চট্টগ্রাম বন্দরের দুই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে বিদেশিরা
Published: 17th, November 2025 GMT
নানা আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল নিয়ে চুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা নিয়ে একটি এবং ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে অন্য চুক্তিটি হয়।
আজ সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত পৃথক দুই অনুষ্ঠানে চুক্তি দুটি সই হয়েছে। তবে স্বাক্ষরটা প্রকাশ্যে হলেও চুক্তিতে বিস্তারিত কী কী শর্ত রয়েছে এবং কী কী তথ্য প্রকাশ করা যাবে না, সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। যদিও নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেছেন, চুক্তির বিভিন্ন শর্তের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে। এদিকে চুক্তির বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পক্ষ বিবৃতি দিয়েছে।
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে করা চুক্তিতে সই করেন ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। এ সময় ডেনমার্কের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার। আর বাংলাদেশের পক্ষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.
অন্যদিকে পানগাঁও নৌ টার্মিনালবিষয়ক চুক্তিতে সই করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান ও মেডলগ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ টি এম আনিসুল মিল্লাত। এখানেও নৌপরিবহন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি অনুসারে, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য এটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় এ টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কোম্পানিটি ৫৫ কোটি ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। চুক্তিটি স্বাক্ষরের পরপরই ২৫০ কোটি টাকা ‘সাইনিং মানি’ হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে, ২২ বছরের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএর হাতে। এ টার্মিনালে মোট ৪ কোটি ডলার বা প্রায় ৪৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে মেডলগ। এ ক্ষেত্রে সাইনিং মানি হিসেবে তারা বাংলাদেশকে দিয়েছে ১৮ কোটি টাকা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, লালদিয়া টার্মিনালে বছরে আট থেকে দশ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো–নামানোর সক্ষমতা থাকবে। এর মধ্যে আট লাখ পর্যন্ত প্রতি একক কনটেইনারে ২১ ডলার (প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা) করে পাবে সরকার। আর আট লাখের বেশি কনটেইনার ওঠানো–নামানো হলে প্রতি একক কনটেইনারের জন্য পাবে ২৩ ডলার করে।
এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে চুক্তি নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি তা দূর হবে।এম সাখাওয়াত হোসেন, নৌপরিবহন উপদেষ্টাঅন্যদিকে পানগাঁও নৌ টার্মিনালে বছরে ১ লাখ ৬০ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে বলে জানিয়েছে মেডলগ। প্রতি একক কনটেইনার থেকে ২৫০ টাকা করে পাবে সরকার।
লালদিয়া টার্মিনালের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে চুক্তি নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি তা দূর হবে।’
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়নকেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব।’ এ সময় আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন বন্দর বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী ছিল ডেনমার্ক। এখন সেই সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায়ে রূপ নিয়েছে।
বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া মায়ের্সক লাইনের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল; সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে।
পানগাঁও টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগের হাতে তুলে দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অতিথিরা। আজ সোমবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট অন ষ ঠ ন র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর–সংলগ্ন মিরপুর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক, সতর্ক অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের দিন রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন একদল বিক্ষোভকারী। সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাঁদের বাধা দিয়েছে। এ নিয়ে সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকাসংলগ্ন মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে দিনভর সংঘর্ষের পর অবশেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
আজ সোমবার রাত আটটার পর মিরপুর থেকে নিউমার্কেটগামী সড়কটি খুলে দেওয়া হয়। আর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিউমার্কেট থেকে মিরপুরগামী সড়কটি খুলে দেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের সড়কটিতে ছোট ছোট ইটের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের কাউকে দেখা যায়নি। পরে রাত ১১টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়কটির প্রবেশমুখে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সড়কটি দিয়ে কাউকে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি এলাকাটিতে বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক রাতে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভকারীদের সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিয়েছি। যান চলাচল শুরু হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে রাতেও পুলিশের সতর্ক অবস্থান থাকবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড হয়। সাবেক আইজিপি (পুলিশ মহাপরিদর্শক) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের হয় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড (তিনি রাজসাক্ষী বা অ্যাপ্রুভার ছিলেন)।
এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রোববার দিবাগত রাত থেকেই বিভিন্ন দল, সংগঠন, প্ল্যাটফর্ম ও ব্যক্তি পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ওই বাড়িটি ভাঙার ঘোষণা দেন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
রাত ১০টার পর নিউমার্কেট-মিরপুর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়