বাড়িতে ফিরে কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করাও কষ্টকর হয়ে যাবে।
এবারের মৌসুমে সাগরে মাছের অপর্যাপ্ততার কথা স্বীকার করেছেন বন বিভাগের দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, প্রাকৃতিক কারণে সাগরে মাছ সংকট থাকায় বন বিভাগের এ মৌসুমে রাজস্ব আয়ে ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র পর ব র অবস থ করব ন উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
  • সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
  • মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
  • চেয়ারম্যানের দপ্তরে বুধবারও অবস্থান করবেন কর্মকর্তারা
  • ‘তোর সময় শেষ’ লেখা চিঠির সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হুমকি
  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহীনে : দ্বিতীয় পর্ব
  • প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব হিসেবে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা পদায়নের দাবি
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ বনদস্যু আটক
  • উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে