মেয়রের সঙ্গে বিরোধ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে বদলি
Published: 17th, November 2025 GMT
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। আজ সোমবার এ–সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার। এ নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে সিটি করপোরেশন থেকে বদলি করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন মেয়র শাহাদাত হোসেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব জেতী প্রু সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। তাঁকে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে বদলি হওয়া কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। না হয় ওই দিন থেকে তিনি তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন।
বদলি আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। নতুন কর্মস্থলে দ্রুত যোগদান করবেন বলে জানান তিনি।
সিটি করপোরেশনের দুই শীর্ষ কর্তার মধ্যে চলমান বিরোধের মধ্যে শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে সিটি করপোরেশন থেকে সরিয়ে নিতে ২ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন মেয়র। আবার উচ্চতর প্রশিক্ষণ শেষে মেয়র তাঁকে সিটি করপোরেশনে যোগদান করতে দেননি, তা চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এসব বিষয় নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উচ্চতর প্রশিক্ষণ শেষে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য গত ২২ অক্টোবর পত্র দিলেও তা গ্রহণ করেননি মেয়র। উল্টো গৃহকর জালিয়াতির তদন্তে অবহেলার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তাঁকে অপসারণের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করেছেন একদল শ্রমিক-কর্মচারী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—এটা পুনর্নিশ্চিত করেছে এই রায়
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আজ বাংলাদেশের আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা সারা দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনর্নিশ্চিত করেছে—যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ এবং এখনো সেই ক্ষত বহনকারী পরিবারগুলোর জন্য এই রায় সীমিত মাত্রায় হলেও ন্যায়বিচার এনে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
আজ সোমবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছরের নিপীড়নে ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্নির্মাণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। যে অপরাধগুলো নিয়ে বিচার হয়েছে—তরুণ ও শিশু, যাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের আদেশ, যা আমাদের আইন এবং সরকার–নাগরিক সম্পর্কের মৌলিক বন্ধনকে লঙ্ঘন করেছে। এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ—মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারকে আঘাত করেছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁরা শুধুই সংখ্যা নন; তাঁরা ছিলেন আমাদের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। গত কয়েক মাসের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি—এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রায় তাঁদের ভোগান্তিকে স্বীকৃতি দেয় এবং আমাদের বিচারব্যবস্থায় অপরাধীদের জবাবদিহির নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করে।’
বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহির ধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও নাগরিকেরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাঁদের অনেকেই জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন—তাঁদের বর্তমান উৎসর্গ করেছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সামনের পথচলায় শুধু আইনি জবাবদিহি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও জরুরি। প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য মানুষ কেন সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে—তা বোঝা এবং সেই আস্থার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাংলাদেশে শুধু নামেমাত্র টিকে থাকবে না; এটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুদৃঢ় হবে।’