জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিষ্টি বিতরণসহ নানা আয়োজনে উৎসব করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলের দিকে শিক্ষার্থীরা এসব আনন্দ উৎসব আয়োজন করেন। রাইজিংবিডির প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনা ও কামালকে হস্তান্তরে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের আহ্বান

বিবিসির বিশ্লেষণ: শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় কেন ভারতকে বিব্রত করবে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর মিষ্টি উৎসব এবং শেখ হাসিনার প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করেছেন জাবি শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) উদ্যোগে এ মিষ্টি বিতরণ উৎসব ও প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

এতে জাকসু নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন হল সংসদের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে দেখা যায়।

উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে জুলাইয়ে শহীদ ও আহত পরিবার এবং দেশের সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল ঘটেছে। অতিদ্রুত যেন শেখ হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
রায় ঘোষণার পর উল্লাস প্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) উদ্যোগে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। বিকেল পৌনে ৪টায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায় রাকসু নেতাদের।

মিষ্টি বিতরণের সময় রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “এই রায়কে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য যেভাবেই হোক ইন্টারপোলের মাধ্যমে খুনি হাসিনাকে দেশে এনে জনসম্মুখে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। সব শহীদ পরিবার, নির্যাতিতরা এটা দেখে শান্তি পেতে চায়।”

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডে রায়ে উল্লাস প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেছেন ইবি শিক্ষার্থীরা। 

এর আগে, দুপুরে ঝালচত্বরে শেখ হাসিনার রায় পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা। সরাসরি রায় দেখতে ভিড় করেন শিক্ষার্থীরা।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) 
‎শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর বিকেল ৩টায় শহীদ আবু সাঈদ গেইট থেকে একটি আনন্দ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে এসে মিষ্টি বিতরণ করেছেন বেরোবি শিক্ষার্থীরা।

এ সময় ‎শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনাকে দ্রুত ভারত থেকে এনে শাস্তি কার্যকরের জোর দাবি জানান।

‎বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.

মো. শওকাত আলী বলেন, “আজ যে রায় হয়েছে, এতে আমরা খুশি হয়েছি। আগামীতে যারাই সরকার প্রধান হয়ে আসবে, তারা এ বিষয়ে সর্তক থাকবে। তারা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবেন।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর রায়ে পাঁচটি অভিযোগের তিনটিতে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরো দুইটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। অপর আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব তরণ কর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঘূর্ণির জাদুতে বিশ্বজয় 

শ্রীলঙ্কার মাঠে সেদিন দুপুরটা ছিল অস্বস্তিকর গরমের। এর সঙ্গে যোগ হলো ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই লঙ্কান ব্যাটারের তাণ্ডব। দুজনের ভাবভঙ্গিতে যেন ফুটে উঠল না–বলা কথা—‘আমরা থামব না।’ দ্রুত বাউন্ডারি আসছিল, রানের চাকা ঘুরছিল। হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের বোলাররা।

এরপর হঠাৎ এক তরুণ অফ স্পিনার এসে খেলার রংটাই পাল্টে দিলেন। তুলে নিলেন দিনেশ চান্ডিমালের উইকেট। ঘুরে গেল খেলার মোড়। দেড় শ রানের অটল জুটি ভেঙে দিয়ে খেলার গল্প বদলে দেন যে ছেলেটি—তিনি নাঈম হাসান।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে নাঈম যেন মাঠে এক ‘ঘূর্ণিঝড়’ বইয়ে দেন। বাংলাদেশের দল হঠাৎ পায় নতুন প্রাণ, নতুন ছন্দ। সেই ম্যাচ ড্র হয়; কিন্তু নাঈমের বোলিংয়ের জাদু থেকে যায় গ্যালারির গুঞ্জনে, ভক্তদের আলোচনায়। এ বছরের জুনে শ্রীলঙ্কার গলে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন নাঈম। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার বল করেন তিনি। দেন সবচেয়ে কম রান। 

চট্টগ্রামের আলো–বাতাস গায়ে মেখে বড় হওয়া ছেলে নাঈম। পাড়ার মাঠ থেকে উঠে এসে আপন আলোয় জ্বলে ওঠা অদম্য স্পিনার। স্পটলাইট থেকে দূরে দাঁড়িয়ে নিজের খেলাটাকে নিখুঁত করে তুলতে যাঁরা চেষ্টা করেন—নাঈম তাঁদের একজন। দলে থাকেন, পারফর্ম করেন, আবার নিঃশব্দে সরে যান। আলোচনার কেন্দ্রে তিনি থাকেন না, কিন্তু তাঁর বোলিংয়ের ঘূর্ণি মাঠের বাইরের সব আলো নিজের দিকে টেনে নেয়।

শুরুটা সেই গলির মাঠে

নাঈমের ক্রিকেটে হাতেখড়ি কৈশোরে। টেপ টেনিসের উচ্ছ্বাস, গলির ক্রিকেটের পাগলামি; যেখানেই ব্যাট-বল, সেখানেই ছুটে যাওয়া। খেলাপাগল ছেলেটির ব্যাটে জোর ছিল, বোলিংয়েও তেমন দাপুটে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট থেকে বলের দিকেই বেশি ঝুঁকে গেলেন তিনি।

