সেই বিচার আন্তর্জাতিক মানের ছিল না, এই বিচার আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে: জামায়াত
Published: 17th, November 2025 GMT
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলেছে, এই বিচারে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগ আমলে জামায়াত নেতাদের বিচার আন্তর্জাতিক মানের ছিল না।
আজ সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর বিকেলে ঢাকায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা ও সাজানো মামলা এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে ফাঁসি দেওয়া হয়।মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল, জামায়াতে ইসলামীদণ্ডিত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, এর মাধ্যমে নয়াদিল্লি সরকার ন্যায়বিচার পরিপন্থী অবস্থান নিয়েছে।
রায় নিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিচার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়েছে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। দেশবাসী ন্যায়বিচার পেয়েছে। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার ১৪ শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে গুরুতরভাবে আহত করেছে। এদের অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছে এবং বহু ছাত্র-জনতা চোখ ও হাত-পা হারিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ছিল। আজ তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।’
গোলাম পরওয়ার আশা প্রকাশ করেন, শাপলা হত্যাকাণ্ড, গুম এবং ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যাসহ অন্য সব অপরাধের বিচারও দ্রুত হবে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শেখ হাসিনার সরকার যে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে সেই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেই আজ জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে প্রথম মামলাটির রায় হয়।
রায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।
দলের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে জামায়াত প্রশ্ন তুলে এলেও আজকের রায় নিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের আজকের রায় বাংলাদেশের বিচার ও রাজনৈতিক ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ, এ দেশে কোনো সরকারপ্রধানের সর্বোচ্চ শাস্তির ঘটনা এটাই প্রথম। সরকার বা রাষ্ট্রের কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তিই যে আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তা এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো।’
আওয়ামী লীগ আমলে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিচার নিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা ও সাজানো মামলা এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে ফাঁসি দেওয়া হয়। সেই বিচার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানের ছিল না; দেশ-বিদেশ সব জায়গায় সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আদালত থেকে সাক্ষী গুম করে এবং স্কাইপ কেলেঙ্কারি ও বিদেশ থেকে রায় লিখে নিয়ে জামায়াতের যেসব নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না, এটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক।’
আজকের রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি পোড়ানো নিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শাটডাউন ঘোষণা করে সারা দেশে ককটেল-বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে জনগণের তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা কোথাও দাঁড়াতেই পারেনি। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মা’ছুম, হামিদুর রহমান আযাদ ও আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। ব্রিফিং সঞ্চালনা করেন দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র অপর ধ সরক র আওয় ম ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
২০১৪, ’১৮ ও ’২৪ সালের মতো নির্বাচন হলে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে: গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সর্বশেষ তিনটি (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) বছরের মতো হলে জাতির ভাগ্যে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। আজ শনিবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে খুলনার জিরো পয়েন্ট এলাকায় এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রশাসনের প্রতি নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আপনারা আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ করুন। প্রত্যেক প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পেয়ে নির্বাচনী কাজ করতে পারেন। অতীতে যারা কোনো বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করেছেন, সেসব ওসি ও এসপি পালিয়ে গেছেন। তাঁরা এখন ট্রাইব্যুনালে হাজির। প্রধান বিচারপতি, বায়তুল মোকাররমের খতিব, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনারও পালিয়ে গেছেন। ওসিরা চাকরি ছেড়ে বর্ডার দিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেছেন। আপনাদের বিরুদ্ধেও যদি সেই অভিযোগ আসে, আপনারা কিন্তু পালানোর পথ পাবেন না।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘৫৪ বছরে অনেক দল ও মার্কা দেখেছি। নৌকা, লাঙ্গল, ধানের শীষ দেখেছি। প্রতিটি শাসনে দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে; ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অন্য, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। সুতরাং মানবরচিত বিধান দিয়ে দেশ পরিচালিত হলে দেশে শান্তি আসতে পারে না, এটি প্রমাণিত। তাই আসুন ভবিষ্যতে পবিত্র কোরআনের রাষ্ট্র গড়ি।’
জামায়াতে সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ইতিমধ্যে নতুন প্রজন্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন এনেছে। এর ধারাবাহিকতায় জাতি আগামী নির্বাচনেও দেশে একটি পরিবর্তন আনবে ইনশা আল্লাহ।
খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ওই পথসভার পর মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রাটি খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে গুটুদিয়া, ডুমুরিয়া, খর্ণিয়া, চুকনগর, আঠারোমাইল, রুদাঘরা, রঘুনাথপুর, শাহপুর, ধামালিয়া, জামিরা, ফুলতলা, দামোদর হয়ে শিরোমণি শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
খুলনার জিরো পয়েন্টের পথসভায় সভাপতিত্ব করেন হরিণটানা থানার আমির জি এম আবদুল গফুর। সেখানে বক্তৃতা দেন খুলনা-১ আসনের জামায়াতের প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ফকির ও সেক্রেটারি ইলিয়াস হোসাইন, ডুমুরিয়া উপজেলার আমির মোক্তার হোসেন, ফুলতলা উপজেলার আমির আবদুল আলিম, খানজাহান আলী থানার আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদ, হরিণটানা থানার সেক্রেটারি ব ম মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।