Samakal:
2025-05-31@00:49:37 GMT

বৈষম্যের শিকার ৭ উপজেলা

Published: 29th, May 2025 GMT

বৈষম্যের শিকার ৭ উপজেলা

সকাল ৮টা ৪০ মিনিট। বুক সমান পানি ঠেলে স্কুলে যাচ্ছিলেন শিক্ষক মানিক তালুকদার। মনের কষ্টে নিজেই হাতে থাকা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলেছেন হাসি মুখে। এ যেন নিজেকেই নিজে অভিমানে তিরস্কার করা।

এমন কষ্ট চেপে পেশাজীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন তাহিরপুরের রামসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা, দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মানিক তালুকদার। বিদ্যালয়ে যাওয়ার এমন দৃশ্য নিজের ফেসবুক আইডিতে মঙ্গলবার সকালে পোস্ট করেন তিনি। এ নিয়ে সমকালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন উপজেলার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার লিটন। তিনি বলেন, পাশাপাশি উপজেলা, একই ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ; কিন্তু সরকারের দুই ধরনের আইন বিদ্যমান। পাশের উপজেলার শিক্ষক কষ্ট করে বিদ্যালয়ে গেলে আলাদা ভাতা পাবেন; কিন্তু মানিক তালুকদার পাবেন না– এটা দুঃখজনক।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মানিক তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের রামসিংহপুরে বাড়ি আমার। ডেপুটেশনে পদায়ন করা হয়েছে দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে দুর্লভপুরের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। বছরের আট মাস বিদ্যালয়ে যেতে হলে হাতে চালিত নৌকা নিয়ে যেতে হয়। তাও আবার একা বেয়ে যাওয়া (চালিয়ে যাওয়া) সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন খরচ কমপক্ষে ৫০০ টাকা। বাকি চার মাস মোটরসাইকেলে বা হেঁটে যাওয়া যায়।

মঙ্গলবার নৌকার ব্যবস্থা না করতে পারায় বুক ও গলা সমান পানি ঠেলে বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। এই পথে ট্রলারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই শিক্ষকের আক্ষেপ, উপজেলার হাওরাঞ্চলের বিদ্যালয় হিসেবে গেজেট জারি হয়েছে। পাশের ধর্মপাশা উপজেলায়ও গেজেট জারি হয়েছে। তারা হাওর ভাতা পান, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পান না।

কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার শেতরা উত্তরপাড়া আহম্মদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজোয়ানুল হক বলেন, বছরে সাত মাস নৌকায় এক ঘণ্টার পথ পার হয়ে বিদ্যালয়ে যান। আসার সময়ও একই অবস্থা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত। একই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অন্য উপজেলার শিক্ষক-কর্মচারীরা হাওর ভাতা পাচ্ছেন। তারা পাচ্ছেন না।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার লিটন বলেন, সোমবারও গণমাধ্যমে দেখেছি হাওর-দ্বীপ এবং চর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ভাতার জন্য ৭ কোটি ৫১ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এখানেও গেজেটভুক্ত ২৩ উপজেলার মধ্যে সাত উপজেলার কোনো উল্লেখ নেই। এটা বৈষম্য। আগের সরকারের সময় এমপিদের সুপারিশে স্বজনপ্রীতি হয়েছে, এখন সেটি দূর হবে– এমন প্রত্যাশা সবার।

জানা যায়, দেশের ২৩টি উপজেলাকে হাওর-দ্বীপ ও চর উপজেলা ঘোষণা করে সরকারি চাকরিজীবীরা বেতনের সঙ্গে বেতন গ্রেড অনুযায়ী ১ হাজার ৬৫০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাওর ভাতা পাচ্ছেন। ওই ২৩টি উপজেলার মধ্যে সাতটি উপজেলায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী স্থানীয় বাসিন্দারা হাওর ভাতা পাচ্ছেন না। অন্য ১৬ উপজেলার তারা ভাতা পাচ্ছেন।

২০১৯ সালের ৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ দেশের ১৬টি উপজেলাকে হাওর, দ্বীপ ও চর উপজেলা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, শাল্লা, দোয়ারাবাজার, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, চট্টগামের সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া, সিরাজগঞ্জের চৌহালি, কুড়িগ্রামের রৌমারি, চর রাজিবপুর, পটুয়াখালীর রাঙাবালি ও ভোলার মনপুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি আরেক প্রজ্ঞাপনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর, কিশোরগঞ্জের নিকলী, নেত্রকোনার মদন ও হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলাকে হাওর উপজেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক দ্বিতীয় ধাপে অন্তর্ভুক্ত সাতটি উপজেলার প্রজ্ঞাপনে ‘স্থানীয় বাসিন্দাগণ নিজ উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন এই ভাতা প্রাপ্য হইবেন না’– এমন বাক্য লেখা রয়েছে। অথচ শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সবাই স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে নিজ উপজেলায় সরকারি চাকরির সুযোগ পান।

নোয়ানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখর রায় বলেন, নিশ্চয়ই কারও ভুলের শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের ৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ দেশের ১৬টি উপজেলাকে হাওর, দ্বীপ ও চর উপজেলা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে স্থানীয়রা হাওর ভাতা পাবেন না– এমন বাক্য উল্লেখ করা ছিল না।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস বলেন, গেজেটভুক্ত হয়েছে, সেসব উপজেলার সব শিক্ষক-কর্মচারী যাতে ভাতা পান সে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ উপজ ল র শ স ন মগঞ জ হ ওর ভ ত উপজ ল য় উপজ ল ক র উপজ ল র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন যাত্রা শুরু

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেনে যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ শনিবার। ঢাকা থেকে ভোর ৬টায় রাজশাহীর উদ্দেশে আন্তঃনগর ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এ যাত্রা শুরু হয়।

ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের নেওয়া কর্মপরিকল্পনায় জানানো হয়েছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভ্রমণ সুবিধার্থে বাড়তি ৫ জোড়া অর্থাৎ ১০টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এ সময় নিয়মিত আন্তঃনগর ট্রেনগুলো আগের মতোই চলবে। স্থগিত থাকবে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর ডে অফ। ঢাকায় কোরবানির পশু সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তিনটি ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন ২ দিনে চালানো হবে।

ঢাকা, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র‌্যাবের সহযোগিতায় টিকিটবিহীন যাত্রী স্টেশনে প্রবেশের প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে ঈদের আগে-পরে ১০ দিন করে মোট ২০ দিন ট্রেনে সেলুনকার সংযোজন না করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এ ছাড়া আজকের যাত্রার ট্রেনের আসনের টিকিটগুলো ১০ দিন আগে অনলাইন ব্যবস্থায় বিক্রি করা হয়েছে। ট্রেনের ৩১ মে’র আসন বিক্রি হয়েছে ২১ মে; ১ জুনের আসন বিক্রি হয়েছে ২২ মে; ২ জুনের আসন বিক্রি হয়েছে ২৩ মে; ৩ জুনের আসন বিক্রি হয়েছে ২৪ মে; ৪ জুনের আসন বিক্রি হয়েছে ২৫ মে; ৫ জুনের আসন বিক্রি হয়েছে ২৬ মে এবং ৭ জুনের আসন বিক্রি হয়েছে ২৭ মে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