সবে মার্ফা গ্রাম থেকে ফিরেছি। মুক্তিনাথ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য গাড়ি পেতে একটু ধকল পোহাতে হয়েছে। মুক্তিনাথে সবাই যান পুণ্যলাভের আশায়। অনেকে আবার বলেন, মুক্তিনাথের যে জলাধার, তাতে ডুব দিলে ধুয়ে যায় আগের সব পাপ। আমি এসেছিলাম আত্মাকে মুক্ত করতে।
আচ্ছা! এবারে আসা যাক হোটেলটার গল্পে। মন্দিরের দিকে হাঁটছিলাম। প্রথমেই চোখ পড়ল বব মার্লের ছবিতে। একটু থমকে দাঁড়ালাম। নাম দেখলাম ‘হোটেল বব মার্লে’। কৌতূহল হলো। সেদিন রাতে মুক্তিনাথে থাকার পরিকল্পনা ছিল না। ভেবেছিলাম, একটু এগিয়ে গিয়ে জমসম নামের ছোট্ট মফস্‌সল শহরটায় থাকব। পরদিন সকালের বাসে পোখারা। কিন্তু হোটেলটা দেখেই মনে হলো, নাহ্‌, এখানেই থাকতে চাই। সঙ্গে দোতলায় যে ক্যাফেটা, সেটার নাম আবার ‘ফ্রিডম ক্যাফে’। মানে আমাকে আটকে রাখার সব আয়োজনই ছিল। উঁকি মারলাম একবার। কাউকে পেলাম না। কাঠের তিনতলা হোটেল। দেখেই পছন্দ হয়ে গেল। ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পেলাম না। কেউ নেই।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করার উপায় ছিল না। ভাগের ট্যাক্সিতে এসেছি। ট্যাক্সিচালক বলেছেন ফিরতি পথে যাত্রী নেই। আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। তাই বের হয়ে পা চালালাম দ্রুত। মিনিট চল্লিশেক লাগবে মুক্তিনাথের মন্দিরটায় পৌঁছাতে। আশপাশে দুই ধারে বরফ জমে আছে তখনো। বরফগলা পানি গড়িয়ে নিচে পড়ছে। এখান থেকে ধলাগিরি খুব একটা দূরে নয়। চারপাশে সাদা পাহাড় মাথা উঁচু করে আছে। ডিসেম্বরের শেষ তখন। আরেকটু বরফ পাব আশা করেছিলাম। তবে হিমেল হাওয়া বয়ে চলছে। মন্দির আর মঠের আশপাশে ঘণ্টা দুয়েক কাটিয়ে ফিরছিলাম। চালক বলেছিলেন, তিন ঘণ্টার বেশি দেরি না করতে। মন্দিরের বিশাল সিঁড়ি বেয়ে নেমে মিনিট দুই এগিয়েছি, দেখা হলো এক রুশ ভদ্রলোকের সঙ্গে। আগের দিন বাসে আমার সহযাত্রী ছিলেন। ইংরেজি ভালো বলতে পারেন না, তাই চুপচাপ থাকেন বেশির ভাগ সময়। বাস পথে একটা ঝরনার ধারে থেমেছিল। ভদ্রলোক একা একা ছবি তোলার চেষ্টা করছিলেন। বললাম, ‘আমি তুলে দিচ্ছি।’ তখনই যা একটু আলাপ। এরপর মারফাতে নেমে গেলাম। সবাই চলে গেল জমসম। এবার আমাকে দেখে তাঁর চোখের মণি উজ্জ্বল হলো। হাসলেন একটু। বললেন, উঠেছেন সেই বব মার্লেতে। সেখানে নাকি থাকার খরচ নেই! শুধু খাবার খরচটাই দিতে হয়। আমার আগ্রহ আরেকটু বাড়ল এবার। ঘটনাটা কী?

খাওয়ার সঙ্গে থাকা ফ্রিনাম দেখেই হোটেলে একরাত থাকার ইচ্ছে হলো.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বব ম র ল মন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করল পাকিস্তান-সৌদি আরব

পাকিস্তানের ওপর কেউ হামলা চালালে সৌদি আরব তাদেরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। আবার সৌদি আরবের ওপর কেউ আগ্রাসন চালালে পাকিস্তানও সৌদি আরবকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। ঠিক এমনই একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব ও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান।

জিও নিউজের খবর অনুসারে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সৌদি আরব সফরের সময় এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে শাহবাজের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ চুক্তির কথা জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

এক সপ্তাহে সৌদি আরবে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

২০ বছর কোমায় থাকার পর মারা গেলেন সৌদির ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’

চুক্তি স্বাক্ষরের পর উভয় দেশ একটি যৌথ বিবৃতিতে জানায় যে, ভ্রাতৃত্ব, ইসলামিক সংহতি ও অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থের ভিত্তিতে এবং প্রায় আট দশকের দীর্ঘ অংশীদারত্বের ওপর দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ক্রাউন প্রিন্সের আমন্ত্রণেই শরিফ সৌদি আরব সফরে গেছেন বলেও তাদের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সৌদি আরবের সঙ্গে হওয়া এই প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে এখন ‘এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন’ বিবেচনা করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন অগ্রগতি' বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, এটি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিতে উন্নীত করেছে। তারা বলছেন যে, এই পদক্ষেপ কেবল পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্ককে দৃঢ় করছে না, বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের জন্যও এর গুরুত্ব রয়েছে। এটি পাকিস্তানকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার সবচেয়ে সক্ষম মুসলিম শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন যে, সাম্প্রতিক আঞ্চলিক অস্থিরতা, ইসরায়েলের হামলা, দোহা সম্মেলন এবং আরব বিশ্বে সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই চুক্তির তাৎপর্য অনেক বেশি। এটি প্রমাণ করে যে, বর্ধিত হুমকির সময়ে সৌদি আরব পাকিস্তানকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করছে। 

পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে আলিঙ্গন করতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যাকে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