বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯০ দিনের এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরার্মশ দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকেরা।

আজ শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক: পাল্টা কৌশল ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এ পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এতে সমস্যা চলে যায়নি। এই শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কী, আমরা তাদের কতটা ছাড় দিতে পারব, দেশটি থেকে কোন কোন পণ্যের আমদানি বাড়ানো যাবে—এসব নিয়ে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে দ্রুত কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’

গোলটেবিল আলোচনা বৈঠকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, এলএফএমইএবি, বিসিআই, বিপিজিএমইএসহ দেশের ব্যবসা ও শিল্প খাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যে দেশটি অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। যদিও ৯ এপ্রিল আরেক ঘোষণায় পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে শুল্ক পুরোপুরি উঠে যায়নি। এ সময় সবার জন্য সাধারণভাবে ১০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক থাকবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

গোলটেবিল আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন চারটি ক্ষেত্র মাথায় রেখে কাজ করা প্রয়োজন। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের কারণে খাতভিত্তিক প্রভাব বোঝার চেষ্টা করা। অর্থাৎ বাড়তি শুল্কের কারণে কোন খাতের রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সেটি বোঝা। দ্বিতীয়ত, পাল্টা শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কতভাবে দর–কষাকষি করা যায়, সেটি দেখা। এটি কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে, শুল্ক কমিয়ে, আমদানি বাড়িয়ে কিংবা বাজারভিত্তিক কোনো সমাধানের মাধ্যমে হতে পারে।’

মাসরুর রিয়াজ বলেন, তৃতীয়ত, দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সাধারণ অবস্থান ঠিক করতে হবে, যাতে সবাই যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ঐক্যমত হয়। চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য দর–কষাকষির ক্ষেত্রে সরকার কোনো পণ্যভিত্তিক প্রণোদনার সুবিধা দিতে পারে কি না, সেটি দেখা। যেমন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘ফ্রি জোন’ বা ‘ওয়্যারহাউস’ করা যায়।

বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার–উল–আলম চৌধুরী বলেন, ‘যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝে তাদের স্বার্থের আলোকে সেটি নিতে হবে। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উত্তরণ–পরবর্তী চ্যালেঞ্জের কথাও মাথায় রাখতে হবে। আর টেকসই কোনো সমাধানে যেতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো.

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি নতুন সুযোগও এনে দিয়েছে। গত ১৫ থেকে ২০ বছরে এনবিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়গুলো এখন বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। সরকার এ বিষয়ে বেশ ইতিবাচক।’ এ ছাড়া ৯০ দিন শুল্ক স্থগিতের সুযোগটিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ইতিপূর্বে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একাধিকবার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে এফটিএ বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ, বাংলাদেশে শ্রম সমস্যা ও মেধাস্বত্ব আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পরে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় এফটিএ নিয়ে কাজ করছে অনেক দেশ। বাংলাদেশও এমন সুযোগ নিতে পারে।

এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম মুহিবুজ্জামান বলেন, সাধারণত ওষুধ পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক থাকে না। তবে নতুন পাল্টা শুল্কনীতি ওষুধের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে কি না, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে শুল্ক আরোপ হলে সেটি এ খাতের জন্য বড় ধাক্কা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝে দর–কষাকষি করতে পারলে সবার জন্য লাভজনক (উইন–উইন) একটা অবস্থানে পৌঁছা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ৯০ দ ন র র জন য স ব যবস য় সরক র আমদ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিএমইএ’র নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান

দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) এর ২০২৫-২৭ মেয়াদের জন্য নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদ হাসান খান (বাবু)। এছাড়া সাতজন সহসভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

আজ শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে নতুন সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিজিএমইএর নির্বাচন বোর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনে আটটি অফিস বেয়ারার পদে আটজন প্রার্থী নমিনেশন জমা দেন। বোর্ড তা যাচাইবাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। কোনো পক্ষ আপিল না করায় নির্বাচন বোর্ড নমিনেশন দাখিল করা প্রার্থীদের সবাইকে অফিস বেয়ারার পদে নির্বাচিত ঘোষণা করে। 

নতুন কমিটিতে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কেডিএস গ্রুপের এমডি সেলিম রহমান। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অনন্ত গার্মেন্টসের এমডি ইনামুল হক খান। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সফটেক্স সোয়েটারের এমডি মো. রেজওয়ান সেলিম, ফেব্রিকা নিট কম্পোজিটের এমডি মিজানুর রহমান (অর্থ), দেশ গার্মেন্টসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান, এমিটি ডিজাইনের এমডি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী এবং ফ্যাশন ওয়্যারের এমডি মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী।

নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটি আগামীকাল সোমবার দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।

গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত বিজিএমইএর নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৮৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৫৬১ এবং চট্টগ্রামে ৩০৩ জন ভোটার। তার মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে বিজিএমইএর ৩৫ পরিচালক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত এসব পরিচালকদের মধ্য থেকেই নির্বাহী পর্ষদ গঠিত হয়। 

এবারের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ ইকবাল। বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন সৈয়দ আফজাল হোসেন ও আশরাফ আহমেদ।

বর্তমানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন অন্তর্বর্তীকালীনভাবে বিজিএমইএর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিজিএমইএ’র নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান