রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ শুধু একটি কল্পনা নয়—এটি একেবারে বাস্তব, সুগঠিত ও মানবিক এক সমাজকাঠামোর রূপরেখা। নারীর স্বাধীনতা, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং মানবিক মূল্যবোধের ওপর গঠিত এই সমাজ-চিত্র আজকের বিশ্বেও প্রাসঙ্গিক।

শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে বিশেষ বক্তৃতায় যুক্তরাজ্যের এডিনবরার ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড.

লিন্ডসে হোনার এসব কথা বলেন। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কালজয়ী রচনা ‘সুলতানার স্বপ্ন’র ইউনেস্কো মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড স্বীকৃতি উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে। 

ড. লিন্ডসে হোনার বলেন, ‘সুলতানার স্বপ্ন’ কেবল একটি সাহিত্যকর্ম নয়, এটি এক বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার দলিল। এটি আমাদের দেখায়—কল্পনা কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠতে পারে। পরিবর্তন সম্ভব—এই বিশ্বাসই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।

তার মতে, রোকেয়ার নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ব্রিটেনের বর্তমান নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ—বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর, প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা প্রতিরোধের মতো ইস্যুগুলোতে। অথচ রোকেয়ার চিন্তাধারাগুলো ছিল ব্রিটিশ শাসিত শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।

হোনার বলেন, রোকেয়ার স্বপ্নে যে ধরনের শান্তিপূর্ণ, সহযোগিতামূলক ও পরিবেশবান্ধব রাষ্ট্রের কল্পনা করা হয়েছে, তা শিল্পায়ননির্ভর পাশ্চাত্য মূল্যবোধের এক অনন্য বিকল্প হাজির করে। এটি আমাদের ভাবতে শেখায়—আমি কেমন এক পৃথিবী গড়তে চাই?

আলোচনায় ড. হোনার ‘সুলতানার স্বপ্ন’-এর অভিবাসী সুরক্ষা, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মৃত্যুদণ্ডবিরোধী মনোভাবের দিকগুলোও তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, রোকেয়া কেবল নারীবাদীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক মানবিক রাষ্ট্রচিন্তার অগ্রদূত। যৌন সহিংসতা এবং জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তার বিষয়গুলো আজকের নারীবাদে গুরুত্বপূর্ণ। সুলতানার স্বপ্ন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভবিষ্যৎ কল্পনা করাও রাজনৈতিক কাজ। এটি কেবল অতীতের প্রতিবাদ নয়, বরং আগামীর রূপরেখা। 

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ইউনেস্কো থেকে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ স্বীকৃতি আদায় এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। তিনি বলেন, ইউনেস্কোর মাধ্যমে ‘সুলতানার স্বপ্ন’–এর যে বার্তা, সেটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে। দেশে নতুন প্রজন্মের মধ্যে, সমাজের মধ্যে যেন আরও বেশি ছড়িয়ে দেওয়া যায়–সে লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও তৎপর রয়েছে। 

জাদুঘরের সহকারী পরিচালক তাবাসসুম নিগার ঐশীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

১৯০৫ সালে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ২০২৪ সালের মে মাসে রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এই স্বীকৃতির জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। জাদুঘরের পক্ষ থেকে রোকেয়ার রচনার পাঠচর্চা ও ব্যাকগ্রাউন্ড প্রাসঙ্গিক প্রচারের জন্য বহু বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর ইউন স ক আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’

ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