দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সংলাপে সিইসি
Published: 17th, November 2025 GMT
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চাইলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, এই সহযোগিতা না পেলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভবপর হবে না।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে এ কথা বলেন তিনি। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তৃতীয় দিনের প্রথম ধাপের সংলাপে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) নেতারা অংশ নেন। আমন্ত্রিত হলেও এদিন যায়নি বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের প্রস্তুতি তুলে ধরে সিইসি নাসির উদ্দীন সংলাপের শুরুতেই বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে একটা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা প্রস্তুতি গ্রহণ করার, আমরা তা করে যাব। আমাদের নিয়ত একদম পরিষ্কার, আমাদের কমিটমেন্ট পরিষ্কার। যত ঝঞ্ঝা, যত সাইক্লোন, ঝড় আসুক না কেন, আমরা এটা মোকাবিলা করে একটা সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা তা নেব।’
এ ক্ষেত্রে দলগুলোর সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে এবং তারা যদি সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়, তাইলে দেখবেন যে নির্বাচন হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে আশঙ্কা এসে যাচ্ছে।’
নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘পোলিং ডেটের আগে, ভোটের দিন বা পরে নানাবিধ সমস্যা বাস্তবে দেখা যায়। ফিল্ডে দেখা যায় ইলেকশনের সময়। এই তিনটা ফেজে কোনো সমস্যা সৃষ্টি যেন না হয়, এ জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে এবং তারা যদি সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়, তাইলে দেখবেন যে নির্বাচন হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে আশঙ্কা এসে যাচ্ছে।এ এম এম নাসির উদ্দীন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসংলাপে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো.
মসজিদ, মন্দির, কেয়াং, গির্জা, সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেকোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচার নিষিদ্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।
প্রবাসীদের ভোট গ্রহণকে এবার বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরে আবুল ফজল বলেন, ‘তবু কমিশন মাত্র ৯ মাসে জটিল প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। আগামীকাল এর নিবন্ধনের যে প্ল্যাটফর্মটি “পোস্টাল ভোট বিডি’ সন্ধ্যাবেলায় চালু করা হবে।’
সোশাল মিডিয়ায় অপপ্রচার, ডিপফেক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার মোকাবিলায় মনিটরিং সেল গঠন ও জাতিসংঘের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, বর্তমান কমিশনের বার্তা স্পষ্ট—আইন লঙ্ঘন করলে কেউই পার পাবে না এবং কোনো বিষয়ে কমিশন আপস করবে না। মাঠপর্যায়ে ভিজিলেন্স টিম, মনিটরিং টিম, আইনশৃঙ্খলা সেল, ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি টিম ও কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবে।
আনোয়ারুল ইসলাম জানান, অনিয়ম দেখলে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে পারবেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাও প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমেদ সুষ্ঠু ভোটের জন্য সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠিন হলেও জাতি একসঙ্গে দাঁড়ালে সফলতা সম্ভব, যেমন শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
বড় দলের প্রচারের জন্য পোস্টারের দরকার হয় না, কিন্তু ছোট দলগুলো পরিচিতির অভাবে পোস্টারের ওপরই নির্ভরশীল। তাই পোস্টারের বিষয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।আবদুল মান্নান, বিকল্প ধারা মহাসচিবপোস্টার নিষিদ্ধ নিয়ে আপত্তিসংলাপে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘন চিহ্নিত করা সহজ; তাই লক্ষ্য হওয়া উচিত লঙ্ঘন যেন না ঘটে বা কম ঘটে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সীমিত ক্ষমতার কথা উল্লেখ করে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ডিজিটাল যুগে জনগণ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে, তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ‘আউট অব কান্ট্রি ভোট (ওসিভি)’ ও পোস্টাল ব্যালট বাস্তবায়নের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ৪০ লাখের বেশি প্রবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিতে সাড়া দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে অনাস্থা ও অবিশ্বাসের প্রসঙ্গ তুলে তিনি পোস্টাল ব্যালটের নিরাপত্তা ও হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থায় বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ দেন।
