জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন সানায়ে তাকাইচি
Published: 21st, October 2025 GMT
জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কট্টরপন্থি রক্ষণশীল ব্যক্তিত্ব সানায়ে তাকাইচি নির্বাচিত হয়েছেন। চলেছেন। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দেশটির পার্লামেন্টে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিবিসির।
জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ- উভয় কক্ষেই তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী সানায়ে তাকাইচি নিম্নকক্ষে পেয়েছেন ২৩৭ ভোট, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রয়োজনীয় ২৩৩ ভোটের চেয়ে বেশি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপানের প্রার্থী ইউশিহিকো নোদা পেয়েছেন ১৪৯ ভোট।
আরো পড়ুন:
জাপানের ইয়ামানাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন পাবিপ্রবির ৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
৩৬ বছরে প্রথমবার ব্রাজিলকে হারাল জাপান
রান অফ ভোটের পর, পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষও তাকাইচিকে জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে।উচ্চকক্ষে তাকাইচি ১২৫ ভোট পেয়েছেন, যা তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে একটি বেশি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলছে, জাপানে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ ইতিহাসে এই প্রথমবার দেশটি শীর্ষপদে একজন নারীকে নির্বাচিত করেছে। পুরুষ নেতৃত্বাধীন জাপানের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন তাকাইচি।
গতকাল সোমবার, জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও প্রধান বিরোধী দল জাপান ইনোভেশন পার্টি জোট সরকার গঠনে চুক্তি সাক্ষর করে। এ চুক্তির ফলে তাকাইচির প্রধানমন্ত্রী হওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে, শঙ্কা ছিল প্রধানমন্ত্রী হতে দুই দলের সব ভোটের পরও আরও দুই ভোট দরকার ছিল তার।
এ মাসের শুরুতে তাকাইচি ক্ষমতাসীন দল এলডিপির নেতা নির্বাচিত হন। তবে তার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার থেকে দীর্ঘদিনের সহযোগী দল কোমেইতো সরকার থেকে সরে দাঁড়ালে রাজনৈতিক অচলাবস্থায় পড়ে জাপান। শুরু হয় নতুন জোট সরকার গঠনের আলোচনা।
এদিকে, তাকাইচি এলডিপির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাকাইচির জয়কে তিনি ‘অসাধারণ খবর’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তাকাইচিকে ‘খুবই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব যিনি ব্যাপক জ্ঞান ও শক্তির অধিকারী’ বলে প্রশংসা করার করেন। তাকে জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুভেচ্ছা জানান। যদিও তাকাইচি সেসময় এ পদে নিশ্চিত হননি।
জবাবে তাকাইচি পোস্টে বলেছিলেন যে, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বার্তায় ‘খুব সন্তুষ্ট’ এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করার জন্য (ট্রাম্পের সঙ্গে) একসঙ্গে কাজ করার আশা করছেন।
তাকাইচি এখন পর্যন্ত নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ মাসের শুরুতে বলেছিলেন, মার্কিন শুল্ক আরোপ সত্ত্বেও তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যা একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিকল্পনা করছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত কর ছ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলনের মুখ থেকে রাকসুর জিএস আম্মার
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। আন্দোলনের সময় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হন। আন্দোলনজুড়ে ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে। জুলাই–পরবর্তী ক্যাম্পাসেও নিজের সেই পরিচিতি ধরে রেখেছিলেন। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীবান্ধব নানা দাবি আদায়ে ছিলেন সোচ্চার।
পোষ্য কোটা ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশের বিরাগভাজন হয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে অভাবনীয় জয় পেয়েছেন সালাহউদ্দিন আম্মার। তিনি গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের মোট প্রাপ্ত ভোটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জিএস এবং সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে হয়েছেন সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি।
সালাহউদ্দিন আম্মার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলায়। তিনি ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থীও হয়েছিলেন। তিনি দুটি পদে বড় ব্যবধানে জিতেছেন। আর ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে একজন এবং স্বতন্ত্র থেকে সম্পাদক পদে একজন বাদে রাকসুর ২৩টি পদের মধ্যে ২০ পদে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল জিতেছে।
