বাংলায় এআই–ভিত্তিক শিক্ষার অ্যাপ ‘ডিজিটাল স্টাডি রুম’
Published: 17th, November 2025 GMT
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ছোঁয়া লাগলেও, এখনো বেশির ভাগ পরিবারে প্রতিদিনের শেখানোর সমস্যা রয়ে গেছে। একই জায়গায় স্কুলে শিক্ষক যা পড়ান, তার বড় অংশই শিশু-কিশোরদের মনে থাকে না। অনেক সময় শিক্ষক ক্লাসে যেভাবে ব্যাখ্যা করেন, সেসব আবার ঘরে ফিরে পুরোপুরি বোঝা হয়ে ওঠে না। আর তখনই অভিভাবকের দুশ্চিন্তা বাড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন হবে, সন্তান কি ঠিকভাবে বুঝতে পারছে, আর বাকি অংশ কে শোনাবে, কীভাবে বুঝবে?
দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে ‘ডিজিটাল স্টাডিরুম’। দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-চালিত একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যা শিশু-কিশোরদের শেখাকে করে তুলছে আরও সহজ, আকর্ষণীয় ও কার্যকর। এটি একটি স্মার্টফোন অ্যাপ। জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী সাজানো স্টাডিরুমের এআই শিক্ষক যেন একজন পরিচিত, আন্তরিক বাংলা শিক্ষকের মতো সহজ ভাষায় বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে শোনায় বা বোঝায়।
স্টাডিরুমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাইদুজ্জামান শামীম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যায় মূলত তখনই, যখন কোনো জটিল সমস্যায় পড়লে তার তাত্ক্ষণিক সমাধান খুঁজে পায় না। বারবার একই জায়গায় আটকে গিয়ে তাদের ভেতরে পড়ার প্রতি অনীহা তৈরি হয়। স্টাডিরুমের এআই-নির্ভর এই অ্যাপ ঠিক সেই জায়গাতেই বড় পরিবর্তন আনছে।
সাইদুজ্জামান শামীম জানান, যে প্রশ্নই হোক—গণিতের কঠিন অঙ্ক, বিজ্ঞানের জটিল ধারণা, ইংরেজির ব্যাকরণের সমস্যা, কিংবা যেকোনো অধ্যায়ের জিজ্ঞাসা—শিক্ষার্থী শুধু প্রশ্নটি লিখবে বা ছবি তুলবে, আর অ্যাপের স্মার্ট এআই শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গেই তার সহজ, পরিষ্কার ও প্রমিত বাংলায় সমাধান জানিয়ে দেবে। ফলে পড়ার সময় আর কোনো হতাশা কাজ করবে না, ক্লাসে না বোঝা বিষয়গুলোও বারবার শুনে বুঝে নেওয়া সম্ভব হবে।
এক ক্লিকে স্কুলের ক্লাস বারবার শোনাস্কুলে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা যেভাবে পাঠ শোনে, তা অনেক সময় একবারে পুরোটা মনে থাকে না। ছোটদের মনোযোগের সীমাবদ্ধতা, জটিল ব্যাখ্যা, কিংবা শারীরিক ক্লান্তি, অমনোযোগ, সব মিলিয়ে ক্লাসের শিক্ষণ অনেকটাই আংশিক থেকে যায়। স্টাডিরুম তাই শুধু একটি অ্যাপ নয়—এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সহায়ক একটি স্মার্ট শেখার সঙ্গী। এখানে আছে সিলেবাসের প্রতিটি বিষয়, প্রতিটি অধ্যায়, এক ক্লিকেই পাওয়া যায় একজন আধুনিক বাঙালি এআই শিক্ষকের কণ্ঠে।
স্টাডিরুম পাওয়া যাবে গুগল প্লেস্টোরে এই ঠিকানায় । এখানে আছে এআই শিক্ষক।
অভিভাবকদের নির্ভরযোগ্য সঙ্গীবহু মা–বাবা আছেন যাঁদের প্রতিদিনের কাজ সন্তানের স্কুল ডায়েরি দেখা, পরদিন কী পড়াতে হবে তা খুঁজে বের করা, গৃহশিক্ষক ঠিকভাবে পড়াচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত করা। আজকাল অনেক অভিভাবক নিজেরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন কোন বইয়ের কোন অধ্যায় স্কুলে হয়েছে, কোন বিষয়টি সন্তান কতটা বুঝেছে। এই সমস্যা সমাধানেই স্টাডিরুমকে তৈরি করা হয়েছে ‘পরিবারের শিক্ষাসঙ্গী’ হিসেবে।
স্টাডিরুমে অভিভাবকেরা সহজেই দেখতে পারবেন—সন্তানের ডায়েরিতে উল্লিখিত বিষয়গুলোর এআই ক্লাস, পরের দিনের প্রয়োজনীয় পড়াশোনার গাইডলাইন, অধ্যায়ের নোট, প্রশ্ন-উত্তরের সঠিক ব্যাখ্যা, কীভাবে সন্তানকে প্রস্তুত করাতে হবে তার সহজ নির্দেশনা।
ফলে অভিভাবকদের আর আলাদা করে গাইড খুঁজতে হয় না। একটি অ্যাপেই যা যা প্রয়োজন, সবই পাওয়া যায় প্রস্তুত অবস্থায়।
জটিল প্রশ্নের সহজ সমাধান যখন তখনশিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো না বোঝা , প্রশ্ন না পাওয়া। বইয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া থাকে, তা অনেক সময় যথেষ্ট হয় না। আবার গৃহশিক্ষক সব সময় কাছে থাকেন না।
