ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল আগামী ২২ বছরের জন্য পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ। আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ–সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় সাইনিং মানি হিসেবে সরকারের পক্ষে ১৮ কোটি টাকার চেক গ্রহণ করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। চেক তুলে দেন মেডলগ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম আনিসুল মিল্লাত।

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) এবং মেডলগ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে একটি কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সিপিএ চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এবং মেডলগ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম আনিসুল মিল্লাত তাঁদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সরকার ও মেডলগের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.

) এম শাখাওয়াত হোসেন। উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহনসচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঢাকার কাছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল। চুক্তির মাধ্যমে এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের মেডলগ। চুক্তির আওতায় সরকার বছরে ১ কোটি ১ লাখ টাকা ফি পাবে। পাশাপাশি প্রতি একক কনটেইনার থেকে ২৫০ টাকা মাশুল পাবে সরকার। এ টার্মিনালে মোট ৪ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে মেডলগ। তৈরি করা হবে কটন ওয়্যারহাউস। নিজস্ব বার্থ জাহাজ এবং ট্রাক ও ফ্রিজিং ট্রাক ক্রয় করা হবে টার্মিনালটির জন্য। এত দিন ধরে বছরে ২২ কোটি টাকা লোকসানে ছিল পানগাঁও নৌ টার্মিনালটি।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম শাখাওয়াত হোসেন (অব.) বলেন, গত ১২ বছরে পানগাঁও নৌ টার্মিনালে আমাদের ৩০০ কোটা টাকা লোকসান হয়েছে। বছরে ২২ কোটি টাকার মতো লোকসান হতো। মোট ১৬৫ কোটি টাকা লোকসান এবং নির্মাণ ব্যয় ১৫৫ কোটি টাকা মিলিয়ে তা ৩০০ কোটি টাকা। অনেকে এটা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীরা কাস্টমসের সমস্যার কথা বলতেন। তবে কর্মকর্তা পরিবর্তন করেও কোনো লাভ হয়নি। এখন আশা করি এসব সমস্যা উতরে যাবে পানগাঁও টার্মিনাল।

মেডলগ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম আনিসুল মিল্লাত বলেন, প্রাথমিকভাবে ৬০ লাখ ডলার এবং পর্যায়ক্রমে ৪ কোটি ডলার বিনিয়োগ করব আমরা। যার মাধ্যমে ঢাকা এবং আশপাশের সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে। দেড় মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করার কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, সড়কপথে আমাদের কার্গো পরিবহন হয় ৯৬ শতাংশ। কিন্তু নৌপথে ১ শতাংশের কম। এটা ৫ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করতে পারলে সড়কের ওপর চাপ কমবে। এ ক্ষেত্রে নতুন এ চুক্তি সহায়তা করবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—এটা পুনর্নিশ্চিত করেছে এই রায়

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আজ বাংলাদেশের আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা সারা দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনর্নিশ্চিত করেছে—যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ এবং এখনো সেই ক্ষত বহনকারী পরিবারগুলোর জন্য এই রায় সীমিত মাত্রায় হলেও ন্যায়বিচার এনে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।

আজ সোমবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছরের নিপীড়নে ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্নির্মাণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। যে অপরাধগুলো নিয়ে বিচার হয়েছে—তরুণ ও শিশু, যাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের আদেশ, যা আমাদের আইন এবং সরকার–নাগরিক সম্পর্কের মৌলিক বন্ধনকে লঙ্ঘন করেছে। এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ—মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারকে আঘাত করেছে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁরা শুধুই সংখ্যা নন; তাঁরা ছিলেন আমাদের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। গত কয়েক মাসের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি—এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রায় তাঁদের ভোগান্তিকে স্বীকৃতি দেয় এবং আমাদের বিচারব্যবস্থায় অপরাধীদের জবাবদিহির নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করে।’

বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহির ধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও নাগরিকেরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাঁদের অনেকেই জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন—তাঁদের বর্তমান উৎসর্গ করেছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সামনের পথচলায় শুধু আইনি জবাবদিহি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও জরুরি। প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য মানুষ কেন সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে—তা বোঝা এবং সেই আস্থার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাংলাদেশে শুধু নামেমাত্র টিকে থাকবে না; এটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুদৃঢ় হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