পাশাপাশি নির্বাচনের সময় ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দ্রুত ফ্যাক্ট–চেকিং ও সঠিক তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য যদি দুই-চারজনের প্রার্থিতা বাতিল করা যায়, তাহলে বাকিদের মধ্যেও শৃঙ্খলা তৈরি হবে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনার নজির অতীতে নেই; তাই কমিশনের কঠোর ক্ষমতা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি।
পোস্টার প্রসঙ্গে আবদুল মান্নান বলেন, বড় দলের প্রচারের জন্য পোস্টারের দরকার হয় না, কিন্তু ছোট দলগুলো পরিচিতির অভাবে পোস্টারের ওপরই নির্ভরশীল। তাই পোস্টারের বিষয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
ভোটকেন্দ্রে দলীয় এজেন্ট থাকার বিষয়টি নিয়েও আবদুল মান্নান প্রশ্ন তোলেন। তাঁর মতে, দলীয় এজেন্ট ছাড়াই ভোট গ্রহণ সম্ভব। কারণ, বড় দলের এজেন্টরাই সাধারণত ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে এবং ছোট দলের এজেন্টরা প্রবেশাধিকার পায় না।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার দিকটি তুলে ধরে বলেন, একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন আজ সময়ের দাবি, এবং এর মাধ্যমেই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী সব দলের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি এবং কালোটাকার ব্যবহার বন্ধের ওপর জোর দেন। আচরণবিধিতে প্রচারণায় পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, ফেস্টুন ও পলিথিন–পিভিসি সামগ্রী নিষিদ্ধের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, এটি বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সভাপতি আবু লায়েস মুন্না নির্বাচন কমিশনে কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন তুলে ধরে বলেন, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে একটি জাতীয় পরিষদ গঠন করে নির্বাচন কমিশনের বিধিবিধান সংস্কার জরুরি। এমন পরিষদ থাকলে মাসব্যাপী সংলাপের প্রয়োজন পড়ত না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন র জন ত ক দল র সহয গ ত আচরণব ধ দলগ ল র র র জন র প রস র জন য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির সংলাপে ইসলামী ঐক্যজোটের দুপক্ষে তর্ক, একাংশকে বের হয়ে যেতে বলা হলো
ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আমিনীর অনুসারীরা আজ রোববার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে যোগ দিতে যান। কিন্তু সংলাপ শুরুর আগে দলটির বর্তমান অংশের লোকজন আপত্তি তোলেন। এ সময় তাঁদের বের হয়ে যেতে বলা হয়।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসিতে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে। এতে সকালে ৬টি দল অংশ নেয়।
সংলাপ শুরু হওয়ার আগে ইসলামী ঐক্যজোটের বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল কাদির অংশের প্রতিনিধিরা বসার জায়গা পাননি। এ সময় তাঁরা ইসির উদ্দেশে বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর যাঁরা গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা এখানে বসে আছেন। এ সময় ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানতে চান কাদের কাছে লিখিত দাওয়াতপত্রের হার্ডকপি রয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিরা তাঁদের কাছে থাকা লিখিত দাওয়াতপত্র দেখান। অন্যদিকে আমিনীর অনুসারীরা হার্ডকপি দেখাতে পারেননি। এ সময় সচিব তাঁদের সম্মেলনকক্ষের বাইরে যেতে বলেন।
বের হয়ে যাওয়া প্রতিনিধিদলের একজন মাওলানা আলতাফ হোসেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দলের নিবন্ধন তাঁদের নামে, দাওয়াত তাঁদেরকেই দেওয়া হয়েছে। ব্ল্যাকমেল করে তাঁদের দাওয়াতপত্র অপর পক্ষ নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর হাসানাত আমিনী দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এরপর মাওলানা আবদুল কাদিরকে চেয়ারম্যান ও মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে মহাসচিব করে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেকগুলো বড় কাজ তাঁরা করেছেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ ইসির বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তিনি তুলে ধরেন।
সিইসি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনে অনেক আলোচনা হয়েছে। সামনে যাতে ইসি সুন্দর একটি নির্বাচন করতে পারে সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ, তারা সরাসরি মানুষের সঙ্গে কাজ করে, তাই দলগুলোর পরামর্শ প্রয়োজন।
আচরণবিধি যদি সবাই পালন করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে বলে জানান সিইসি। এই আচরণবিধি প্রচারের ব্যবস্থা দলগুলোও করতে পারে বলে জানান তিনি।
সংলাপে সকালে অংশ নেয় গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি।