আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির বিক্ষোভ
Published: 23rd, April 2025 GMT
আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ ও মশালমিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সমাবেশ থেকে দলটির নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিচার, শেখ হাসিনার বিচার ও সংস্কার প্রশ্নে কোনো আপস করবেন না তাঁরা।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে এনসিপি। দলটির শাহবাগ জোনের আয়োজনে এই কর্মসূচিতে পল্টন, মতিঝিল, রমনা, শাহবাগ এলাকার ও কেন্দ্রীয় নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘গণহত্যাকারী পলাতক আওয়ামী লীগ আবারও উঁকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করছে। তাদের সে সুযোগ আর দেওয়া হবে না। রাজপথ জাতীয় নাগরিক পার্টির দখলে থাকবে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার, শেখ হাসিনার বিচার ও সংস্কার প্রশ্নে কোনো আপস নয়।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের জবাবে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা কারা তার প্রমাণ ৫ আগস্ট দিয়েছি, দরকার হলে আবারও দেব। আমাদের কারণেই আপনারা রাজপথে আসতে পারছেন, চাঁদাবাজি করার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশে আবারও কেউ ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ছিল, নতুন করে কেউ এলে তাদের সরাতে ১৫ মাসও সময় লাগবে না।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো আইন লাগবে না। বাংলাদেশের মানুষ আর হাসিনাকে চায় না। এর জন্য কোনো আইনের প্রয়োজন নেই, সব অংশীজন চাইলেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকেও আন্তরিক হতে হবে।’
সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কোনো দল নয়, তারা ভারতের একটি দল। তারা আরএসএস লীগ, দিল্লি লীগ। তারা বাংলাদেশে আর রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। আওয়ামী লীগ শিশুহত্যাকারী দল, চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে তারা যে গণহত্যা চালিয়েছে, এরপর আর তাদের নিষিদ্ধ করতে কোনো আইন লাগবে না।’
দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য শহীদেরা জীবন দেননি। আমরা নির্বাচনের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে। আমাদের দাবি স্পষ্ট, গণহত্যার বিচারের আগে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মাহমুদ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেতা দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, জোবায়েরুল ইসলাম, ভীম্পালী ডেভিড প্রমুখ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সমাবেশ শেষে মশালমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পল্টন দিয়ে জিপিও মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ভারতের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র য গ ম আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)