Samakal:
2025-05-04@23:52:46 GMT

দুপুর ১টা বাজলেই ছুটির ঘণ্টা

Published: 4th, May 2025 GMT

দুপুর ১টা বাজলেই ছুটির ঘণ্টা

ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১টা পেরোলেই ঢংঢং করে বেজে ওঠে ছুটির ঘণ্টা। খানিক বাদেই স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কোলাহলের পরিবর্তে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। এটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার চিত্র। 
শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে ক্লাস শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ছুটি দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলে প্রধান শিক্ষকের খেয়ালখুশিমতো। সেখানে নিয়মিতভাবে দুপুর ১টা বাজলেই পড়ে ছুটির ঘণ্টা। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। 
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা 
বিদ্যালয়ে এসে ক্লাসে না গিয়ে কার্যালয়ে বসে থাকেন। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দিয়ে চলে যান যে যাঁর মতো।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাহুল হোসেন জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাম ডাকে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। 
নবম শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা খাতুনের ভাষ্য, প্রতিদিনই একটা-দুটো ক্লাস নেন শিক্ষকরা। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দেওয়া হয়। সামনে পরীক্ষা  তবুও অন্যান্য ক্লাস হয় না। একই ভাষ্য ওই শ্রেণির অনন্যা খাতুনেরও। 

অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে আগের মতো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা সবাই দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। 
বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের দোকান। তাঁর মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আব্দুর রহিম জানান, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। প্রতিদিন দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি হয়ে যায়। এসব দেখার যেন কেউ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। 
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য হাসানুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়মে জড়িত। স্কুলের বিষয়ে কিছু বলতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি শিগগিরই ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন। 
বিদ্যালয়ের পাশেই সহকারী শিক্ষক আবু খোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যাপার।’
গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পতাকা নামাচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। শিক্ষক কক্ষে শূন্য চেয়ার-টেবিল। 
বিকেল ৪টার আগে ছুটি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে হেড স্যারের (প্রধান শিক্ষক) সঙ্গে কথা বলেন।’
এসএসসি পরীক্ষার অজুহাত দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিদিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মো.

নুর উদ্দিন। 
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, বিকেল ৪টার আগে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের উপস্থিতিতে অপহরণের অভিযোগ, দুইদিনেও উদ্ধার হয়নি পল্লী চিকিৎসক

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক পল্লী চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের হাতি চামটার ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করেন দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, মাথায় হেলমেট এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার সামনেই কয়েকজন ব্যক্তি তরিকুল ইসলামকে টেনে-হিঁচড়ে একটি অটোভ্যানে তুলছেন। এ সময় আশপাশের কয়েকজন তাকিয়ে দেখেন। তরিকুল তাদের সাহায্য চাইলেও সবাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তদের একজনকে বলতে শোনা যায়, 'এ এখানে প্রশাসনের লোক আছে।' 

অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলাম ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর কুটিপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। ভাতগ্রাম বাজারে পল্লি চিকিৎসক হিসেবে তার চেম্বার ও ওষুধের দোকান রয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন।

এদিকে অপহরণের দুইদিন পার হলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বজনরা। তবে অপহরণকারীরা এ পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ বার ফোন দিয়ে অপহৃত তরিকুলের ছোটভাই হিরুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে পল্লী চিকিৎসকের ছোটভাই হিরু মিয়া সাদুল্লাপুর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তরিকুল ইসলামের ঔষধের দোকানে সুমন নামে এক ব্যক্তি ৬ মাস কাজ করেছেন। পরে তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হলে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি  টাকা দাবি করে আসছিলেন দোকান মালিক তরিকুলের কাছে। এ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে শালিসি বৈঠকও হয়। গত শুক্রবার বিকেলে তরিকুল বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে ভাতগ্রাম বাজারে তার দোকানে যাচ্ছিলেন। পথে সুমনসহ স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে মারধর করেন এবং জোরপূর্বক তাকে অটোরিকশা ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।

পল্লি চিকিৎসকের ছোটভাই হিরু মিয়া বলেন, অভিযোগ দেওয়ার দুইদিন হয়ে গেল, এখনো আমার ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ সেখানে সাদুল্লাপুর থানার একজন এএসআই উপস্থিত ছিলেন। অপহরণকারীরা সবার পরিচিত। দিনে দুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কারণে ভাইকে নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি আমরা। তার দুই মেয়ে শুধু কাঁদছে। 

তিনি আরও বলেন, সবশেষ রোববার দুপুরে অপহৃত তরিকুলের কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকে দুর্বৃত্তরা ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। প্রশাসনের কাছে তার বড়ভাইকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। 

রোববার রাত ৯টায় সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার সমকালকে বলেন, ‘অপহরণের সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির উপস্থিতির কথা শুনেছি। কিন্তু স্পষ্ট নয়। অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলামকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলামান রয়েছে।’ 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