পাহাড়-সাগর-হ্রদে ঘেরা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ফরিদারপাড়া এলাকা। নাঈমের ছোটবেলার পথচলা শুরু হয়েছিল এই এলাকাতেই। তাঁদের বাড়িটি একসময় লোকের কাছে ‘মাহবুব কাউন্সিলরের’ বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। সময়ের স্রোতে সেই নাম পাল্টে গেছে। এখন মানুষ চেনে ক্রিকেটার ‘নাঈম হাসানের বাড়ি’ হিসেবে।

জাতীয় দলের খেলা হলে ফরিদারপাড়ার মানুষ বসে যান টিভির সামনে। যখন নাঈম বল হাতে এগিয়ে আসেন, এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাস–উত্তেজনা বেড়ে যায়। দরজা-জানালার ফাঁক দিয়ে শুনতে পাওয়া যায় সম্মিলিত ফিসফাস—‘উইকেট চাই নাঈম, উইকেট চাই’।  নাঈমের ছোট সাফল্য-ব্যর্থতাতেও মানুষের অনুভূতির ছায়া লেগে থাকে এ এলাকায়।

সমুদ্রপাড়ে লেখা ইতিহাস

২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর। চট্টগ্রামের সমুদ্রঘেঁষা সাগরিকা স্টেডিয়ামের সকালটা যেন একটু উজ্জ্বল ছিল সেদিন। নাঈমের চোখে আলো, মনে উত্তেজনা। হয়তো তার চেয়েও বেশি ছিল একধরনের নীরবতা, যেটা বড় দিনে বড় খেলোয়াড়ের মনেই জন্ম নেয়। জাতীয় টেস্ট দলের জার্সিটি প্রথমবার তাঁর গায়ে ওঠে সেদিন। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর ২৮৩ দিন। শুরুর দিনেই তিনি ইতিহাস লিখে ফেললেন। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে টেস্ট অভিষেকেই রেকর্ড গড়েন চট্টগ্রামের এই সন্তান। মাঠে তখন উৎসব।

স্টেডিয়াম পেরিয়ে উৎসব শুরু হয় ফরিদারপাড়ার বাড়িতেও। নাঈমের মা মমতাজ বেগম পরে বলেছিলেন, ‘চোখে পানি এসে গিয়েছিল। গর্বে, আনন্দে, বিস্ময়ে।’ টিভিতে  তাঁর ছেলেকে বল করতে দেখে নীরবে বলেছিলেন, ‘আমার ছেলেটা জাতীয় দলে খেলছে।’

হঠাৎ এক তরুণ অফ স্পিনার এসে খেলার রংটাই পাল্টে দিলেন। তুলে নিলেন দিনেশ চান্ডিমালের উইকেট। ঘুরে গেল খেলার মোড়।

সাগরিকা স্টেডিয়াম সেই থেকে নাঈমের কাছে শুধু একটা মাঠ নয়, এটাই তাঁর আত্মবিশ্বাসের ঘর। এখানে পাঁচ উইকেটের পর অন্য ম্যাচে ৬ উইকেটও নিয়েছেন। এই মাঠেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন নিজের ছন্দ, নিজের সত্তা।

তবু আফসোস

নাঈমের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে একধরনের বৈপরীত্য চোখে পড়ে। সাত বছরে তিনি খেলেছেন মাত্র ১৪ টেস্ট। এর মধ্যে চারবার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা ছবি। ৬৯ ম্যাচে ২৭৬ উইকেট। ১৮ বার ৫ উইকেট ও ৩ বার নিয়েছেন ১০ উইকেট।

বিপিএলে নাঈমের নামের পাশে আছে ৩০ উইকেট। চিটাগং ভাইকিংস, কুমিল্লা ভিকটোরিয়ানস, ফরচুন বরিশাল, সিলেট থান্ডার্স—এসব দলে খেলে তিনি হয়ে উঠেছেন পরের প্রজন্মের অফস্পিনের প্রতিশ্রুতি।

প্রতিটি ম্যাচেই দেখা যায়—নাঈম নিজের খেলা নিয়ে কতটা মনোযোগী। তিনি নিজের স্পেল নিয়ে ভাবেন, চক্র ভেঙে কীভাবে ব্যাটসম্যানকে ভুল করানো যায়, তা নিয়েই থাকেন।

যে স্পিনার এতটা ধারাবাহিক, তাঁকে আরও বেশি সুযোগ না দেওয়ার আক্ষেপ থেকেই যায়। নাঈমের বাবা মাহবুবুল আলমের চোখের কোণে সেই আক্ষেপ জমে আছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাঈমকে নিয়ে আমাদের গর্ব আছে। কিন্তু সে সুযোগ পায় কম। আরও সুযোগ পেলে নামের পাশে উইকেটের সংখ্যা ভিন্ন হতো।’

নাঈম হাসান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল: ট্রফি নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ফুটবল–উৎসব
  • ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব
  • জানা গেল রাজামৌলির ছবির নাম, থাকছেন মহেশ বাবু-প্রিয়াঙ্কা
  • দেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের জয়ের গল্প আসছে
  • নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আদি নববর্ষ’ উদ্‌যাপন
  • মুগ্ধ করল নবান্ন উৎসবে ধান কাটার প্রতিযোগিতা
  • নবান্নের পিঠায় সুবাসিত রাবি
  • ঘূর্ণির জাদুতে বিশ্বজয় 
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্যের উৎসব রোববার