জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড হলেও একই মামলার অন্য আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাজা হয়েছে পাঁচ বছর কারাদণ্ড।

অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হয়ে মামলার অভিযোগ প্রমাণে ভূমিকা রাখার বিষয়টি সাবেক পুলিশপ্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয় বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন।

জুলাই হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম মামলার রায় আজ সোমবার দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো.

শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

রায়ে উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার শাস্তি হয়েছে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ প্রমাণিত হওয়ায়।

ড্র্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্ত, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি, প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল ও গুলি করে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। একই অপরাধে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আল মামুনের শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, বিচারের ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। তাঁর অবদান স্বীকার করার সঙ্গে বস্তুগত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনায় তাঁর সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে। যেখানে অপরাধের সম্পৃক্ততায় সর্বোচ্চ শাস্তি, কিন্তু তাঁর অবদান বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।

রায়ে যে কারণে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির ঘোষণার সময় বলা হয়, এ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। এমনকি তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি ৩৬ দিনের আন্দালনের সব ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর অবদান, স্বীকার করার সঙ্গে বস্তুগত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনায় তাঁর সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে। যেখানে অপরাধের সম্পৃক্ততায় সর্বোচ্চ শাস্তি। কিন্তু তাঁর অবদান বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে তিনিই প্রথম রাজসাক্ষী।

আরও পড়ুনট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে কোনো মামলায় প্রথম ‘রাজসাক্ষী’ ১২ জুলাই ২০২৫

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জবানবন্দিতে বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি ‘লেথাল উইপন’ (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে পেয়েছিলেন তিনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অন্য মামলায় মোট আসামি ২৩ জন। আসামিরা সবাই পুলিশ ও র‍্যাবের সাবেক সদস্য।

আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব পান। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত তাঁকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আইজিপি পদে রেখে দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তাঁর মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল।

যখন দ্বিতীয়বারের মতো মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছিল, তাতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে জেরার সময় তিনি এ কথা বলেছিলেন।

আরও পড়ুনদ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়িয়ে আইজিপি হওয়াতে আগ্রহ ছিল না: জেরায় রাজসাক্ষী মামুন০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় শুনতে আজ সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন জুলাই যোদ্ধা অনেকে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ আল ম ম ন র ব যবহ র কর স ব ক র কর অপর ধ র র অবদ ন চ বছর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপির এক পক্ষের বিক্ষোভ

সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যবাজার) বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা। আজ সোমবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার তিনটি বাজারে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলের অনুসারীরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

আসনটিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক। কৃষক দলের জেলা আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক পদেও তিনি আছেন। আনিসুল হককে মনোনয়ন দেওয়ায় নাখোশ কামরুজ্জামানের অনুসারীরা। আনিসুল হক ও কামরুজ্জামান দুজনের বাড়িই তাহিরপুর উপজেলায়। দুজনেরই তৃণমূলে জনপ্রিয়তা রয়েছে।

মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে আজ বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কামরুজ্জামানের অনুসারীরা। তাহিরপুর সদর, উপজেলার বাদাঘাট ও নতুনবাজারে পালিত এ কর্মসূচি থেকে আসনটিতে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা এবং কামরুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

আরও পড়ুনবিএনপির প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক আটকে বিক্ষোভ১৬ নভেম্বর ২০২৫

তাহিরপুর সদর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (উজ্জ্বল), তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের আহ্বায়ক সাইদুল কিবরিয়া, ইউপি সদস্য তোজাম্মিল হক, উপজেলা যুবদলের সদস্য সামরুল ইসলাম প্রমুখ।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান বলেন, ‘দল থেকেই বলা হয়েছে, এটি চূড়ান্ত মনোনয়ন নয়, তাই মানুষের ভালোবাসা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। মাঠের খবর নিশ্চয়ই আমার নেতা, আমার দলের কাছে যাচ্ছে। আমি আশাবাদী, দল তৃণমূলের দাবি বিবেচনা করবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