বিচারকের ছেলে হত্যার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ
Published: 17th, November 2025 GMT
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারকের ছেলেকে ছুরিকাঘাতে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারকদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে মীর মশাররফ ভবনের সামনে আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে আইন, আল ফিকহ অ্যান্ড ল, ল অ্যান্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ
মেক্সিকোতে জেন-জি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত ১২০
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ছেলেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে। একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে জুডিশিয়ারি।
তারা বলেন, রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের আশ্রয়স্থল ও ভরসার জায়গা আদালত। আজ তার নিরাপত্তা হুমকির মুখে। তার নিরাপত্তা যেহেতু রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয়েছে, সাধারণ মানুষ সেখানে শঙ্কিত। রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষসহ সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
তারা আরো বলেন, যেখানে রাষ্ট্র আদালতকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কিভাবে দিবে? এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটাকে দ্রুত বাস্তবায়ন করে জুডিশিয়ারিকে আলাদা করে বিচারপতিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ন্যায়বিচার যাতে মানুষ পায়, তার সমস্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্র যদি এর যথাযথ ব্যবস্থা না করে এবং যে হত্যাকারীকে যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন না করে, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
তাদের দাবি, দ্রুত বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের যথাযথ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে। অন্যথায়, বিচারকবর্গ কলম বিরতির যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, সেটার সঙ্গে আমরা সংহতি ঘোষণা করে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
আইন বিভাগের পক্ষ থেকে ইমাম হোসেন বলেন, “অবিচারের রাষ্ট্র চলছে। একজন বিচারকের পরিবারের উপর যে নৃশংস ঘটনার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি সংকটকে আমাদের সামনে হাজির করেছে। যদি বিচারকরা নিঃসংকোচে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করতে পারেন, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোনভাবেই আমরা আশা করতে পারি না।”
তিনি বলেন, “বিচার বিভাগের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির পারিবারিক নিরাপত্তা যেমন দরকার, তেমনি দরকার তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। একজন দায়রা জজ আদালতের বিচারককে ভয়ঙ্কর সব অপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করতে হয়। যদি তাদের রাষ্ট্র সিকিউরিটি দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের দেশে হওয়া সব ভয়ঙ্কর অপরাধের বিচার করতে আমরা ব্যর্থ হব এবং অপরাধের বিস্তার আরো বাড়বে।”
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে তার ছেলেকে হত্যা ও স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত লিমন মিয়াকে গ্রেফতার করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শনিবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মামুনুর রশিদ এ আদেশ দেন।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এ রায় সামনের দিনের জন্য উদাহরণ: সালাহউদ্দিন আহমদ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় যে রায় হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, এই বিচার, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, আসামিদের অপরাধের তুলনায় এই সাজা যথেষ্ট কম। কিন্তু, আইনে এর ওপরে কোনো সাজা নেই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেলা ৩টার দিকে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রতিক্রিয়া জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে- ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক, যত দীর্ঘদিনই রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে পরিচালিত করুক, ক্ষমতা ভোগ করুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতেই হবে।
আরও যেসব মামলা আছে, সেই মামলাগুলোতেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু, এটা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ। ভবিষ্যতে যাতে এই রাষ্ট্রে কেউ আর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম না করতে পারে, ফ্যাসিস্ট না হয়ে উঠতে পারে, একনায়কতন্ত্র যাতে প্রতিষ্ঠা না হয়, তার একটি উদাহরণ। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা। শুধু অতীতের জন্য বিচার নয়, এটা মনে রাখতে হবে।
ঢাকা/রফিক