কর এবং মোবাইল অপারেটর অসহযোগিতায় কমেছে এমএনপি গ্রাহক: ইনফোজিলিয়ন
Published: 29th, April 2025 GMT
চালুর ৬ বছরেই মুখ থুবড়ে পড়েছে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন বলছে, উচ্চ সিম কর এবং মোবাইল অপারেটর অসহযোগিতায় সেবা গ্রহণের হার কমেছে ৯৭ শতাংশ। এছাড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির বিধিনিষেধের কারণে প্রচার-প্রচারণা চালানো যাচ্ছে না। এতে জনগণ সেবাটি সম্পর্কে সেবা জানতে পারছে না।
মঙ্গলবার রাজধানীতে টিআরএনবি আয়োজিত কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরে এমএনপি অপারেটর।
২০১৮ সালের অক্টোবরে এমএনপি সেবা চালু হয়। এটি এমন এক ধরনের পদ্ধতি যেখানে গ্রাহক মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ পায়।
কর্মশালায় বলা হয়, শুরুতে অপারেটর বদলে ভ্যাট ট্যাক্স মিলিয়ে খরচ ছিল ১৫৮ টাকা। এই উচ্চ ব্যয় নিয়ে সমালোচনার মুখে ১০০ টাকা সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয় এনবিআর। এতে শুরুর বছরেই সাত লাখ গ্রাহক এমএনপি সেবা গ্রহণ করে। একমাসে সবোর্চ্চ এক লাখ ১১ হাজার গ্রাহক এ সেবা নেয়। পরে ৩৪৫ টাকা সিমট্যাক্স আরোপ করায় বর্তমানে এমএনপি সেবায় খরচ ৪০৮ টাকা। খরচ বাড়ায় বর্তমানে মাসে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার মানুষ এমএনপি সেবা নিচ্ছেন।
ইনফোজিলিয়নের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশে এমএনপি সেবায় যে সিমট্যাক্স ধরা হয়েছে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে ভালো চর্চা নয়। গ্রাহকের ওপর জুলুম হয়ে যায়। উচ্চ খরচের পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতারও অভিযোগ তুলেছে এমএনপি অপারেটরটি।
ইনফোজিলিয়নের ডাটাবেজ অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনসের ম্যানেজার ওবায়দুল ইসলাম বলেন, গ্রাহকের এমএনপি আবেদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের নিচে আবেদন বাতিল আদর্শ। কিন্তু আমাদের এখানে ৪৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হচ্ছে। এটা হওয়ার কথা না।
কর্মশালায় আন্তর্জাতিক এসএমএস আদান প্রদান নীতিমালার প্রণয়নের দাবি তোলা হয়। বলা হয়, এই নীতিমালা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
ইনফোজিলিয়নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসাইন বলেন, গ্রাহকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি, কিন্তু নানা বিধিনিষেধে সেই স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাধাগুলো দূর করা গেলে সরকারের রাজস্বও বাড়বে, পাশাপাশি গ্রাহক পাবে মান সম্মত সেবা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের চার মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা ১৮ কোটি ৬৫ লাখ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
সকালে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আদালতে আনা হয়। সকাল ৯টার দিকে তাঁকে রাখা হয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে নয়টার আগে হাজতখানার ভেতর থেকে এ বি এম খায়রুল হককে বের করা হয়। এ সময় তাঁর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।
হাজতখানার ভেতর থেকে হাঁটিয়ে আদালতের ভেতরের একটি সরু রাস্তা দিয়ে খায়রুল হককে নিচতলায় সিঁড়ির সামনে আনা হয়। পরে দুজন পুলিশ কনস্টেবল সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের হাত ধরে রাখেন। তিনি হেঁটে হেঁটে নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠেন। পরে দোতলা থেকে আবার হেঁটে হেঁটে তিনতলায় ওঠেন। পরে তাঁকে নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায়। তখন সময় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট। নিজের দুই হাত পেছনে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তখনো বিচারক আদালতকক্ষে আসেননি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তখন দেখা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকাতে থাকেন। কিছুক্ষণ দেখার পর আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে আদালতকক্ষে আসেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মো. ছানাউল্লাহ। এ সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা এ বি এম খায়রুল হকের নাম ধরে ডাকেন।
তখন রায় জালিয়াতির অভিযোগে করা শাহবাগ থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেক মিয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এসআই খালেক মিয়া আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। সেই সংক্ষিপ্ত রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মতপ্রকাশ করেন যে পরবর্তী ১০ম ও ১১তম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য মত দেন। ওই সংক্ষিপ্ত আদেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের পক্ষে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি), সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) মত দেন। তবে আপিল বিভাগের বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। অর্থাৎ আপিল বিভাগের এই তিন বিচারপতি ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ মর্মে ঘোষণার বিপক্ষে মত দেন।’
প্রিজন ভ্যানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। আজ বুধবার ঢাকার আদালত এলাকায়