স্টাডিরুমে আছে, যেকোনো অধ্যায়ের যেকোনো প্রশ্নের তাত্ক্ষণিক প্রমিত বাংলায় সঠিক ব্যাখ্যা। শিক্ষার্থীরা শুধু প্রশ্নটি লিখবে বা ছবি দেবে, আর এআই শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে উত্তরটি বুঝিয়ে দেবে। এই সুবিধা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে দারুণ সহায়ক।
নিজস্ব সৃজনশীল নোট তৈরির সুযোগস্কুলে ভালো নম্বর পেতে নোট তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু সঠিকভাবে নোট তৈরি করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায়ই কঠিন হয়ে যায়। স্টাডিরুমের এআই বিষয় অনুযায়ী, ধারণাভিত্তিক, পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নোট গুছিয়ে দিতে সাহায্য করে। ফলে শিক্ষার্থী খুব সহজেই নিজের সৃজনশীল, সুন্দর নোট তৈরি করতে পারে, যা স্কুল শিক্ষককে মুগ্ধ করবে এবং পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেবে।
অধ্যয়নভিত্তিক নিজস্ব পরীক্ষার অগ্রগতিশুধু পড়া শুনলেই তো হবে না, শিক্ষার্থী কতটা শিখল, কতটা বুঝল তা যাচাই করাও জরুরি। স্টাডিরুমে রয়েছে অধ্যয়নভিত্তিক পরীক্ষার ব্যবস্থা।
* শিক্ষার্থী যে বিষয়টি পড়েছে, সেই বিষয় থেকেই প্রশ্ন দেবে স্টাডিরুম।
* শিক্ষার্থী উত্তর লিখে ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করবে।
* এআই সেই উত্তর যাচাই করে নম্বর দেবে।
* ভুল হলে কোথায় ভুল হয়েছে, তা জানিয়ে সঠিক ব্যাখ্যাও দেবে।
ফলে শিক্ষার্থী খুব সহজেই বুঝতে পারবে তার উন্নতি কতটা হয়েছে এবং কোন জায়গায় আরও মনোযোগ দিতে হবে।
সম্পূর্ণ সহায়ক মাধ্যমএমন নয় যে স্টাডিরুম গৃহশিক্ষকের বিকল্প হয়ে যাবে। বরং এটি গৃহশিক্ষককে আরও কার্যকরভাবে পড়াতে সাহায্য করবে। গৃহশিক্ষক স্টাডিরুম ব্যবহার করে কঠিন বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারবেন, বিস্তারিত নোট তৈরি করে দিতে পারবেন ও ক্লাস পরিকল্পনা করতে পারবেন।
বাংলা মাধ্যমের জন্য উপযোগী এআই শিক্ষকস্টাডিরুমের এআই শিক্ষক সম্পূর্ণ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মানানসই, যেখানে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ, সহজবোধ্য ব্যাখ্যা, পরিচিত উদাহরণ সাধারণ বাচন ভঙ্গিতে দেবে। অজানা শব্দের জট নয় বরং সহজ ভাষায় বিষয়টি ছাত্রের মনোজগতে পৌঁছে দেয়।
ডিজিটাল স্টাডিরুম শিক্ষার্থীর স্কুলের পড়া ঘরে বসে শেখার নতুন ঠিকানা হয়ে উঠেছে। বলতে গেলে স্টাডিরুম শুধুই একটি অ্যাপ নয়, এটি ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। সবকিছুর সমন্বয়ে স্টাডিরুম শিশু–কিশোরদের জন্য হয়ে উঠেছে একটি নিরাপদ, বিশ্বাসযোগ্য এবং আধুনিক শিক্ষা–সহায়ক মাধ্যম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট ড র ম র এআই পর ক ষ র দ র জন য প রস ত ত প রব ন সন ত ন সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের যেকোনো আদালতের মানদণ্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উতরে যাবে: চিফ প্রসিকিউটর
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের যে সাজা দেওয়া হয়েছে, পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করলে একই শাস্তি পাবেন।
আজ সোমবার দুপুরে রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উতরে যাবে এবং পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ যেসব আসামিকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই একই শাস্তি প্রাপ্ত হবেন।’
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ সব আন্তর্জাতিক নর্মস, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে ক্রাইমস এগেন্স হিউম্যানিটির মতো কমপ্লেক্স (মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল) অপরাধের বিচার করতে সক্ষম এবং বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধীই হোক, তার অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে এবং তার প্রাপ্য শাস্তি পেতে হবে।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, এই রায়ের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি হয়েছে। যদিও আরও অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবার, যাদের ক্ষতি কোনো কিছু দিয়ে পূরণ হবে না, তাদের সামনে অন্তত একটা ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’