কুষ্টিয়ায় টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার নারী চিকিৎসক শারমিন সুলতানা বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার পর পুলিশ থানা থেকে স্বামীর জিম্মায় তাঁকে হস্তান্তর করে। রাতেই তিনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

চিকিৎসক শারমিন সুলতানার বাড়ি ফেরার তথ্য নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন। তিনি আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নারী চিকিৎসককে যাঁরা মারধর করেছেন, তাঁরা জোরালোভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি যে এই নারী চিকিৎসকই তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কোনো প্রমাণও দেখাতে পারেননি। আর চিকিৎসক দম্পতি যদি কোনো মামলা দেন, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শারমিন সুলতানার স্বামী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘টোটালি ফেক ঘটনায় মারধর করা হয়েছে। আমরা নারী নির্যাতনের অভিযোগে থানায় মামলা করব।’

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া শহরের অর্জুনদাস আগরওয়ালা সড়কে লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়মিত চেম্বার করেন চিকিৎসক শারমিন সুলতানা। গতকাল দুপুরে লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে যাওয়ার পর আগে থেকে সেখানে অবস্থান করা একদল নারী তাঁর ওপর হামলা করেন। সেখানে ১৫ থেকে ২০ জন নারী তাঁকে টেনেহিঁচড়ে সড়কের ওপর নিয়ে যান। সেখানে চুলের মুঠি ধরে তাঁর ওপর হামলা করেন। বেশ কয়েকজন তাঁর পোশাক ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রতারণার নানা অভিযোগ তুলে কয়েকজন মারধরও করেন তাঁকে।

আরও পড়ুননারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তার ওপর মারধর, রক্ষা পাননি চিকিৎসক স্বামীও১৫ ঘণ্টা আগে

খবর পেয়ে ওই নারী চিকিৎসককে উদ্ধার করতে এসে তাঁর স্বামীও মারধরের শিকার হন। পরে পুলিশ গিয়ে এই দম্পতিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। যাঁরা মারধর করেছিলেন, তাঁরাও থানায় যান। গতকাল বিকেল থেকেই হামলার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। মারধরে অংশ নেওয়া একাধিক নারী অভিযোগ করেন, চিকিৎসা নিতে এলে ওই নারী চিকিৎসক চাকরি দেওয়া কথা, বিদেশে পাঠানোর কথাসহ নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি চাকরি দিতে পারেননি। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না।

আজ সকালে ওসি মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতারণার অভিযোগ করা নারীরা গতকাল রাতে থানায় এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা কথা হয়। টাকা লেনদেনের ঘটনা মেহেরপুরে ঘটেছে বলে তাঁরা জানান। তবে এই টাকা লেনদেনের কোনো অডিও–ভিডিও বা ডকুমেন্ট বা বিকাশে লেনদেন করেছেন কি না, সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। আর এই নারী চিকিৎসকই সেই চিকিৎসক কি না, সেটাও আইডেন্টি করতে পারেননি। জোরালোভাবে বলতে পারেনি। তাঁরা অনুমাননির্ভর বলছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক প র নন গতক ল র ওপর ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের উপস্থিতিতে পল্লি চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ, ৩ দিনেও মেলেনি খোঁজ

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক পল্লি চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এর পর তিন দিনেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

গত শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের হাতি চামটার ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি তরিকুল ইসলামকে টেনেহিঁচড়ে একটি অটোভ্যানে তুলছেন। অপহরণের সময় সেখানে মাথায় হেলমেট এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ছিলেন। আশপাশে আরো কয়েকজন মানুষ ছিলেন। তরিকুল তাদের সাহায্য চাইলেও তারা এগিয়ে আসেননি। এক ব্যক্তি ভ্যানটি চালিয়ে নিয়ে যান। দুর্বৃত্তদের বলতে শোনা যায়, ‘এখানে প্রশাসনের লোক আছে।’ 

অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলাম ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর কুটিপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। ভাতগ্রাম বাজারে তার চেম্বার ও ওষুধের দোকান আছে। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন।

অপহরণের পর তিন দিন পার হলেও পুলিশ তরিকুল ইসলামকে উদ্ধার করতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বজনরা। অপহরণকারীরা কয়েক বার ফোন দিয়ে অপহৃত তরিকুলের ছোট ভাই হিরুর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে তরিকুলের ছোট ভাই হিরু মিয়া সাদুল্লাপুর থানায় আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাত-আট জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, তরিকুল ইসলামের ওষুধের দোকানে সুমন নামের এক ব্যক্তি ৬ মাস কাজ করেছেন। তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হলে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি টাকা দাবি করে আসছিলেন তরিকুলের কাছে। এ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকও হয়। গত শুক্রবার বিকেলে তরিকুল বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে ভাতগ্রাম বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে সুমনসহ স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে মারধর করেন এবং জোরপূর্বক অটোভ্যানে তুলে নিয়ে যান।

বাদী হিরু মিয়া বলেছেন, অভিযোগ দেওয়ার দুই দিন পরও আমার ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ, সেখানে সাদুল্লাপুর থানার এক এএসআই উপস্থিত ছিলেন। অপহরণকারীরা সবার পরিচিত। দিনে দুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কারণে ভাইকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। তার দুই মেয়ে শুধু কাঁদছে। 

তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ রবিবার দুপুরে অপহৃত তরিকুলের কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকে দুর্বৃত্তরা ফোন করে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমার বড় ভাইকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হোক। 

রবিবার রাতে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার সাংবাদিকদের বলেছেন, অপহরণের সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির উপস্থিতির কথা শুনেছি। কিন্তু, স্পষ্ট নয়। অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলামকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলছে। 

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারী চিকিৎসককে টেনে-হিঁচড়ে সড়কে এনে মারধর
  • কুষ্টিয়ায় প্রতারণার অভিযোগে নারী চিকিৎসককে মারধর
  • নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তার ওপর মারধর, রক্ষা পাননি চিকিৎসক স্বামীও
  • অপহরণের শিকার সেই পল্লী চিকিৎসক উদ্ধার
  • পুলিশের উপস্থিতিতে পল্লি চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ, ৩ দিনেও মেলেনি খোঁজ
  • গাইবান্ধায় পল্লিচিকিৎসককে অপহরণের ভিডিও ভাইরাল
  • স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার নেতৃত্বে হাসপাতালে হামলার অভিযোগ