ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘিরে নাশকতা ঠেকাতে সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল সরকারের। সে কারণে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণার পর তেমন নাশকতা করতে পারেনি।

আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এমনটাই আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বৈঠকে এ-ও আলোচনা হয় যে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের সাজা হওয়ার পরও হয়তো কৌশলের অংশ হিসেবে দলটির কেউ মাঠে নামেননি। এখনই শক্তি ক্ষয় করতে চান না তাঁরা। সামনে জাতীয় নির্বাচনের সময় শক্তি দেখাতে পারেন। সে কারণে রায়ের দিন দেশের কোথাও তেমন নাশকতা চালাননি।

বৈঠকে আরও আলোচনা হয়, প্রথম সারির কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা তাদের অনলাইনে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করছে। আদালত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ করলেও তা কেউ শুনছে না। বেশ কয়েকটি অনলাইনও হাসিনার বক্তব্য প্রচার করছে। হাসিনার বক্তব্য বা ভাষণ অনলাইনে যাতে কেউ প্রচার না করে, সে জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পত্রিকা ও অনলাইন মালিকদের শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার না করতে বলা হবে।

সভায় আরও আলোচনা হয়, বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলেও দ্রুত তাঁরা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। বিগত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন বিচারকের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এসব বিচারক আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের দ্রুত জামিন দিয়ে দিচ্ছেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি আর ভাঙচুর করতে দেবে না সরকার। কেউ বাড়ি ভাঙতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করবেন। প্রয়োজনে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হবে।

সভায় আলোচনা হয়, এর আগে যে দুবার ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি ভাঙচুর করা হয়েছে, দেশে-বিদেশে সরকারকে বিব্রত হতে হয়েছে।

আজ দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা যখন দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা চলছিল। সভায় বিষয়টি আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, ৩২ নম্বর সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর করতে দেওয়া হবে না। তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

সভায় উপস্থিত দুজন নীতিনির্ধারক বলেন, বাড়ি ভাঙা হলে শেখ হাসিনার মামলার সাজার বিষয়টি অন্যদিকে সরে যাবে। তখন মানুষের মধ্যে বাড়ি ভাঙা নিয়ে আলোচনা হবে। রায় নিয়ে আলোচনা হবে না। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ৩২ নম্বর বাড়ি আর ভাঙতে দেবে না অন্তর্বর্তী সরকার।

সভা শেষে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘিরে দেশে কোনো আতঙ্ক নেই বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবকিছু স্বাভাবিক। সড়কে কোনো আতঙ্কে নেই। তবে ছোটখাটো দুই–একটা ঘটনা ঘটছে।’

আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থানের বিষয়ে উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বলা দরকার যে তোমরা স্কুল–কলেজে পড়াশোনা করো। এটা দেখার জন্য আমরা আছি, আমরা দেখব।’ উপদেষ্টা বলেন, অনেকে শিক্ষার্থীদের উসকে দেন। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা ও উসকানি দেয় বলে অভিযোগ করেন উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ খবর পরিবেশনের আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা বলেন, বরিশাল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ কিছুটা কঠিন জায়গা। তবে ওই সব জেলায় এখন পর্যন্ত বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু করাত দিয়ে গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বড় গাছ হওয়ায় সরাতে সময় লাগে। মহাসড়ক থেকে সরাতে সময় লাগছে। তবে বড় কোনো ঘটনা নেই বলে জানান উপদেষ্টা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রায় ঘিরে কেউ কেউ ককটেল ফাটাচ্ছে। যারা ফাটাচ্ছে তারা ধরা পড়ছে।’

গাড়িতে আগুন ও ককটেল নিক্ষেপকারীদের গুলি করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নির্দেশ দিয়েছেন কেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আত্মরক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিজে বিপদে থাকলে গুলি পরিচালনা করার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের। আপনাকে মারতে এলে, আপনাকে আক্রমণকারীদের নিহত করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। সব দেশে সব সময় সর্বকালে এটি চালু রয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট রক ষ ক র সরক র র ধ নমন ড ন শকত

এছাড়াও পড়ুন:

এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার, যানবাহনের সংখ্যা কম

মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতু ও ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে । এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও তার সংখ্যা কম।

শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, অনলাইনে ঘোষিত কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচির কারণে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার আশপাশে ও ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা টোল প্লাজার আশপাশের সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েতে টহল দেওয়া শুরু করেছেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে।

গতকাল রোববার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শরীয়তপুরের পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
 
এদিকে আজ সকাল থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়েছেন ছাত্রশিবির ও বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

আজ সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, যানবাহন চলাচল করছে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী যানবাহন পদ্মা সেতু পারাপার হচ্ছে। তবে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা কম।

আরও পড়ুনপদ্মা সেতুর সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ, ট্রাকে আগুন, যানবাহন চলাচল বন্ধ১৩ নভেম্বর ২০২৫

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের যানবাহন চলাচল করছে। পথে কোথাও যানবাহন বাধার মুখে পড়েনি। তবে যাত্রীর উপস্থিতি কম। যানবাহনও কম চলাচল করছে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে পদ্মা সেতু দিয়ে। যেহেতু একটি সংগঠনের ঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে, তাই পদ্মা সেতু এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নিরাপত্তার জন্য টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনজুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় আজ৫৭ মিনিট আগে

পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকা যাওয়ার পথে যাত্রাবিরতি করেছিলেন। তখন আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত শরীয়তপুরে পদ্মা সেতুর আশপাশে ও এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। আমরা চেষ্টা করছি জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধানমন্ডি ৩২: সাউন্ড গ্রেনেড ফাটার পর ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীরা
  • ‘৩২ নম্বর ধূলিসাৎ না করা পর্যন্ত ফিরব না’
  • শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়: গোপালগঞ্জে মিছিল, সড়ক অবরোধের চেষ্টা
  • হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে আতঙ্ক নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়া ২টি বুলডোজার আটকে দিল সেনাবাহিনী
  • শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার
  • পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, প্রভাব পড়েনি শাটডাউনের
  • এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার, যানবাহনের সংখ্যা কম