ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি বসতির ‘গডমাদার’, গাজায় বসতি নিয়ে কী তাঁর ভাবনা
Published: 28th, May 2025 GMT
ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের নেত্রী ড্যানিয়েলা ওয়েইস সব সময়ই একজন জায়নবাদী। ৭৯ বছর বয়সী ড্যানিয়েলা নিজেই টেলিফোনে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘জায়নবাদ ছিল আমাদের পারিবারিক আলোচনার মূল বিষয়।’
ড্যানিয়েলা বসবাস করেন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের উত্তরে অবস্থিত একটি অবৈধ ইহুদি বসতিতে।
ড্যানিয়েলা বলেন, ‘আমি গর্বিত যে ঈশ্বর আমাকে একজন ইহুদি হিসেবে পাঠিয়েছেন। আমাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা, বাইবেলের প্রতি ভালোবাসা, ঈশ্বর আমাকে এই অপার আশা ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছেন, যা অন্য কিছুর সঙ্গে বদলানো যায় না।’
এই উগ্র জায়নবাদী ড্যানিয়েলা ইহুদি বসতি আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ। তিনি নিজেই বলেছেন, ৫০ বছর ধরে তিনি ‘ইসরায়েলের ভূমি গড়ে তোলার কাজে নিবেদিত’। তিনি দাবি করেন, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে গড়ে ওঠা ১৪১টি বসতি ও ২২৪টি অবৈধ চৌকি গঠনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।
গত মাসে ড্যানিয়েলা বিবিসির লুইস থেরাউক্সের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য সেটেলার’-এ এক আলোচনায় হাজির হন। প্রামাণ্যচিত্রে তাঁকে ‘উগ্রপন্থী বসতি নেত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সরকার তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ, তিনি ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা ও হামলায় উসকানি এবং তাতে অংশ নিয়েছেন’, যা যুক্তরাজ্যের গাজা যুদ্ধ নিয়ে কঠোর অবস্থানের অংশ।আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ। আর ১৯৯০-এর দশক থেকে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই তৈরি হওয়া চৌকিগুলো ইসরায়েলি আইনেও অবৈধ।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ—এই তিন মাসে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ১ হাজার ৮০৪টি হামলা নথিভুক্ত করেছে। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা নিজেরা অথবা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে হামলা চালিয়ে ১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর আক্রান্ত হয়েছে, গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, পানির লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে, ফলের বাগান ধ্বংস করা হয়েছে এবং রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা গাজামুখী ত্রাণবাহী গাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। ওসিএইচএ বলেছে, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ও চলাচলে বাধার কারণে ৮৪৪ জন ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গত মাসে ড্যানিয়েলা বিবিসির লুইস থেরাউক্সের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য সেটেলার’-এ এক আলোচনায় হাজির হন। প্রামাণ্যচিত্রে তাঁকে ‘উগ্রপন্থী বসতি নেত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সরকার তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ, তিনি ‘ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা ও হামলায় উসকানি এবং তাতে অংশ নিয়েছেন’, যা যুক্তরাজ্যের গাজা যুদ্ধ নিয়ে কঠোর অবস্থানের অংশ।
তবে থেরাউক্স যখন তাঁকে বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে বসতি স্থাপনকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তখন তিনি হেসে বলেন, ‘এটা হালকা ধরনের অপরাধ।’
একসময় ড্যানিয়েলাকে ‘নেসেট ক্যাফেটেরিয়ার রানি’ বলা হতো। কারণ, তিনি নিয়মিত ইসরায়েলি পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ রাখতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এবং বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে তিনি আবার আলোচনায় আসেন। এখন তিনি এমন একটি আন্দোলনের মূল নেত্রী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, যাঁদের বর্তমান নেতা ইতামার বেন–গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচ। দুজনই ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।
সমর্থকদের সঙ্গে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–গভির। ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪, জেরুজালেম.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ পনক র র ওপর ইসর য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। পানিতে ডুবে যাওয়ার পর উদ্ধারে ধীরগতি, প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ কিছু বিষয় উঠে এসেছে প্রাথমিক প্রতিবেদনে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারসহ তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্য, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী শারীরিক শিক্ষা বিভাগের নিয়মানুযায়ী হলগুলোর সাঁতারু দলের জন্য একজন প্রশিক্ষক বাধ্যতামূলক। সব হলে একজন করে ক্রীড়া প্রশিক্ষকের পদ থাকলেও সায়মার হলে (মন্নুজান হল) পদটি ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া সায়মা সাঁতার দলের সদস্য ছিল না। তবু তিনি সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ঘটনার দিন আরও দুটি হলের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ছিল। সেই হল দুটির প্রশিক্ষকেরা সুইমিংপুলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই সাঁতার অনুশীলন করছিলেন সায়মাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই সবাই সাঁতার কাটলেও সবার অগোচরে হঠাৎ ডুবে যান সায়মা। বিষয়টি টের পাওয়ার পর তাঁকে পুল থেকে ওপরে তুলতে সময় লেগেছে ২০ মিনিটের বেশি। বাইরে থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সায়মাকে পুল থেকে উদ্ধার করেন প্রশিক্ষকেরা। ওপরে তুলে তাঁর বুকে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুখ দিয়ে পানির সঙ্গে খাবার বের হচ্ছিল।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে সেখান থেকে রওনা করা অ্যাম্বুলেন্সে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না। জরুরি বিভাগে থাকা সিলিন্ডারেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল না। সেটি বদলে গাড়ি প্রস্তুত করে রওনা দিতে আট মিনিট সময় লেগেছে। একটি সিলিন্ডারে কতটুকু অক্সিজেন আছে বা নেই, সে সম্পর্কে কর্তব্যরত নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও চর্চা না থাকায় সেখানেও সময় নষ্ট হয়। তবে সায়মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অনেক বেশি চেষ্টা ছিল।
সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা সায়মার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। এর জন্য তিনি চিকিৎসাও নিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করতেন তিনি।’
প্রতিবেদনে সুপারিশের বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, প্রশিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী সাঁতার কাটার সময় পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও প্রায় ২০ মিনিট পর তাঁর বিষয়টি নজরে আসা প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। দুজন প্রশিক্ষক বসে নিজেরা গল্প করছিলেন। ওনারা যদি এটা না করতেন, হয়তো তাঁদের দৃষ্টিতে মেয়েটি থাকতেও পারত। তাই তদন্ত কমিটি তাদের প্রশিক্ষক পদ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে। সুইমিংপুল তদারকির জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে কর্মরতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও সুপারিশ করা হয়েছে।
শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে একটি প্রশ্ন করাকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে সিনেট ভবনেই স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন ও অনশন কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। শিক্ষার্থীদের দাবি, সিনেট ভবনে ওই শিক্ষককে প্রশ্ন করতে বাধা দিয়ে হেনস্তা করেন ওই কর্মকর্তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকই বিষয়টি ভালোভাবে বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে সায়মা হোসাইনের মৃত্যুতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ও ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের আশ্বাসে সেদিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা গত তিন দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্যারিস রোডে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। গতকাল প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের কথা থাকলেও করা হয়নি। এ জন্য আজ দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা প্রশাসন ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।