খেলার মাঠে মুশফিকুর রহিমের সবার আগে আসা, ঘাম ঝরানো পরিশ্রম, ব্যাট-বলের অনুশীলন শেষে সবার পরে যাওয়া এসব গল্প শোনা হয়েছে অনেক সময়। টিভির ক্যামেরায় কিংবা ফটো স্টোরিতে বারবার উঠে এসেছে তার অধ্যবসয়, শৃঙ্খলা, নিবেদন ও নিষ্ঠার ছবি।

ক্যামেরার আড়ালে তিনি করেন? কিভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন? কিভাবে নিজেকে গড়ে তোলেন? তার ধৈর্য, নিয়মানুবর্তিতা, সততা সবটাই গত দেড় সপ্তাহ খুব কাছ থেকে দেখেছেন আয়ারল্যান্ডের কোচ হাইনরিখ মালান।

আরো পড়ুন:

‘একশটা টেস্টই যেন শেষ না হয়’

মুশফিকুরের শততম টেস্ট নিয়ে আশরাফুলের উচ্ছ্বাস

২০০৫ সালের পুচকে মুশফিকুর কেন আজকের বড় তারকা হলেন, দেশের পোস্টারবয় হলেন তা মালান বুঝে গেছেন এই কয়েক দিনেই। অল্পদিনেই তার মনে দাগ কেটেছে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা তারকা।

তার মুখ থেকেই শুনুন মুশফিকুরের পর্দার আড়ালের পরিকশ্রমের গল্প, ‘‘আমি মনে করি তার পেশাদারিত্ব (শেখার মতো)। আমি ভোরে উঠি এবং প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে তাকে নাস্তা করতে দেখি। তারপর সে সবার আগে বাসে ওঠে যায়, মাঠে চলে যায় এবং অন্যরা মাঠে আসার আগেই গা গরম করে, স্ট্রেচিং করে ব্যাটিং অনুশীলন শুরু করে দেয়।”

‘‘আমার মনে হয়, যদি কেউ ধারাবাহিকভাবে পর্দার আড়ালে এমন পরিশ্রম করে যায় দিন-রাত, তখন জানা থাকে, সময়টা এলে পারফর্ম করার রসদ জমা আছে। সেটা দীর্ঘ সময় ধরে প্রমাণও করেছে।’’ – যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলার অপেক্ষায় মুশফিকুর। প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর। তবুও তাকে সম্মান দিতে একটুও কার্পণ্য করেননি মালান, ‘‘প্রথমত, দেশের জন্য ১০০টি টেস্ট ম্যাচ খেলা একটি বিশাল অর্জন। আমরা মাত্র ১০টি টেস্ট খেলেছি। স্থায়ীত্ব বলতে কী বোঝায়, কঠোর পরিশ্রম মানে কী, সেসব ফুটিয়ে তোলে এটি। এটির সঙ্গে চারশ-পাঁচশ প্রস্তুতি পর্বও যোগ করুন, এত বছর ধরে যা সে করেছে। আমাদের জন্য তাই ব্যাপারটি হলো উপলব্ধির যে, টেস্ট ক্রিকেট কতটা পরিশ্রমের। আশা করি, এই পাঁচ দিন তার খুব ভালো কাটবে না। তবে ১০০ টেস্ট খেলার জন্য তাকে অভিনন্দন।”

এই মাইলফলক, যা শুধু একটি সংখ্যা নয়, মুশফিকুরের ২০ বছরের সাধনার প্রতিচ্ছবিও। তবে মাঠে তাকে কঠিন সময় কাটাতে হবে সেই বার্তাও দিয়ে রাখলেন মালান, ‘‘আশা করি আগামী ৫ দিন তার জন্য খুব একটা ভালো যাবে না (হাসি)। তবে তাঁকে অভিনন্দন।’’

সিলেট টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে আয়ারল্যান্ড। ঢাকা টেস্টে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চায় আইরিশরা। মালানের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসী সুর, ‘‘আমরা এখানে (মিরপুর) প্রথম ম্যাচ খেলেছিলাম ২০২৩ সালে। কন্ডিশন কেমন হবে, সে সম্পর্কে আমাদের একটা ভালো ধারণা আছে। আশা করি, আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব এবং এমনভাবে লড়াই করতে পারব, যেন আমাদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারি।”

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘একশটা টেস্টই যেন শেষ না হয়’

যে ক্ষণটার জন‌্য অপেক্ষা ছিল, যে সময়টার জন‌্য প্রতীক্ষা ছিল তার খুব কাছাকাছি ক্রিকেটাঙ্গন। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম যিনি টেস্ট ক্রিকেটের তিন অঙ্কে পৌঁছতে যাচ্ছেন। ১৯ নভেম্বর ঢাকায় আয়ারল‌্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট। এই টেস্টেই শততম টেস্টে মাইলফলক স্পর্শ করবেন মুশফিকুর।

