গণঅভ্যুত্থানের পর পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পর্ষদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এর সাত মাস পর নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে বিজিএমইএর ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য শেষ মূহূর্তে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ নির্বাচনের প্রার্থীরা। ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তা, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান এবং পোশাক খাতের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার মতো নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। 

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৫-২৭ মেয়াদের এই নির্বাচনে ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে ৭৬ জন প্রার্থী লড়ছেন। আজ শনিবার ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। মোট ভোটার ১ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৫৬১ এবং চট্টগ্রামে ৩০৩ জন। 

প্রার্থীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসকের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। তাই নির্বাচন যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, তা নিশ্চিত করার দাবি তুলছেন অনেকেই। তারা বলছেন, এবার ভোটের মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ফোরাম, সম্মিলিত পরিষদ ও ঐক্য পরিষদ নামে তিনটি প্যানেলের অধীনে অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীরা। এর মধ্যে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ ঢাকায় ২৬টি, চট্টগ্রামে ৯টিসহ ৩৫ পদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করলেও ঐক্য পরিষদ মাত্র ছয়জন প্রার্থী দিয়েছে। 

নির্বাচনী ইশতেহারে ১৪ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফোরাম। ফোরামের প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান সমকালকে বলেন, ‘নির্বাচিত হলে পোশাক খাতের অগ্রগতির জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। উৎপাদন সচল রাখতে গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান, বিজিএমইএর সব কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং ছোট কারখানা মালিকদের টিকে থাকার জন্য সহায়তা করার চেষ্টা করব।’ এ প্যানেলের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, পোশাকশিল্প শুধু ব্যবসা নয়, এটি উদ্যোক্তাদের শ্রম, আত্মত্যাগ ও দীর্ঘদিনের স্বপ্নের প্রতিফলন। তাই বিপদে-আপদে বিজিএমইএর সদস্যদের পাশে থাকবেন। 


১২ দফা ইশতেহার দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার মো.

আবুল কালাম সমকালকে বলেন, প্রতিপক্ষ প্যানেল নানা কারণে বন্ধ থাকা ৬৯০টি কারখানার মালিককে ভুয়া ভোটার বলে যে অপপ্রচার চালিয়েছে তার নিন্দা জানান তারা। নির্বাচিত হলে তাদের কারখানা চালু ও এসএমই কারখানাগুলোকে সহায়তা করবেন। পরিষদের প্রার্থী মনজুরুল ফয়সাল হক সমকালকে বলেন, বিদ্যুৎ সংকট, এলসি জটিলতা, উচ্চ সুদহার, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পড়ে থাকে দিনের পর দিন–এ জাতীয় নানা সমস্যায় আছে পোশাক খাত। নির্বাচিত হলে এসব বিষয়ে কাজ করব। 

ফোরামের প্রার্থী

ফোরামের থেকে ঢাকায় প্রার্থী হয়েছেন– মাহমুদ হাসান খান, মোহাম্মদ আবদুস সালাম, কাজী মিজানুর রহমান, মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, ইনামুল হক খান, মো. হাসিব উদ্দিন, মোহাম্মদ সোহেল, শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ, ভিদিয়া অমৃত খান, এম এ রহিম, শাহ রাঈদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, জোয়াদ্দার মোহাম্মদ হোসনে কামার আলম, এ বি এম শামছুদ্দিন, নাফিস-উদ-দৌলা, সুমাইয়া ইসলাম, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মজুমদার আরিফুর রহমান, মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া, ফাহিমা আক্তার, আসেফ কামাল পাশা, রশীদ আহমেদ হোসাইনী, রুমানা রশীদ, সামিহা আজিম, রেজওয়ান সেলিম ও ফয়সাল সামাদ।
চট্টগ্রামের প্রার্থীরা হলেন– সেলিম রহমান, মো. শরীফ উল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী, এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাকিফ আহমেদ সালাম, এনামুল আজিজ চৌধুরী, এমদাদুল হক চৌধুরী, মির্জা মো. আকবর আলী চৌধুরী ও রিয়াজ ওয়াইজ।

সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী

পরিষদের ঢাকা থেকে প্রার্থী হয়েছেন– মো. আবুল কালাম, আবদুল্লাহ হিল রাকিব, মির্জা ফায়েজ হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম, তামান্না ফারুক থিমা, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, মহিউদ্দিন রুবেল, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, মো. শাহদাৎ হোসেন, মো. রেজাউল আলম, ফারুক হাসান, এ কে এম আজিমুল হাই, লিথি মুনতাহা মহিউদ্দিন, মো. আশিকুর রহমান, এস এম মনিরুজ্জামান, মো. মশিউল আজম, মোহাম্মদ রাশেদুর রহমান, আবরার হোসেন সায়েম, মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, সয়েদ সাদিক আহমেদ, মোস্তাজিরুল শোভন ইসলাম, মাঞ্জুরুল ফয়সাল হক, সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী সাগর, মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন, ফিরোজ আলম ও আসিফ আশরাফ।

চট্টগ্রামের প্রার্থীরা হলেন– এস এম আবু তৈয়ব, রাকিবুল আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ মুসা, অঞ্জন কুমার দাশ, নাফিদ নবি, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, মোস্তফা সারোয়ার রিয়াদ, মো. আবসার হোসেন ও গাজী মো. শহীদ উল্লাহ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন ব জ এমইএ ব জ এমইএর ম হ ম মদ র রহম ন র জন য ইসল ম আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিএমইএর নির্বাচনে ৩১ পদে জয়ী ফোরাম

