কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটে রয়েছে সংরক্ষিত ও রক্ষিত ১৩ হাজার ৬০১ একর বনভূমি। বিস্তীর্ণ এই বন রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন ৩০ জন বনকর্মী। অথচ বনকর্মী থাকার কথা ৫১ জন। পাশাপাশি ৬ জন ডেপুটি রেঞ্জার পদের সবগুলোই খালি। প্রায় অর্ধেক জনবল দিয়ে মূল্যবান বনজ সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, বনভূমি দখল করে কাঁচা-পাকা স্থাপনা তৈরিতে বাধা দিতে গিয়ে বনকর্মীরা শ্লীলতাহানি ও নারী নির্যাতনসহ নানা ‘মিথ্যা মামলা’র আসামি হচ্ছেন। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অবৈধ দখলদাররা এসবে উৎসাহিত হচ্ছেন বলে বনকর্মীরা জানান। 
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটের অধীনে সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে ১১ হাজার ৯২.

৩৪ একর। এ ছাড়া রক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ২ হাজার ৫০৯.১১ একর। সব মিলিয়ে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বন ভূমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৬০১ একর। এই পরিমাণ বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, মানিকপুর, কাকারা, নলবিলা ৫টি বনবিট রয়েছে। এসব বনবিটের বিপরীতে বর্তমানে জনবল রয়েছেন ৩০ জন। 
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘সংরক্ষিত বনভূমি পুরোটাই বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন আর রক্ষিত বনভূমি জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন হলেও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় বনবিভাগকে। রক্ষিত বনভূমির বেশির ভাগই ১৯৬৫ সালের পর থেকে বিভিন্নভাবে দখল বেদখল হয়ে গেছে। অবশিষ্ট রক্ষিত বনভূমিও দখলবাজদের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে দখল হওয়া বেশির ভাগ রক্ষিত বনভূমিতে বাড়িঘর ছিল কাঁচা। বর্তমানে এসব কাঁচা স্থাপনা পাকা করা হচ্ছে। এ নিয়ে দখলদারদের সঙ্গে বনবিভাগের সংঘাত লেগেই রয়েছে। এতে বনকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন দখলকারদের হাতে। অন্যদিকে, বনকর্মীরা শক্তভাবে দখল মোকাবিলা করতে গিয়ে বিচারিক আদালতে ধর্ষণসহ মারপিট, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে নালিশি মামলায় আসামি হচ্ছেন। 
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘রেঞ্জের বনজসম্পদ, বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকাটা উদ্বেগজনক। স্বল্পসংখক বনকর্মী দিয়ে বিশাল বন এলাকা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অতীতে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনে ভিটে-মাটি হারা অসংখ্য পরিবার রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমিতে কাঁচা বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। বর্তমানে অবৈধ দখলদাররা নিজেদের কাঁচা বাড়ি পাকা ও সেমিপাকা করে বনভূমি দখল স্থায়ী করতে চাইলে বনবিভাগ বাধা দিচ্ছে। এতে বনভূমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী লোকজন বনকর্মীদের ওপর আক্রমণ করছেন।’ বনকর্মীরা জানান, বনবিভাগের লোকজন অবৈধ দখল ও দখলদারদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে শ্লীলতাহানি, মারধরসহ নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলার আসামি হচ্ছেন।
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন দাবি করেন, ‘বন রক্ষা করতে গিয়ে বনকর্মীরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত অথবা মামলার শিকার হচ্ছেন। সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে অবৈধ বসবাসকারীদের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়ক, কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবি নিয়মিত বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। এতে বনভূমিতে পাকা বাড়ি করতে বিত্তবানরাও উৎসাহিত হচ্ছে। অনেক অবৈধ দখলদার রীতিমতো দখলীয় বনভূমি নন রেজিস্টার্ড দলিলে বেচা-বিক্রিও করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।’ সংরক্ষিত বনে অনধিকার প্রবেশ করলে বনবিভাগ যে কারও বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করতে পারে। বনবিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে বনবিভাগ অনেক সময় সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় যথাযথ আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ম ন য় গ বনব ভ গ র বনকর ম র কর মকর ত রক ষ ত ও বনভ ম ত দখলদ র ও রক ষ বনব ট

এছাড়াও পড়ুন:

ত্রাণ বিতরণের নামে মানুষ আটকানোর ফাঁদ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে নরক বানিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। একদিকে বোমা হামলা, অন্যদিকে খাদ্যের কৃত্রিম সংকট গাজাবাসীকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। খাদ্য বিতরণের নামে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র মিলে সৃষ্টি করেছে মৃত্যুফাঁদ। প্রতি ২০ মিনিটে গাজায় একটি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে পাঠানো ত্রাণের ট্রাকগুলো মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করেছে। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে ‘গণবিপর্যয়ের প্রতি উপহাস’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষের মুখে উপত্যকার বাসিন্দারা। এর মধ্যেই তারা ভারী বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। ২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।   

খাদ্য অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি বলেছেন, ইসরায়েল ‘মানুষ আটকানোর টোপ’ হিসেবে খাদ্য কর্মসূচি চালু করেছে। 

বিবিসি জানায়, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত নতুন ত্রাণ বিতরণ প্রকল্প বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। খাদ্যবিতরণ কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। শুক্রবার দেখা যায়, একটি সরু গলিতে খাবারের জন্য আটকে রাখা হয়েছে গাজার বাসিন্দাদের। পাশেই উঁচু স্থানে কড়া নজরদারিতে রয়েছে ইসরায়েলি সেনা। খাদ্য বিতরণের মধ্যেই গুলি করা হচ্ছে। কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলির শব্দে মানুষ কাঁপতে কাঁপকে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পড়ছে। আতঙ্কে পদদলিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।     
 
ত্রাণ বিতরণ প্রকল্প কেন্দ্রগুলো পাহারা দিচ্ছে সশস্ত্র আমেরিকান নিরাপত্তা ঠিকাদাররা। তাদের লক্ষ্য, গাজায় প্রধান সরবরাহকারী জাতিসংঘের সংস্থা যেন তাদের কার্যক্রম না চালাতে পারে। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস যাতে খাবার চুরি না করতে পারে, সেজন্য বিকল্প খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।   

জিএইচএফ চারটি কেন্দ্রের মাধ্যমে বিতর্কিত খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। তারা প্রথম সপ্তাহে ১০ লাখ গাজাবাসীকে খাবার বিতরণের পরিকল্পনা নেয়। শুক্রবার ছিল চতুর্থ দিনের কার্যক্রম। 

বৃহস্পতিবার নুসেইরাতের কাছে জিএইচএফের উত্তরাঞ্চলীয় সাইটে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়,  জিএইচএফের দায়িত্বে থাকা দখলদার সেনারা ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়িতেও হামলা করছে। বিকট বিস্ফোরণে বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। 

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য গঠিত জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি মনে করেন, কেবল রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিই গাজার দুর্ভিক্ষ থামাতে পারে। চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘ প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ ট্রাক ত্রাণ পাঠাত। ইসরায়েল এখন স্বল্প খাদ্য সরবরাহ করে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার কৌশল নিয়েছে। 

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য যারা মানবিক সহযোগী হিসেবে কাজ করছে, তাদের কার্যক্রম কঠিন করে তোলা হচ্ছে। আমরা অভাবীদের সাহায্য ও তাদের মর্যাদা রক্ষা করতে চাই। আমরা অসম্ভব কিছু চাচ্ছি না। 

এদিকে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা দিন দিন বাড়ছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার সবচেয়ে বেশি মূল্য দিচ্ছে শিশুরা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি শিশু হতাহত হয়েছে। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৯ শিশু নিহত ও ৩ হাজার ৭৩৮ শিশু আহত হয়েছে। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত যুদ্ধের সময় গাজায় ৫৪ হাজার ৩৮১ জন নিহত ও ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪ জন আহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ ফিলিস্তিনির লাশ ও আহত ২৮৪ জনকে গাজার হাসপাতালে আনা হয়।  

 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ত্রাণ বিতরণের নামে মানুষ আটকানোর ফাঁদ