সময় তাই যত ঘনিয়ে আসছে ততই মুশফিকুরকে ঘিরে বাড়ছে উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা ও রোমাঞ্চ। যা ছুঁয়ে যাচ্ছেন মুশফিকুরের কোচদেরও। যাদের সঙ্গে ক‌্যারিয়ারের বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন, তাদের সবার চাওয়া মাইলফলক ছোঁয়া এই সময়টা তিনি উপভোগ করুক প্রাণ খুলে। নিজের আনন্দে খেলুক। শুধু তা-ই নয়, একশ টেস্টেই যেন থমকে না যায় মুশফিকুর ব‌্যাট। অন্তত এক-দুই বছর তাকে টেস্ট অঙ্গনে দেখতে চান প্রত‌্যেকে।  

আরো পড়ুন:

মুশফিকুরের শততম টেস্ট নিয়ে আশরাফুলের উচ্ছ্বাস

লর্ডসে প্রথম, মিরপুরে শততম টেস্ট মুশফিকুর

সোহেল ইসলাম
কোচ, বিসিবির গেম ডেভেলাপমেন্ট বিভাগ

‘‘আমাদের দেশে যারা টেস্ট খেলে তাদের টেস্টের সংখ্যা কম। এটা যদি ইংল্যান্ড হইতো বা অস্ট্রেলিয়াতে হতো বা ভারতেরও হতো, ওর যতদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, এতদিনে দেড়শ টেস্ট খেলে ফেলতো। সেই হিসাবে ইদানিং আমাদের একটু টেস্ট সংখ‌্যা বেড়েছে টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপের কারণে। আগে তো অনেক কম হইতো। সেখান থেকে একশটা টেস্ট খেলা মানে বিশাল কিছু।’’ 

‘‘ওর সফরটা দেখেন আপনি। শুধু একশ টেস্ট বলবেন…ও কতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। এমন না যে অযথাই খেলছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিন্তু আপনার পারফর্ম করে খেলতে হয়। আপনি পারফর্ম ছাড়া থাকলে আপনাকে কিন্তু খেলাবে না।’’

‘‘মুশফিকুরকে তার পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে হয়েছে। আমাদের দেশের প্রথম একজন যে একশ টেস্ট খেলতে যাচ্ছে। এজন‌্য ও নিজেকে প্রস্তুত রেখেছে। ওই ক্ষুধাটা তার ছিল। ওই জেদটা তার ছিল। আমি আশা করব, যদি দলের চাহিদা থাকে এবং তারও খেলার ইচ্ছা তাহলে যেন আরো খেলা চালিয়ে যায়। আরো বেশিদিন মাঠে থাকে। মানে একশটা টেস্ট যেন শেষ না হয়।’’

মিজানুর রহমান বাবুল
কোচ, বিসিবির গেম ডেভেলাপমেন্ট বিভাগ

‘‘মুশফিকুরকে শুভকামনা। একজন পারফেক্ট ব‌্যাটসম‌্যান। একজন পারফেক্ট স্পোর্টসম‌্যান। যাকে আপনি অনুসরণ করলে, যাকে আপনি মেনে চললে, আদর্শ ভাবলে ক‌্যারিয়ারে উন্নতি করতে পারবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট যেভাবে চলে, যে ধাঁচে এগিয়ে যায় সেখানে একজনের ক‌্যারিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে ২০ বছর টিকে থাকা মুশকিল। মুশফিকুর প্রমাণ করেছে যদি আপনার নিবেদন থাকে, ভালো করার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি পারবেন।’’

‘‘ব‌্যাটসম‌্যান মুশফিকুর সব সময়ই বাংলাদেশ দলের সেরা। মিডল অর্ডারে লম্বা সময় বাংলাদেশকে সার্ভ করেছে। দেখুন তাকে চ‌্যালেঞ্জ করে কেউ তাকে রিপ্লেস করতে পারেনি। পারফর্ম করেই সে টিকে আছে এবং খেলে যাচ্ছে। আমি চাই সে সেই ধারাবাহিকতাই ধরে রাখুক। এখনো ফিট আছে। অন‌্যদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করছে। খেলার প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এটা হয় না।’’

‘‘শততম টেস্টটায় সেঞ্চুরি লাগবেই, এমনটাই নয়। হলে ভালো। না হলেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। থামলে হবে না। ওর অভিজ্ঞতাটা এই দলের প্রয়োজন এখন। যতদিন খেলতে মন চায় খেলুক। ও তো পারফর্ম না করে আর খেলবে না। তরুণ একজন ক্রিকেটার যদি তার ডেডিকেশন সম্পর্কে জানতে পারে সেটাই হবে বড় পাওয়া।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘একশটা টেস্টই যেন শেষ না হয়’