৯০ দিনের সুযোগকে কাজে লাগানোর পরামর্শ ব্যবসায়ীদের
Published: 12th, April 2025 GMT
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯০ দিনের এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরার্মশ দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকেরা।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক: পাল্টা কৌশল ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এ পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এতে সমস্যা চলে যায়নি। এই শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কী, আমরা তাদের কতটা ছাড় দিতে পারব, দেশটি থেকে কোন কোন পণ্যের আমদানি বাড়ানো যাবে—এসব নিয়ে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে দ্রুত কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’
গোলটেবিল আলোচনা বৈঠকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, এলএফএমইএবি, বিসিআই, বিপিজিএমইএসহ দেশের ব্যবসা ও শিল্প খাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যে দেশটি অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। যদিও ৯ এপ্রিল আরেক ঘোষণায় পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে শুল্ক পুরোপুরি উঠে যায়নি। এ সময় সবার জন্য সাধারণভাবে ১০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক থাকবে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
গোলটেবিল আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন চারটি ক্ষেত্র মাথায় রেখে কাজ করা প্রয়োজন। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের কারণে খাতভিত্তিক প্রভাব বোঝার চেষ্টা করা। অর্থাৎ বাড়তি শুল্কের কারণে কোন খাতের রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সেটি বোঝা। দ্বিতীয়ত, পাল্টা শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কতভাবে দর–কষাকষি করা যায়, সেটি দেখা। এটি কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে, শুল্ক কমিয়ে, আমদানি বাড়িয়ে কিংবা বাজারভিত্তিক কোনো সমাধানের মাধ্যমে হতে পারে।’
মাসরুর রিয়াজ বলেন, তৃতীয়ত, দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সাধারণ অবস্থান ঠিক করতে হবে, যাতে সবাই যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ঐক্যমত হয়। চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য দর–কষাকষির ক্ষেত্রে সরকার কোনো পণ্যভিত্তিক প্রণোদনার সুবিধা দিতে পারে কি না, সেটি দেখা। যেমন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘ফ্রি জোন’ বা ‘ওয়্যারহাউস’ করা যায়।
বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার–উল–আলম চৌধুরী বলেন, ‘যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝে তাদের স্বার্থের আলোকে সেটি নিতে হবে। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উত্তরণ–পরবর্তী চ্যালেঞ্জের কথাও মাথায় রাখতে হবে। আর টেকসই কোনো সমাধানে যেতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো.
এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ইতিপূর্বে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একাধিকবার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে এফটিএ বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ, বাংলাদেশে শ্রম সমস্যা ও মেধাস্বত্ব আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পরে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় এফটিএ নিয়ে কাজ করছে অনেক দেশ। বাংলাদেশও এমন সুযোগ নিতে পারে।
এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম মুহিবুজ্জামান বলেন, সাধারণত ওষুধ পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক থাকে না। তবে নতুন পাল্টা শুল্কনীতি ওষুধের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে কি না, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে শুল্ক আরোপ হলে সেটি এ খাতের জন্য বড় ধাক্কা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝে দর–কষাকষি করতে পারলে সবার জন্য লাভজনক (উইন–উইন) একটা অবস্থানে পৌঁছা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ৯০ দ ন র র জন য স ব যবস য় সরক র আমদ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক
একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।
যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষকচৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।
যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।
তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।
দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী