চকরিয়ায় সংরক্ষিত বন উজাড়ের বিষয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ
Published: 28th, May 2025 GMT
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইজারা নিয়ে সংরক্ষিত বন উজাড়সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার সকালে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুল কবির স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়োজিত পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ১৬ জুলাইয়ের আগে কক্সবাজার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলাকালে তদন্তের স্বার্থে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতাও দিয়েছেন আদালত।
২০ মে প্রথম আলো অনলাইনে ‘কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইজারা নিয়ে সংরক্ষিত বন উজাড়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চকরিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের খুটাখালী বাজার থেকে ডানে খুটাখালী খাল থেকে বালু উত্তোলনের কারণে গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত গর্জন বন। সংবাদে খুটাখালী ইউনিয়নের হরিখোলা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী লিটন, সাইফুলসহ ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন করে। খালে বালু নেই, তাঁরা মূলত ইজারা নিয়ে বনের বালু তোলেন। এভাবে বালু তোলায় বনভূমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলার আদেশে বন উজাড় করার ঘটনার সঙ্গে কোন কোন আসামি জড়িত কিংবা অপরাধের সহযোগী ও প্ররোচনাদাতা কে বা কারা; অপরাধ কোন কোন জায়গায়, কোন কোন তারিখ ও সময়ে সংঘটিত হয়েছে এবং অপরাধ সংঘটনের নেপথ্যে কে বা কারা জড়িত, আদালত তা জানতে চেয়েছেন। মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তার নেওয়া সাক্ষীদের জবানবন্দি ও সংগ্রহ করা অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং ডিজিটাল সাক্ষ্য প্রতিবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স রক ষ ত তদন ত চকর য়
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ জেলা, পানিবন্দি লাখো মানুষ
বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরপানি। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। ভেঙে গেছে বাঁধ। ভাঙছে নদী। বন্ধ নৌ চলাচল। বিদ্যুৎহীন লাখো মানুষ। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে এমন অবস্থা দেশের অন্তত ১৪ উপকূলীয় জেলার।
এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বিপর্যস্ত উপকূলীয় এলাকার জনজীবন। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে উপকূল অতিক্রম করেছে। অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপে উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সৃষ্ট লঘুচাপটি গতকাল গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। ভোর থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। ফুঁসতে থাকে নদনদী। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। জোয়ারে ডুবেছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা। ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেছেন, নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা নেই। ২৪ মে টেকনাফ দিয়ে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। এটা অনেক সক্রিয়। এ সক্রিয়তা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে দেয়নি। তবে এমন বৃষ্টি থাকতে পারে শনিবার পর্যন্ত।
ছয় জেলায় বন্যার আভাস
ভারী বৃষ্টিতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ছয় জেলা– ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল এক বুলেটিনে জানায়, আগামী দু’দিন ফেনীর মুহুরী নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে পারে।
আর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পরদিন এসব নদীর পানি কমে যাওয়ার আভাসও দিয়েছে পাউবো। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে।
উপকূল পানির নিচে
স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে নিঝুমদ্বীপসহ বেশ কিছু এলাকা। সাগর উত্তাল থাকায় হাতিয়ার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ দু’দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছেন শতাধিক মানুষ। এ ছাড়া বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর মাইজদীর বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে শহরের ফ্ল্যাট রোড, শিল্পকলা একাডেমির পাশের সড়ক ও হাকিম কোয়ার্টার সড়ক। টানা বৃষ্টিতে মানুষের চলাচল কম দেখা গেছে।
জোয়ারের পানিতে ডুবে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে দানু মিয়ার (৪০) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত দানু ওই এলাকার নুর হোসেনের ছেলে।
বরগুনায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে জোয়ার। পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। প্লাবিত হয়েছে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল আমতলী-পুরাকাটা ও বড়ইতলা-বাইনচটকি ফেরি চলাচল। পায়রা নদীতে পানিতে আমতলী ও তালতলীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের ২৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন দুই উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
ভোলাসংলগ্ন মেঘনার দৌলতখান ও তজুমদ্দিন, বিষখালীর ঝালকাঠি ও বরগুনার বেতাগী, পায়রার মীর্জাগঞ্জ, কচার উমেদপুর, বলেশ্বরের পিরোজপুর পয়েন্টে জোয়ারের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে নদনদীসংলগ্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। ডুবে গেছে ইন্দুরকানীর একাংশ, কালাইয়া, সাঊদখালী, বালিপাড়া, চরবলেশ্বর, চণ্ডিপুর, খোলপটুয়া ও কলারণ।
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে জোয়ারে উপকূল রক্ষা বাঁধের ৬৮ নম্বর পোল্ডারের পাশে রিং বাঁধ ভেঙে প্রায় ৪০০ বিঘা আয়তনের চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে। গত তিন দিনে ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ঘের মালিকরা জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এ ছাড়া জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। গতকাল দুপুরে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। তলিয়ে যায় ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। বৃষ্টি ও জোয়ারে তলিয়ে গেছে পটুয়াখালী শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোড, মহিলা কলেজ রোড, মুন্সেফপাড়া, জুবিলী স্কুল রোড ও লঞ্চঘাট। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী, মঠবাড়িয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও বৃষ্টির প্রভাবে বাগেরহাটের নদনদীর পানি বেড়েছে। সুন্দরবনের নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় দুই-তিন ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্লাবিত হয়েছে। দুবলার চর, করমজলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। সুন্দরবনের শেলার চর থেকে নদীতে ভেসে যাওয়ার সময় হরিণ শাবক উদ্ধার করেছে বনরক্ষীরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এটি বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ভোলার তজুমদ্দিন স্লুইসগেট এলাকার নির্মাণাধীন রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে স্রোতের তোড়ে পাঁচটি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলার সঙ্গে সব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। চরফ্যাসনের চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের চর পাতিলার দুই গ্রাম ও বাঁধের বাইরে পাঁচ শতাধিক পুকুর ও খামারের মাছ, গবাদি পশু ভেসে গেছে। ধসে পড়েছে পাকা সড়ক।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় শঙ্খ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি। এতে তলিয়েছে কৃষি জমি ও মৎস্যঘের।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বৃষ্টি ও জোয়ারে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হাঁটু সমান পানিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কাঁচা রাস্তা ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক মৎস্যঘের। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন।
নৌ ও ফেরি চলাচল বন্ধ
নদী উত্তাল থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে সব ধরনের যান চলাচল গতকাল থেকে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিরতিহীন বৃষ্টিতে রাজধানীতেও দুর্ভোগ
সকাল থেকে শুরু বৃষ্টি গভীর রাত পর্যন্ত হয়েছে। সন্ধ্যার পর বৃষ্টির জোর কিছুটা কমলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মূল সড়ক পানিতে ডুবেছে। ভোগান্তিতে পড়েন ঘরে ফেরা মানুষ। অনেক এলাকায় দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। রাজধানীতে যানবাহনের চাপ ছিল কম। বাস, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং রাইড শেয়ারিংয়ের বাইক না থাকায় ঘরে ফেরা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। পথচারীদের অভিযোগ, বৃষ্টির কারণে রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ-তিন গুণ চাওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপকূলে খাদ্য, চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)