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচনে ৩৫ পরিচালক পদের মধ্যে ৩১টি পদে জয়ী হয়েছে ফোরাম। আর সম্মিলিত পরিষদ জয়ী হয়েছে ৪টি পদে। অন্যদিকে ঐক্য পরিষদ একটি পদেও জয়ী হতে পারেনি।

সংগঠনটির ৩৫টি পরিচালক পদে নির্বাচনকেন্দ্রিক তিন জোট—ফোরাম, সম্মিলিত পরিষদ ও ঐক্য পরিষদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ ঢাকা ও চট্টগ্রামে সব পদে প্রার্থী দিলেও ঐক্য পরিষদের প্রার্থী ছিল ছয়জন। ফলে সব মিলিয়ে প্রার্থী ছিলেন ৭৬ জন।

নির্বাচনে ফোরামের প্যানেল দলনেতা রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদ হাসান খান। আর সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা হলেন চৈতি গ্রুপের এমডি মো. আবুল কালাম। ঐক্য পরিষদের দলনেতা রোমো ফ্যাশন টুডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন।

শনিবার রাত ১১টার দিকে ভোট গণনা শেষ হয়। নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ ইকবাল। বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন সৈয়দ আফজাল হোসেন ও আশরাফ আহমেদ।

বিজিএমইএর ঢাকার অঞ্চলের ২৬ পদের ২৫টিতে জয়ী হয়েছেন ফোরামের প্রার্থীরা। তাঁরা হলেন মাহমুদ হাসান খান, শাহ রাঈদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, এম এ রহিম, ফয়সাল সামাদ,  মোহাম্মদ আবদুস সালাম, কাজী মিজানুর রহমান, মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, ইনামুল হক খান, মো. হাসিব উদ্দিন, মোহাম্মদ সোহেল, শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ, ভিদিয়া অমৃত খান, জোয়াদ্দার মোহাম্মদ হোসনে কামার আলম, এ বি এম শামছুদ্দিন, নাফিস-উদ-দৌলা, সুমাইয়া ইসলাম, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মজুমদার আরিফুর রহমান, ফাহিমা আক্তার, আসেফ কামাল পাশা, রশীদ আহমেদ হোসাইনী, রুমানা রশীদ, সামিহা আজিম এবং রেজওয়ান সেলিম। ঢাকায় একটি পদে সম্মিলিত পরিষদের ফারুক হাসান জয়ী হয়েছেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ পদের ৬টিতে জয়ী হয়েছেন ফোরামের প্রার্থীরা। তাঁরা হলেন, সেলিম রহমান, এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাকিফ আহমেদ সালাম, মো. শরীফ উল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী এবং এনামুল আজিজ চৌধুরী। বাকি তিনটি পদে জয়ী হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদের সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, এস এম তৈয়ব ও রাকিবুল আলম চৌধুরী।

নির্বাচনে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৪৯টি ভোট পেয়েছেন ফোরামের দলনেতা মাহমুদ হাসান খান। আর চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন ফোরামের সেলিম রহমান।

এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৮৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৫৬১ এবং চট্টগ্রামে ৩০৩ জন ভোটার। তার মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকার ঢাকার র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল এবং চট্টগ্রামের র‍্যাডিসন ব্লু হোটেল বে ভিউ কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। নির্ধারিত পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোটকেন্দ্র প্রবেশ করে ভোট দিয়েছেন ভোটারেরা। তাই বাইরে প্রার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পেরেছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে কারা কখন ভোট দিচ্ছেন সেটি ডিজিটাল মাধ্যমে সরাসরি দেখানো হয়।

সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা আবুল কালাম দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হচ্ছে। ভোটের ফলাফল যা–ই হোক, আমরা মেনে নেব।’

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১১ জুন সভাপতি ও সহসভাপতি পদের নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। নতুন পর্ষদ ১৬ জুন দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে।

গত বছরের মার্চে বিজিএমইএর নির্বাচন হয়েছিল। তাতে সম্মিলিত পরিষদ সব পদে জয়ী হলেও নির্বাচন ছিল ‌প্রশ্নবিদ্ধ। তখন সভাপতি হন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান। এরপর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁকে আর দেখা যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা হয়। গত ২০ অক্টোবর বিভিন্ন অভিযোগে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিজিএমইএর নির্বাচনে পরিচালক পদে জয়ী হলেন যারা
  • বিজিএমইএর নির্বাচনে ৩১ পদে জয়ী ফোরাম
  • বিজিএমইএ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৭.৫০ শতাংশ
  • বিজিএমইএর নির্বাচন চলছে, ঢাকায় প্রথম আড়াই ঘণ্টায় ভোট দিয়েছেন ২২৫ জন
  • বিজিএমইএর নির্বাচন, ঢাকায় প্রথম আড়াই ঘণ্টায় ভোট দিয়েছেন ২২৫ জন
  • বিজিএমইএ’র ৩৫ পরিচালক পদে ভোটগ্রহণ চলছে
  • বিজিএমইএ নির্বাচন শনিবার, লড়ছেন ৭৬ প্রার্থী
  • বিজিএমইএতে ৩৫ পরিচালক পদে প্রার্থী ৭৬ জন
  • পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়নে ফাইন্যান্স ও গবেষণায় রূপান্তর দরকার: মির্জা ফাইয়াজ