বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের উজ্জ্বলতম নাম মাইলস। চার দশক পার করেছে দলটি। এখনও গানে-গিটারে প্রাণবন্ত। মঞ্চে মাইলস মানেই তরুণপ্রাণে অন্যরকম উন্মাদনা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই মাইলসের সমান জনপ্রিয়তা। তাই দেশে যতটা কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ততা মাইলসের, তার চেয়ে ঢের ব্যস্ততা বিদেশের শো নিয়েই। সম্প্রতি ব্যান্ডটি ‘লিগ্যাসি ট্যুর ইউএসএ ২০২৫’ শিরোনামে কনসার্ট নিয়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও তাদের কনসার্টে মেতে উঠছে বিভিন্ন দেশের হাজারো শ্রোতা। 

গেল ১১ এপ্রিল হিউস্টনের স্ট্যাফোর্ডে সেন্টার অডিটোরিয়াম থেকে কনসার্টটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।  যেখানে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য বাংলাদেশি দর্শক ও মাইলসভক্ত। এই লিগ্যাসি ট্যুরটি মাইলসের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এটি দলটির ৩০ তম আমেরিকা ট্যুর অ্যানিভার্সারি। ১৯৯৬ সালে প্রথম আমেরিকায় ট্যুর শুরু করা প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে এই অর্জন মাইলসের জন্য একটি অনন্য গৌরব বলেই জানিয়েছেন দলটির প্রধান হামিন আহমেদ। 

হিউস্টনের কনসার্টে মাইলসের গান শুনে দর্শকরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। ব্যান্ডের প্রধান ভোকাল হামিন আহমেদ জানান, হিউস্টনের অসাধারণ দর্শকদের সামনে পারফর্ম করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই ভালোবাসা আমাদের অনুপ্রেরণা। পরদিন, অর্থাৎ ১২ই এপ্রিল, মাইলস পৌঁছে যায় মিয়ামিতে, যেখানে মারগলিস অ্যাম্পিথিয়েটারে তিন হাজারেরও বেশি দর্শকের সামনে পারফর্ম করে মাইলস। আয়োজকদের মতে, এটি মিয়ামিতে এখন পর্যন্ত আয়োজিত সবচেয়ে বড় বাংলাদেশি মিউজিক কনসার্ট। মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলোর পাশাপাশি তারা পরিবেশন করে বিভিন্ন অ্যালবামের মৌলিক বাংলা গান, যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।
মাইলসকে নিয়ে এই ‘লিগ্যাসি ট্যুর ইউএসএ ২০২৫’ এর আয়োজক হচ্ছে আইরনক্ল্যাড মেলোডি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মূলত তাদের সহায়তাই মাইলসের এই ট্যুরটি এতটা বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ট্যুরের মাইলস এবার পারফর্ম করবে ডালাস, নিউ জার্সি, লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, ডেনভার, অস্টিন, মিশিগান, বাফেলোসহ আরও কয়েকটি শহরে। 

আয়োজকদের প্রত্যাশা, শুরুটা যেমন দুর্দান্ত হয়েছে, তেমনই প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এ ট্যুরটি মাইলসের ইতিহাসে আরেকটি ‘মাইলস্টোন’ হয়ে থাকবে। পাশাপাশি চার দশক ধরে দেশি ব্যান্ডসংগীতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার যে যাত্রা মাইলস শুরু করেছিল, এই ট্যুর যেন সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ও গৌরবের প্রতিফলন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ইলস কনস র ট কনস র ট ম ইলস র

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৬ জুন ২০২৫)
  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সেরা
  • একঝলক (১৫ জুন ২০২৫)
  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৫ জুন ২০২৫)
  • অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আরও যাঁরা পেয়েছেন ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৫’
  • সৌদি আরবের ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ, আবেদনের শেষ তারিখ আজ 
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৪ জুন ২০২৫)
  • মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মাস্টার্স, ক্লাস শুক্র ও শনিবার