ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১টা পেরোলেই ঢংঢং করে বেজে ওঠে ছুটির ঘণ্টা। খানিক বাদেই স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কোলাহলের পরিবর্তে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। এটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার চিত্র।
শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে ক্লাস শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ছুটি দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলে প্রধান শিক্ষকের খেয়ালখুশিমতো। সেখানে নিয়মিতভাবে দুপুর ১টা বাজলেই পড়ে ছুটির ঘণ্টা। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা
বিদ্যালয়ে এসে ক্লাসে না গিয়ে কার্যালয়ে বসে থাকেন। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দিয়ে চলে যান যে যাঁর মতো।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাহুল হোসেন জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাম ডাকে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যায়।
নবম শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা খাতুনের ভাষ্য, প্রতিদিনই একটা-দুটো ক্লাস নেন শিক্ষকরা। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দেওয়া হয়। সামনে পরীক্ষা তবুও অন্যান্য ক্লাস হয় না। একই ভাষ্য ওই শ্রেণির অনন্যা খাতুনেরও।
অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে আগের মতো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা সবাই দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের দোকান। তাঁর মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আব্দুর রহিম জানান, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। প্রতিদিন দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি হয়ে যায়। এসব দেখার যেন কেউ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য হাসানুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়মে জড়িত। স্কুলের বিষয়ে কিছু বলতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি শিগগিরই ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
বিদ্যালয়ের পাশেই সহকারী শিক্ষক আবু খোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যাপার।’
গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পতাকা নামাচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। শিক্ষক কক্ষে শূন্য চেয়ার-টেবিল।
বিকেল ৪টার আগে ছুটি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে হেড স্যারের (প্রধান শিক্ষক) সঙ্গে কথা বলেন।’
এসএসসি পরীক্ষার অজুহাত দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিদিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মো.
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, বিকেল ৪টার আগে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
১৪০০ বছরের মধ্যে প্রথম নারী আর্চবিশপ নিয়োগ দিলো চার্চ অফ ইংল্যান্ড
চার্চ অফ ইংল্যান্ড সারা মুল্লালিকে ক্যান্টারবেরির পরবর্তী আর্চবিশপ হিসেবে মনোনীত করেছে। এক হাজার ৪০০ বছরের পুরনো এই পদে প্রথমবারের মতো কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হলো। শুক্রবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
সারার এই নিয়োগের ফলে আফ্রিকার রক্ষণশীল অ্যাংলিকানদের সমালোচনার মুখে পড়েছে চার্চ অফ ইংল্যান্ড। কারণ অ্যাংলিকানরা নারী বিশপের বিরোধিতা করেন।
মুল্লালি বিশ্বব্যাপী আট কোটি ৫০ লাখ অ্যাংলিকানদের আনুষ্ঠানিক প্রধানও হবেন। তার পূর্বসূরীদের মতো রক্ষণশীলদের মধ্যে - বিশেষ করে আফ্রিকায়, যেখানে কিছু দেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ এবং সাধারণত পশ্চিমে আরো উদার খ্রিস্টানদের মধ্যে বিভেদ দূর করার ক্ষেত্রে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন মুল্লালি।
ক্যান্টারবেরি ক্যাথেড্রালে তার প্রথম ভাষণে ৬৩ বছর বয়সী সাবেক নার্স যৌন নির্যাতন কেলেঙ্কারি এবং চার্চকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলো এবং বৃহস্পতিবার ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে হামলার পর ইহুদি-বিদ্বেষের নিন্দা করেছেন।
বিশ্বব্যাপী রক্ষণশীল অ্যাংলিকান গির্জাগুলোর দল গ্যাফকন এক বিবৃতিতে মুল্লালির নিয়োগের তাৎক্ষণিক সমালোচনা করে জানিয়েছে, এটি দেখায় যে চার্চের ইংরেজ শাখা ‘নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে।’
২০১৮ সাল থেকে লন্ডনের বিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মুল্লালি। এর আগে তিনি চার্চের অভ্যন্তরে বেশ কিছু উদারনৈতিক কাজ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে নাগরিক অংশীদারিত্ব এবং সমকামী দম্পতিদের জন্য আশীর্বাদ প্রদান।
ঢাকা/শাহেদ