এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে বরিশালের গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইউনুছ মিঞা ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি দায়ের করেছেন এক নারী।

গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) বরিশাল সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে নালিশি দায়ের করেন গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী আজাদ সরদারের স্ত্রী সুমা বেগম। বিচারক নালিশি অভিযোগটি শুনানি শেষে আদেশের জন্য রেখেছেন।

আদালতে দাখিল করা নথি সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল সুমা বেগমের শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থান ভাঙচুর করে জমি দখলের চেষ্টা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান সুমা। খবর পেয়ে গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তিনি বিরোধীপক্ষের অবস্থান নেন এবং অভিযোগকারী সুমা বেগমসহ তিন জনকে থানায় নিয়ে যান। পরে সুমা বেগমের পক্ষে কাজ করার জন্য এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন থানার ওসি ইউনুছ মিঞা ও এসআই নজরুল ইসলাম। তাদের দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিকে অপারগতা প্রকাশ করলে মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে ওসি এবং এসআই রাত ৯টা পর্যন্ত আটককৃতদের বেআইনিভাবে থানা হেফাজতে রাখেন। দীর্ঘ সময় থানা হেফাজতে রাখায় প্রতিপক্ষের লোকজন বাধাহীনভাবে কবরস্থান ভাঙচুর করে জমি দখল করেন। এ ঘটনায় গত ১৩ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন, বরিশাল কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সুমা বেগম। সেখান থেকে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভুক্তভোগী আদালতে নালিশি দায়ের করেছেন।

আরো পড়ুন:

হত্যাচেষ্টা মামলা: আসামি সুবর্ণা-অপুসহ ১৭ অভিনয়শিল্পী

ধামরাইয়ে চালক-হেলপারকে মারধর করে তেলবাহী ট্রাক ছিনতাই 

এ বিষয়ে সুমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ওসি মো.

ইউনুছ মিঞা ও এসআই নজরুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এ কারণে ভুক্তভোগী আদালতে নালিশি দাখিল করেছেন। আদালত নালিশকারীর অভিযোগ শুনেছেন এবং আদেশের জন্য রেখেছেন।’’

তবে, অভিযোগের বিষয়ে নাকচ করেছেন গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইউনুছ মিঞা।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। রাস্তা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় কাউকে থানায় এনে আটক করে রাখা বা টাকা দাবি করা হয়নি।’’

ওসি ইউনুছ মিঞা বলেন, ‘‘ওই নারী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’

ঢাকা/পলাশ/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নজর ল ইসল ম ইউন ছ ম ঞ দ য় র কর কর ছ ন গ রনদ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি

রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।

নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’

পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।

এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মালেগাঁওয়ে কবরস্থানে বিস্ফোরণ মামলায় বিজেপি নেত্রী প্রজ্ঞাসহ সবাই খালাস
  • রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
  • পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে এসআইদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান
  • রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি