প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকার বেশি না কম হবে তা নিয়ে দর-কষাকষি, সিদ্ধান্ত কাল
Published: 8th, April 2025 GMT
প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকার বেশি নাকি কম হবে, তা নিয়ে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আজ মঙ্গলবারও বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দর-কষাকষি হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আগামীকাল বুধবার আবার উভয় পক্ষ বৈঠকে বসছে। আশা করা হচ্ছে, কাল একটা সুরাহা হবেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণের জন্য সচিবালয়ে আজ দুপুরে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৬ সদস্যের একটি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান ও বাণিজ্যসচিব মো.
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা করে বাড়াতে চেয়ে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসে ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেয়। ঈদের পর প্রথম অফিস খোলার দিনে গত রোববার এ নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। সে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজও বৈঠক হয়। যদিও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বৈঠক থেকে।
পবিত্র রমজান মাসে মানুষকে সুরক্ষা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে আমদানি পর্যায়ে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে এ অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা সমিতির দাবি হচ্ছে, শুল্ক-কর অব্যাহতির মেয়াদ যেহেতু শেষ হয়ে গেছে ফলে দাম বৃদ্ধি ছাড়া তাদের উপায় নেই। অব্যাহতি বজায় থাকলে দাম বাড়াবেন না তাঁরা।
কারখানার মালিকদের দাবির আগেই অবশ্য ভোজ্যতেলে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর রেয়াতের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করে এনবিআরকে চিঠি দেয় ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু এনবিআর এ ব্যাপারে চুপ রয়েছে।
যোগাযোগ করলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় মাস ধরে ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। লম্বা সময় এ ধরনের সুযোগ বজায় রাখার বাস্তবতায় এনবিআর নেই। আপাতত কর অব্যাহতির পক্ষে থাকাটা আমাদের জন্য কঠিন।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়ায় মাসে ৪৩১ কোটি টাকা কম রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে। সেই হিসাবে ছয় মাসে এনবিআর রাজস্ব হারিয়েছে ২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আজ মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৭৬ টাকা, আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮৪৫ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ থেকে ১৬৬ টাকা, পাম তেল ১৪৪ থেকে ১৫০ টাকা এবং সুপার পাম তেল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও টিকে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার প্রথম আলোকে জানান, এ পর্যায়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি নন।
মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার আজ বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সমিতির নেতৃত্ব দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে সিটি, মেঘনা গ্রুপসহ আরও তিনটি গ্রুপের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন যে গত রমজানে লোকসানে সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য ব্যবসায়ীদের কথা পুরোপুরি আস্থায় নেননি বলে জানা গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ জ যত ল পর য য় আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির মতো সরু গাজার শিশুদের হাত
গাজার নাসের হাসপাতালের শিশু অপুষ্টি ওয়ার্ডের শিশুরা একরকম নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তীব্র ক্ষুধার কারণে ক্লান্ত হয়ে এই শিশুরা কাঁদতে পারেন না।
চিকিৎসকরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সবচেয়ে তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা করানো জায়গাগুলোতে নীরবতা এখন সাধারণ ঘটনা। শিশুদের এই নীরবতা তাদের শরীর কাজ না করার লক্ষণ।
১০ মাস বয়সী মারিয়া সুহাইব রাদওয়ানের মা জেইনা রাদওয়ান বলেন, “সে সবসময় নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকে, এভাবে শুয়ে থাকে... ডাক দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায় না।”
জেইনা তার শিশু সন্তানের জন্য দুধ বা পর্যাপ্ত খাবার খুঁজে পাচ্ছেন না এবং বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না। কারণ তিনি নিজেও কম খাচ্ছেন, দিনে একবার খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন।
গত সপ্তাহে, রয়টার্সের সাংবাদিকরা নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে পাঁচ দিন কাটিয়েছেন। এটি গাজার সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্ষুধার্ত শিশুদের চিকিৎসা করতে সক্ষম মাত্র চারটি কেন্দ্রের মধ্যে একটি। রয়টার্সের সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত থাকাকালেই তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা ৫৩ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিল।
ইসরায়েল মার্চ মাসে ত্রাণের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে গাজার খাদ্য মজুদ ফুরিয়ে আসছে। খাদ্য মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে জুন এবং জুলাই মাসে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যাপক দুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা দেয় এবং ক্ষীণকায় শিশুদের ছবি বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ৮৯ জন শিশুসহ ১৫৪ জন অপুষ্টিতে মারা গেছে।
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ আল-ফাররা বলেন, “আমাদের শিশুদের জন্য দুধ দরকার। আমাদের চিকিৎসা সরঞ্জাম দরকার। আমাদের কিছু খাবার দরকার, পুষ্টি বিভাগের জন্য বিশেষ খাবার। হাসপাতালের জন্য আমাদের সবকিছু দরকার।”
তিনি জানান,তার হাসপাতাল এখন অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা করছে যাদের আগে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না, যেমন শিশু ওয়াতিন আবু আমুনাহ। প্রায় তিন মাস আগে সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করেছিল। জন্মের সময় তার ওজনের চেয়ে ১০০ গ্রাম কম এখন তার ওজন।
ফাররা বলেন, “গত তিন মাসে তার ওজন এক গ্রামও বাড়েনি। বরং শিশুটির ওজন কমেছে। পেশী সম্পূর্ণরূপে হ্রাস পেয়েছে। হাড়ের উপরে কেবল ত্বক রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে শিশুটি তীব্র অপুষ্টির পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এমনকি শিশুটির মুখ: তার গাল থেকে চর্বি টিস্যুও হারিয়ে গেছে।"
শিশুটির মা ইয়াসমিন আবু সুলতান শিশুটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে জানান, তার বাহু তার মায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির মতো মোটা
তিনি বলেন, “দেখতে পারছেন? এগুলো তার পা... তার বাহুগুলোর দিকে তাকান।”
ঢাকা/শাহেদ