আম্মার পরিচিতি পান ফিলিস্তিন ইস্যুতেসালাহউদ্দিন আম্মার ক্যাম্পাসে এসে পরিচিতি পান ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি আন্দোলনের মাধ্যমে। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দাবিতে প্যারিস রোডে তিনি আর্ট পারফরম্যান্স করেছিলেন। পরে জুলাইয়ে আন্দোলন আরও বেশি পরিচিতি এনে দেয় তাঁকে। কোটা আন্দোলনের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমন্বয়ক কমিটি আন্দোলন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন। তখন আন্দোলনে ভাটা পড়লে তিনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে ঘোষণা দেন। তাঁর ডাকে আবারও রাজপথে নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা।
একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ সমন্বয়কের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্যতম একজন ছিলেন তিনি। আন্দোলনজুড়ে কখনো হ্যান্ডমাইকে, কখনো কাফনের কাপড় পরে স্লোগান দিয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ক্যাম্পাসে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে প্রতীকী ফাঁসির মঞ্চ, পোষ্য কোটা বাতিল, ৯ দফা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন।
আরও পড়ুনরাকসুর ২৩ পদে কার সঙ্গে কার লড়াই হলো, জয়ের ব্যবধান কত১৭ অক্টোবর ২০২৫আম্মার ছিলেন পোষ্য কোটাবিরোধী আন্দোলনেজুলাই আন্দোলনের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ছিল পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন। সালাহউদ্দিন আম্মার পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে ছিলেন। এ নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনের একপর্যায়ে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি প্রশাসন ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করা হয়। সেদিন রাতে উপাচার্য পোষ্য কোটা একেবারে বাতিল করার ঘোষণা দেন। পরে রাকসু নির্বাচনের আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ১০ শর্তে প্রশাসন পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনলে শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নামেন। ২০ সেপ্টেম্বর পোষ্য কোটা নিয়ে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেদিন একজন সহ-উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। সহ–উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেও রাখা হয়। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রাতভর শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
পোষ্য কোটা নিয়ে আন্দোলনের ফলে সালাহউদ্দিন আম্মারকে প্রশাসন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়াতে হয়। শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারী হিসেবে আম্মারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন।
আরও পড়ুনযে সম্মান নিয়ে আজ ঢুকছি, সেই সম্মান নিয়ে বের হতে চাই: রাকসুর জিএস আম্মার১৭ অক্টোবর ২০২৫তদন্ত কমিটির বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি তাদের মতো তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করছে। সংকটটা তো প্রশাসন তৈরি করেছে। এই সংকট যদি তারা সৃষ্টি না করত, তাহলে আজকে আমাদের এ ধরনের একটি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতো না।’
রাকসু নির্বাচনের সময় সালাহউদ্দিন আম্মার ও তাঁর প্যানেল ঘিরে আলোচনা ওঠে তাঁরা শিবিরের ‘বি টিম’ হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালো বলতে পারবেন ন্যারেটিভ আছে কি না। আমরা তো সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়াই করছি। তো এটা বলার আর কোনো সুযোগ নেই। তবে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইবে, তারা তো চাইবেই।’
৯ দফা দাবি নিয়ে মাঠে ছিলেন আম্মারপূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার রোডম্যাপ ঘোষণা; পরীক্ষায় রোলবিহীন খাতা মূল্যায়ন ও খাতা চ্যালেঞ্জের সুযোগ; ক্যাম্পাসে সপ্তাহে ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে চলতি বছর জুন থেকে আন্দোলন করেন আম্মার। এই ৯ দফা তিনি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যেও রেখেছিলেন।
রাকসু নির্বাচনে জিএস পদে সালাহউদ্দিন আম্মার ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম শিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৯ ভোট। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে তিনি সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়েছেন। এই নির্বাচনে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ বেশি ভোট পেয়েছেন আম্মার।