কৃষি পরিবারের বউ হয়ে এসেছিলেন, হয়েছেন দেশসেরা কৃষক
Published: 20th, April 2025 GMT
চৈত্রের দুপুরে খর রোদে যেন আরও শীর্ণ হয়েছে ফরিদপুর শহরের কুমার নদ। তাপ উঠে আসছে মাটি থেকেও। শহরের অম্বিকাপুরের আলো–হাওয়ায় পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের কলমে উঠে এসেছিল ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’–এর মতো সাহিত্যগাথা। ২ এপ্রিল দুপুরে প্রখর রোদের ভেতর গিয়ে দেখা গেল, পল্লিকবির বাড়ির কাছে অম্বিকাপুরের গোবিন্দপুরে যেন আরেক ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ বানিয়েছেন কৃষক সাহিদা বেগম।
সাহিদা মাঠজুড়ে ফলিয়েছেন ‘কালো সোনা’ বলে পরিচিত পেঁয়াজের দানা। কদমের মতো সাদা কেশরের ফুল ফুটে আছে সেখানে। মৌমাছি কমেছে বলে আশপাশে রয়েছে হলদে রঙের ‘হরপা’ নামের একধরনের ফুল গাছ। ওই দিন দুপুরে চড়া রোদে মাঠে ফসলের তদারক করছিলেন সাহিদা। তিনি ফরিদপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় উন্নত জাতের পেঁয়াজবীজ উৎপাদন করে পরিচিতি পেয়েছেন।
সাহিদা বললেন, ‘পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে গেলে ঝরে পড়ে কালো দানা কিংবা বা বীজ। এ বীজের দাম অনেক। ফুলগুলো বড় করতে হয় অনেক ধৈর্য নিয়ে।’ তিনি জানান, মাঠ থেকে তুলে নিয়ে শুকিয়ে মলন দিয়ে বের করতে হয় সেই কালো সোনা। এ কাজে ঝুঁকি অনেক। কারণ, কয়েক মাস ধরে মাঠে বড় করতে হয়। বৃষ্টিপাত, গরম—সবকিছু প্রভাব ফেলে উৎপাদনে। যদিও এখানে যত ঝুঁকি, তত লাভ।
পরিশ্রমী সাহিদা দেশসেরা নারী কৃষকদের একজন। ২০০৪ সালে মাত্র ২০ শতাংশ জায়গায় তিনি চাষাবাদ শুরু করেছিলেন। এ বছর তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ১০ হাজার শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করেছেন।
প্রতিদিন সাহিদার কাজকর্ম শুরু হয় ভোরে। পরিবারের সদস্যসহ কৃষিশ্রমিকদের জন্য নিজে রান্না করেন। সকালের খাবার খেয়ে চলে যান খেতে। জমিতে কাজের তদারক করেন। সেখানেই বিকেল গড়ায়। কোনো এক ফাঁকে হয়তো বাসায় ফেরেন। কাজের চাপ থাকলে শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠে বসে যান থালা হাতে, দুপুরের খাবার নিয়ে।কাজ শুরু করেন ভোরেপ্রতিদিন সাহিদার কাজকর্ম শুরু হয় ভোরে। পরিবারের সদস্যসহ কৃষিশ্রমিকদের জন্য নিজে রান্না করেন। সকালের খাবার খেয়ে চলে যান খেতে। জমিতে কাজের তদারক করেন। সেখানেই বিকেল গড়ায়। কোনো এক ফাঁকে হয়তো বাসায় ফেরেন। কাজের চাপ থাকলে শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠে বসে যান থালা হাতে, দুপুরের খাবার নিয়ে।
অথচ শুরুটা ছিল অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতার প্রত্যাশায়। এখন পেঁয়াজ তোলার সময় সাহিদার ফসলের মাঠে কাজ করে তিন শর বেশি শ্রমিক। মৌসুম ছাড়াও রোজ থাকেন ৫০ থেকে ৬০ জন করে। তাই সাহিদাকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবেও চেনে মানুষ।
নিজের ফসলের খেতে নারী কৃষক সাহিদা বেগম.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
রাস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
আরো পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা
রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।”
দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।”
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”
ঢাকা/শান্ত